৮ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৪৩

৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি পরিবার উদ্বিগ্ন

নিখোঁজের ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের পরিবারের সদস্যরা। বুধবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এই উদ্বেগ জানান। এদিকে গতকাল পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। বেলজিয়ামে অবস্থানরত মারুফ জামানের বড় বোনও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এ অবস্থায় ঘটনার তিনদিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের আশানুরূপ কিছু জানাতে পারেনি। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, তারা নিখোঁজ মারূফ জামানকে খুঁজে বের করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার রাত ১০টার দিকে ই-মেইলে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ জানিয়ে মারুফ জামানের মেয়ে সামিহা জামান ও ছোট ভাই রিফাত জামান বলেন, মারুফ জামান রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও তার কোন খোঁজ পায়নি পুলিশ ও গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে মুষড়ে পড়েছেন তার দুই মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬১ বছর বয়সী মারুফ জামান, গত ৪ তারিখে মেয়েকে শাহ্জালাল বিমানবন্দরে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এ বিষয়ে ৫ই ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় তার গড়িটি উদ্ধার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশ। থানার এসআই জাহেদ গাড়িটি সন্ধ্যায় ৩০০ ফিট রাস্তার কাছে রাস্তায় পরিত্যক্ত ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানায়, গাড়িটি সকাল থেকেই সেখানে পড়ে ছিল। গাড়িটির দরজায় তালা না থাকলেও স্টিয়ারিংয়ে তালা দেয়া ছিলো। গাড়ির ভেতরে মারুফ জামানের সঙ্গে বসা থেকে নিয়ে যাওয়া কিছু খাবার এবং গাড়ির কাগজপত্র পাওয়া গেলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে খিলক্ষেত থানা থেকে ৬ই ডিসেম্বর সকালে ধানমন্ডি থানায় গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। রিফাত জামান ও সামিহা জামান, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ জামানের বাসার সিসিটিভি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়, যাতে তিনজন রহস্যময় ব্যক্তিকে বাসায় ঢুকতে ও কিছুক্ষণ পরই ল্যাপটপ ও কম্পিউটারসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। বুধবার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ধানমন্ডি জোনাল টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুর রহমান মারুফ জামানের বাসায় আসেন ও পরিবারের সদস্য, পরিচারিকা ও ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত ধানমন্ডি জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহেল কাফি ও গোয়েন্দা পুলিশের কমিশনার মো. ফজলুর রহমানের সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মারুফ জামানের কোনো খোঁজ তারা পাননি। তবে তারা অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই কঠিন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীদের সহযোগিতায় মারুফ জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ সরকারের একজন একনিষ্ঠ কর্মকর্তা এম মারুফ জামানকে দ্রুত উদ্ধার করতে পুরিবারের পক্ষ দাবি ও সহযোগিতা কামনা করা হয়।

এদিকে গতকাল বিকালে নিখোঁজ মারুফ জামানের ছোট মেয়ে সামিহা জামান বলেন, তারা থানায় নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কোন আপডেট পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বেলজিয়ামে অবস্থানরত তার বড় বোন ও মারুফ জামানের বড় মেয়ে শবনম জামান এই ঘটনা জানার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি চলে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমরা তাকে নিষেধ করেছি। তিনি আরো বলেন, তার চাচা এবং ফুফুরা দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন। মারুফ জামানের ছোটভাই রিফাত জামান বলেন, ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নতুন কোনো খবর নেই। পরিবারের সবার অবস্থা খারাপ। কেউ-ই মানসিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই। প্রতিটি মুহূর্ত তাদের অপেক্ষায় কাটছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এইভাবে তিনদিন কেটে গেলো। সাধারণ ডায়রির (জিডি) তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত তার অবস্থান জানতে পারিনি। ব্যহৃত ফোন নম্বরটিও চালু করেনি। সাবেক এই রাষ্ট্রদূতের সন্ধানে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য সংস্থা তৎপর রয়েছে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=95263