৬ ডিসেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:০৮

আইসিডিডিআরবি’র গবেষণা

সঠিক সময়ে বিসিজি টিকা পায় না নবজাতকরা

কমছে না মৃত্যুহার * প্রান্তিক পর্যায়ে জন্মের প্রথম সপ্তাহে টিকা পায় ২ শতাংশ

বাংলাদেশে নবজাতকদের সঠিক সময়ে বিসিজি (ব্যাসিলাস ক্যালমেট-গুয়েরিন) টিকা দেয়া হয় না। এ কারেণ নানা রোগে ভুগছে তারা। কমানো যাচ্ছে না নবজাতক মৃত্যুহার। প্রান্তিক পর্যায়ে জন্মের প্রথম সপ্তাহে টিকা পাচ্ছে মাত্র ২ শতাংশ নবজাতক। জন্মের প্রথম সপ্তাহে যদি শতভাগ নবজাতকের বিসিজি টিকা দেয়া নিশ্চিত করা যেত, তাহলে মৃত্যুহার ৪৮ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল জর্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে এসছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিয়ারিয়াল ডিজিজ রিসার্চ বাংলাদেশ-আইসিডিডিআরবি’র হেলথ সিস্টেম অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিস বিভাগ থেকে গবেষণাটি করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, যক্ষ্মা প্রতিরোধে নবজাতকদের বিসিজি টিকা দেয়া হলেও আরও অনেক রোগের ক্ষেত্রে এ টিকা বেশ কার্যকর। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশন ইত্যাদি। এমনকি অপরিপক্ব শিশুর জীবনে বাঁচাতেও বিসিজি টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আইসিডিডিআরবি’র গবেষণায় দেখা গেছে, প্রান্তিক পর্যায়ে জন্মের প্রথম সপ্তাহে বিসিজি টিকা পায় এমন নবজাতকের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশ। বেশিরভাগ নবজাতককে এ টিকা পেতে ৫ থেকে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারের চকরিয়ায় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওই উপজেলায় শতকরা ২৩ ভাগ শিশুর জন্ম বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালে হলেও তারা জন্মের প্রথম সপ্তাহে বিসিজি টিকা পাচ্ছে না। এমনকি সামগ্রিকভাবে দেশে টিকাদানের হার ৯৯ শতাংশ হলেও চকরিয়ায় এ হার ৬৫ শতাংশ।

এমনকি রাজধানীর আজিমপুরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে সামগ্রিকভাবে জন্মের প্রথম সপ্তাহে মাত্র ২০ শতাংশ শিশু বিসিজি টিকা গ্রহণ করে থাকে।
গবেষকরা জানান, মায়েদের অজ্ঞতা, চিকৎসকদের অসচেতনতা এবং টিকাদান কর্মীদের অবহেলার কারণে জন্মের প্রথম সপ্তাহে নবজাতকরা বিসিজি টিকা পাচ্ছে না। সাধারণত যেসব শিশু বাড়িতে জন্মগ্রহণ করে, পরিবারের সদস্যরা বা মায়েরা তাদের এক মাসের মধ্যে টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে যান না। যেসব শিশু প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে জন্মগ্রহণ করে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জন্মের পর বা হাসপাতাল ছেড়ে আসার সময়ও তাদের টিকাদানে কোনো ভূমিকা রাখে না। এক্ষেত্রে ওইসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকের চিকিৎসকরা সচেতন হলে এসব শিশুর জন্মের প্রথম সপ্তাহে বিসিজি টিকাদান সম্ভব। অন্যদিকে প্রত্যেক এলাকায় সরকারিভাবে টিকাদানের ব্যবস্থা থাকলেও টিকাদান কর্মীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট দিন টিকাদান করে থাকেন। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিসিজি টিকার একটি ভায়লে ১০টি টিকা থাকে, যা ১০ শিশুকে দেয়া হয়। কিন্তু দিনে হয়তো ১০ শিশু টিকাদান কেন্দ্র আসে না। অন্যদিকে টিকার একটি ভায়লের মুখ খুললে তার নির্দিষ্ট সময় পর নষ্ট হয়ে যায়। তাই টিকাদান কর্মীরা নির্দিষ্টসংখ্যক শিশু না পেলে টিকাদান থেকে বিরত থাকেন।

এ প্রসঙ্গে গবেষক দলের প্রধান আইসিডিডিআরবি’র হেলথ সিসটেম অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিস বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী এসএম মানজুর আহমেদ হানিফি যুগান্তরকে বলেন, ‘নবজাতককে টিকাদান না করার অন্যতম একটি কারণ মায়েদের অসচেতনতা। ৭০ ভাগ মা-ই নবজাতকের জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে বিসিজি টিকা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন না। এ বিষয়ে চিকিৎসকদেরও সচেতন করার প্রয়োজন। যাতে করে তারা জন্মের প্রথম সপ্তাহে শিশুদের বিসিজি টিকা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া পরিবার ও সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু শিশুর জন্মের প্রথম সপ্তাহে বিসিজি টিকা নিশ্চিত করতে পারলে ইনফেকশনজনিত শিশুরোগ এবং শিশুমৃত্যু অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।’

 

https://www.jugantor.com/first-page/2017/12/06/177206