৮ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৩০

গ্যাস বিদ্যুতের সংকট না কাটলে রফতানি লক্ষ্য অর্জন নিয়ে শংকা

জ্বালানি সংকটের কারণেই রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না। খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই এখন এই আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে আগামী ২০২১ সালকে টার্গেট করে সরকার পাঁচ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটিও এই জ্বালানি সংকটের কারণে অর্জন না হওয়ার আশংকা করা হয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, গ্যাস ও বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা আমাদের বাণিজ্য আয়ের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি’র একটি সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরে রফতানি আয়ের বড় একটি ধাক্কা লাগে বড় বড় কয়েকটি বাজার হারানোর কারণে।

সূত্রমতে, এককভাবে বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি কমেছিল ৬ শতাংশ। এছাড়া তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য যুক্তরাজ্যেও কমেছিল ৬ শতাংশের বেশি। ইপিবি’র দেয়া তথ্য থেকেই জানা যায়, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে কানাডাসহ এ রকম শীর্ষ ২০ গন্তব্যের ১০ বাজারেই রফতানি আয় কমেছে। এর ফলে ধাক্কা খেয়েছে সার্বিক রফতানি আয়।
রফতানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ এবং রফতানি কমে যাওয়ার জন্য কিছু কারণও অনুসন্ধান করেছে ইপিবি। সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন ও নেতৃত্ব, যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের দর কমে যাওয়া, ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় বিদেশীদের বাংলাদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা, টাকার বিপরীতে ডলার দুর্বল হওয়াসহ কয়েকটি কারণ উঠে আসে ইপিবি’র পর্যবেক্ষণে।

গত অর্থ বছরে দেশ ভিত্তিক রফতানি আয় কমে যাওয়ার তালিকায় ছিল, জাপানে রফতানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। বেলজিয়ামে প্রায় ১০ শতাংশ, ভারতে আড়াই শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় পৌনে ৭ শতাংশ, তুরস্কে সাড়ে চার শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌনে ১১ শতাংশ।
সূত্র আরো জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭২ লাখ মার্কিন ডলার। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭শ’ কোটি ডলার। কিন্তু বছর শেষে হিসাব করে দেখা গেছে, মাত্র ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে রফতানি হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫০ ডলার। রফতানির ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতের রফতানি আয় বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। এটি সার্বিক রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। নিটওয়্যার ও ওভেন-কোনটিই রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। গত অর্থবছরের চাইতে নিটওয়্যার রফতানি কিছুটা বাড়লেও ওভেন পোশাক রফতানি কমেছে।

অবশ্য বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমরা ৫ হাজার কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। কিন্তু গ্যাস ও বন্দরসহ অবকাঠামোগত সমস্যা এ লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকার এসব সমস্যা সমাধানে সচেতন রয়েছে। আশা করছি, এসব সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আমরা রফতানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলারের বেশিতে নিয়ে যেতে পারব

 

http://www.dailysangram.com/post/310424