৮ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩৯

পেঁয়াজের দর ১২৫ ছুঁয়েছে

মাসখানেক ধরেই পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় অনেকে পেঁয়াজ কেনাও কমিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে বাজারে অস্থিরতা।
গতকাল বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দফায় দফায়। পাইকারি বাজারে এক দিনের মধ্যেই তিনবার বেড়েছে দেশি পেঁয়াজের দাম। এর প্রভাবে খুচরা বাজারে ৯০-৯৫ টাকা দরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি দরে। পরে সন্ধ্যায় পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা কমেছে।
জানা গেছে, পেঁয়াজের ঊর্ধ্বমুখী দামে এবার শুধু ভোক্তা নয়, খুচরা বিক্রেতারাও শঙ্কিত। রাজধানীর শুক্রাবাদের মুদি দোকানি আমিনুল ইসলাম গতকাল সকালে দোকান খোলার আগে কারওয়ান বাজার থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনেন। তিনি জানান, দেশি পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বাড়তি। ভোরে ১০০ টাকা কেজি দরে তিনি পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে এনেছেন। এখন ১১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

আমিনুলের কথা শুনে পাশের দোকানি শাওন মিয়া বলেন, ‘আমি ৭টার সময় পেঁয়াজ কিনছি ১০৫ টাকা করে। ওরা বলছে, দাম নাকি আরো বাড়বে। ’ তিনি ১১৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন বলে জানান।
দুপুর ১২টার দিকে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫৫০ টাকা পাল্লা, অর্থাৎ ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। একই বাজারে দুপুর ২টার দিকে দাম বেড়ে হয় ১১৫ টাকা কেজি। তবে সন্ধ্যায় টেলিফোনে ওই বাজারের ২৩ নং আড়তের পেঁয়াজ বিক্রেতা জানান, পাঁচ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছিল ১১০ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা জানায়, দিনভর পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা ছিল। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া এক ধরনের হুজুগের মধ্যেও বারবার দাম পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা গেছে।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ খুবই কমে গেছে। কিন্তু প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ কারণেই দাম এত ওঠানামা করেছে। ’ এই দাম বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তবে এবার খুচরা ব্যবসায়ীরাই অভিযোগ তুলেছে, বাজারে নতুন পেঁয়াজ পাতাসহ পাওয়া যাচ্ছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে। তখন তো এই পেঁয়াজের দাম কমাতে বাধ্য হবে তারা। এ জন্যই এখন বেশি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিচ্ছে।
হাতিরপুল বাজার থেকে দুপুরে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এত বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ কেনা ঠিক হয়নি। ওরা তো (পাইকারি ব্যবসায়ী) ইচ্ছামতো দাম নিল। আমাদের বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ যে লোকটা এক কেজি পেঁয়াজ কেনে, সে এখন এক পোয়া করে কিনবে। আবার পাতাসহ নতুন পেঁয়াজ দিয়েও কাজ চালাবে। ’ আরো কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করে জানায়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা শেষ ব্যবসাটা করে নিল। নতুন পেঁয়াজ উঠলেই তো দাম কমাতে হবে। তাই একটা ধুয়া তুলে তারা বেশি বেশি লাভ করে নিল।

তবে দেশি পেঁয়াজের বাজার অস্থির হলেও আমদানি করা পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো একই দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৭৪-৭৮ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৮৫-৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
পেঁয়াজের দামে অস্থিরতার মধ্যেও সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে নতুন পাতাসহ পেঁয়াজের কারণে। পেঁয়াজ ও সবজি হিসেবে একই সঙ্গে ব্যবহার করা যাচ্ছে এটি। তবে নতুন এই পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ক্রেতা মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যা শুরু হয়েছে পেঁয়াজের বাজারে, তা বলার মতো নয়। আমরা আসলে অসহায় হয়ে পড়েছি। কী আর করা। নতুন পাতা পেঁয়াজ কিনলাম। কারণ পুরনো পেঁয়াজে যে তাপ, তাতে হাত দিলে পুড়ে যাবে। আজকে শুনলাম পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। ’
এই অস্থিরতার মধ্যেও শাকসবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা জানায়, শাকসবজির দাম ভালোই কমেছে। বেশির ভাগ সবজির দাম ৪০ টাকার আশপাশে থাকায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে। বিক্রেতারা জানায়, প্রতিনিয়তই শীতের সবজির সরবরাহ বাড়তে থাকায় ধারাবাহিকভাবেই কমছে সবজির দাম। গতকাল শুক্রাবাদ, কলাবাগান, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার গুদারাঘাটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলু বাজারভেদে ৪০-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পুরনো আলু ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। শিম ৩৫-৪৫ টাকা, পেঁপে ২০-২৫ টাকা, বেগুন ৪০-৪৫ টাকা, বরবটি ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০-৩৫ টাকা কেজি, আর ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারভেদে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির পাশাপাশি বাজারগুলোতে বিভিন্ন শাকও মিলছে একটু কম দামে। পালংশাক, মুলাশাক, লালশাকসহ অন্যান্য শাক গত সপ্তাহেও ২০-২৫ টাকা কেজি ছিল। গতকাল এগুলো বেশির ভাগ বাজারেই ১০-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/12/08/574898