৮ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৪৪

চট্টগ্রামে তীব্র গ্যাস সংকট

বরাদ্দ কম, শহরে পৌঁছার আগেই গ্যাস চলে যাচ্ছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায়, ভোগান্তি আবাসিক গ্রাহকদের

চট্টগ্রামে গ্যাস নিয়ে আবাসিক গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে। শিল্প-কারখানায় উত্পাদন মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। গত নভেম্বর মাস থেকে গ্যাস সংকট তীব্র হয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে গত দুই মাস ধরে জাতীয় গ্রিড থেকে বরাদ্দ প্রায় ৫০/৬০ মিলিয়ন ঘনফুট কমে গেছে। আবার চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছার আগেই বিপুল পরিমাণ গ্যাস ফেনী থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠা শিল্প-কারখানা টেনে নিচ্ছে। ফলে সরবরাহ লাইনে চাপ কমে যাওয়ায় আবাসিক খাতে ভোগান্তি বেড়েছে।

এখন শীত মৌসুম হওয়ায় আবাসিক খাতে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে। রান্নার বাইরেও নানা কাজে গ্যাসের চুলা ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে আবাসিক খাতে। নগরীর রাহাত্তরপুল এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার জানান, সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিদিনই গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কোনো দিন একেবারেই থাকে না। আবার যেদিন থাকে তাতে রান্নার চুলা জ্বলে মিটমিট করে। তাই প্রয়োজন মেটাতে একটি কেরোসিনের চুলা সংগ্রহ করে রেখেছি। নগরীর ফরিদারপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গ্যাস নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এখন গ্যাস না থাকলে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নগরীর চান্দগাঁও, বাকলিয়া, ফিরিঙ্গী বাজার, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং ও আলকরণ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আবাসিকে গ্যাস নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

জানা যায়, চট্টগ্রামে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রামে গ্যাস বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, গ্যাস নিয়ে দুরবস্থার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে; কিন্তু জাতীয়ভাবে গ্যাসের বরাদ্দ নির্ধারণে চট্টগ্রাম বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে বলে অভিযোগ এই কর্মকর্তার। তিনি জানান, গত দুই মাস যাবত্ জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাসের বরাদ্দ হঠাত্ করে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশুগঞ্জ থেকে তিনটি লাইন দিয়ে ঢাকায় গ্যাস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড থেকে চট্টগ্রামে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের একটি মাত্র সঞ্চালন লাইন রয়েছে। তা দিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। গত দুই মাস আগেও চট্টগ্রামে দৈনিক ২৫০/৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এখন দৈনিক ২০০ থেকে ২১০ মিলিয়ন ঘনফুটে বেশি বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

আবার জাতীয় গ্রিড থেকে যে পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তার সবটুকু চট্টগ্রাম নগরীতে পৌঁছছে না। ফেনী থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে অসংখ্য ছোট-বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় গ্যাসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সঞ্চালন লাইন থেকে এসব শিল্প-কারখানায় প্রচুর গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে টেনে নেওয়া হচ্ছে। ফলে সঞ্চালন লাইন দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছতে পৌঁছতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট। অথচ এসব গ্যাসের পুরোটারই চাহিদা রয়েছে চট্টগ্রামের দুইটি সার কারখানা ও বিদ্যুত্ কেন্দ্রের চারটি ইউনিটের। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিদ্যুত্ কেন্দ্রের ৪টি ইউনিট ও ১টি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত চার বছর যাবত্ চট্টগ্রামে সকল ধরনের নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। জানতে চাইলে কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মনজুরুল হক ইত্তেফাককে বলেন, ‘বরাদ্দের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। বিদ্যুত্ কেন্দ্র, সার কারখানা বন্ধ রেখেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন গ্রাহকরা অভিযোগ নিয়ে আসছেন। নতুন বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে।’

 

http://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/2017/12/08/138774.html