১১ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৫:২০

সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নির্মাণ

ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছেন ঠিকাদার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নির্মাণে পার্শ্ববর্তী ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার দেউদেনিয়া বিল এলাকায় l প্রথম আলোব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার আশ্বব আলীর (৭০) সম্বল বলতে তিন একর কৃষিজমি। কিন্তু সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক নির্মাণের জন্য তাঁর জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। জমির বড় অংশই এখন খাল-ডোবায় পরিণত হয়েছে। সেখানে আর ফসলের আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নির্মাণাধীন সড়কটির পাশ থেকে আশ্বব আলীর জমির মতো স্থানীয় ব্যক্তিদের কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, ঠিকাদার কোনো রকম যোগাযোগ না করেই জোর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন। মাটির দাম বাবদ কোনো টাকা বা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। কৃষিজমি হারিয়ে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে আশ্বব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। বাঁচার কোনো উপায় নেই।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থেকে বিজয়নগর উপজেলা পর্যন্ত সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ৮ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট হবে। এতে ব্যয় হবে ৩৯ কোটি টাকা। ডলি কনস্ট্রাকশন নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। তবে স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার এতে কাজ করছেন। রাস্তায় মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ প্রায় ছয় কোটি টাকা। রাস্তা উঁচু করার জন্য ঠিকাদারেরই মাটির সরবরাহ করার কথা। গত ২৫ নভেম্বর থেকে সড়কে মাটি ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

৫ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার ভাদুঘর ও চররাজাবাড়ি মৌজার দেউদেনিয়া বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে ভাদুঘর এলাকার কৃষকদের ফসলি জমি থেকে সাত থেকে আটটি মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু) দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। দেউদেনিয়া ও চররাজাবাড়ি বিল পর্যন্ত প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার অংশে ২০-৩০ ফুট গভীর পর্যন্ত কেটে মাটি তোলা হচ্ছে। দেখতে অনেকটা খনন করা খালের মতো।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে গত ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁরা একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরদিন ১৩ জন কৃষক বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোস্তফা কামালের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল, ডলি কনস্ট্রাকশনের মালিক নাছির উদ্দিন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালকসহ (আরটিআইপি-২) ছয়জনকে বিবাদী করা হয়। আদালত ওই ছয়জনকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন।

কৃষক আতিকুল ইসলাম ভাদুঘর মৌজার নকশা দেখিয়ে বলেন, ‘ভাদুঘর মৌজার সিএস ও বিএস নকশায় কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা আছে মেরুড়া মৌজায়। ভাদুঘর মৌজার সিএস ৩৭১২ দাগে আমার ৫১ শতক জমির সবটুকুই কেটে ফেলা হয়েছে।’
ঠিকাদার ওয়াহেদ শামীম বলেন, ‘মস্তু ভাই (মোস্তফা কামাল) ও আমি মাটি কাটার কাজ করছি। প্রতি ফুট মাটি কাটার জন্য আড়াই টাকা ধরা আছে। এখানে মাটি কিনে এনে ফেলার মতো জায়গা নেই। অন্য জায়গা থেকে মাটি আনা সম্ভব না। এ ধরনের রাস্তার ক্ষেত্রে পাশের জমি থেকে মাটি কাটা আনাই নিয়ম। অন্যান্য জায়গায় এভাবেই রাস্তা করেছি। কৃষকেরা যদি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন, নির্ধারিত মূল্যে চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হবে।’
ঠিকাদার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি যতটুকু পারি পাথর ও বালু সরবরাহ করছি। মাটি কাটার কাজ আমি করছি না।’ তবে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ দুজনই অস্বীকার করেন।
৫ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে এলজিইডির ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলে হাবিবের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বাসভবনে চলে যান।
জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাস্তার পাশ থেকেই মাটি কাটার কথা বলা আছে চুক্তিতে। চুক্তিপত্র ও দরপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তিনি বলেন, রাস্তার জন্য মাটির ব্যবস্থা করবেন ঠিকাদার।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1384322