১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৫:২৩

চালের দাম ফের বাড়ছে

আমনের নতুন চাল উঠলেও বাজারে দাম কমছে না। উল্টো বাড়ছে। রাজধানীর বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চাল কেজিতে বেড়েছে ১ থেকে ২ টাকা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের তুলনায় মোটা চালের দাম এখনও ১৫ শতাংশ বেশি। ফলে দেশের প্রধান এই খাদ্যপণের দাম নিয়ে দিশাহারা ক্রেতারা।

নতুন চাল বাজারে আসলে দাম কমবে, এমনটাই আশা ছিল সবার। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম কমছে না। এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। এ মুহূর্তে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ দেখছেন না খুচরা বিক্রেতারা।
টিসিবির তথ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা গেছে। টিসিবির দেয়া চালের মূল্য তালিকা অনুযায়ী, এক সপ্তাহে সরু চালের দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। বর্তমানে সরু চালের কেজি ৫৮-৬৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬-৬৫ টাকা। সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ২ টাকা। বর্তমানে এই চালের কেজি ৫৮-৬২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৬-৬০ টাকা। আর উন্নত মানের নাজির ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ২ টাকা। বর্তমানে এই চালের কেজি ৬২-৬৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। পাইজাম চলের দাম বেড়েছে ২-৩ টাকা। আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ টাকা। বর্তমানে এই মানের চালের কেজি ৪২-৪৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। আর বছরের ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে ২১.৫৭ শতাংশ, সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ২৭.৬৬ শতাংশ। আর উন্নত মানের নাজির ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ২৩.০৮ শতাংশ। পাইজাম/লতা চলের দাম বেড়েছে ২১.৯৫ শতাংশ। আর মোটা চাল স্বর্ণ/চায়না, ইরির দাম বেড়েছে ১৫.৭৯ শতাংশ।

কাওরানবাজারের চালের পাইকারি বিক্রেতা জগলুল খান বলেন, সপ্তাহ খানেক আগেও চালের দাম কম ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবারো দাম বেড়ে গছে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২-৩ টাকা বেড়েছে। ৬৪-৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সরু চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৬৬-৬৭ টাকা। নাজিরশাইল চালের দাম বেড়ে ৭০ টাকায় ছুঁয়েছে। মোটা চাল (পাইজাম/লতা) বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। গত বছর এই সময় আমনের নতুন চাল পাইকারিতে প্রতিকেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকার মধ্যে ছিল। এবার সেই চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গত এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন মোটা চালের দাম ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২০৫০-২০৭০ টাকায় পৌঁছেছে। মোটা চালের সঙ্গে অন্যান্য চালও বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। আরেক চাল বিক্রেতা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম যখন বাড়ছিল, তখন আমরা মনে করছিলাম, আমন ধান উঠলে অন্য সব বারের মতো এবারও চালের দাম কমবে। কিন্তু সেটা হয়নি। জানা গেছে, অধিক শুল্ক হারের কারণে আমদানি বন্ধ থাকা, বোরো মৌসুমে হাওরে বন্যায় ফসলহানি, মজুদে ঘাটতিসহ নানা কারণে গত কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম। এর মধ্যে মোটা চাল প্রতিকেজি ৫৫-৫৮ টাকা, আর সরু চাল ৬৫-৭০ টাকায় ওঠে। এ অবস্থায় গত ১৯শে সেপ্টেম্বর চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক ও আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের পর খুচরায় সরু চাল ৬০ টাকায় এবং মোটা চাল ৪০ টাকায় নামে। নতুন আমন চাল বাজারে এলে দাম আরও কমবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে গত ৩০শে নভেম্বর সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে আমনের তিন লাখ টন চাল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়ার পর মিল গেটেই এখন চালের দাম প্রতিকেজি ৪১ টাকা হয়েছে।

চালকল মালিকরা বলছেন, সরকার চাল কেনার ঘোষণা দেয়ার আগে নতুন ধানের দাম ছিল মণপ্রতি ৭০০-৭৫০ টাকা। গত মওসুমেও এই দামে বিক্রি হয়েছিল ধান। এখন ধানের মণ ৯০০-১০০০ টাকায় উঠেছে।
চালকল মালিক সমিতির নেতা লায়েক আলী বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দাম কমছে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম বাজারে নতুন চাল এলে দাম কমবে। কিন্তু এখন দেখি উল্টো দাম বেড়েছে। এভাবে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলে পরিবার নিয়ে তিন বেলা ভাত খাওয়া কষ্ট হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, শুধু চালের দাম নয়, এখন সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে এক কেজি পিয়াজের দাম ১২০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম তো অধিকাংশ সময় দেড় শ’ টাকার ওপরেই থাকছে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=95676