সোনালী ব্যাংকের ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট থেকে ৬৬৭ কোটি টাকা কেটে বিভিন্ন ব্যাংককে পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হলমার্ক কেলেঙ্কারির এ দায় পরিশোধ না করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ওই অর্থ এখন ফেরত দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিল সোনালী ব্যাংক। গতকাল সোনালী ব্যাংকের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সাথে এ নিয়ে গতকাল বৈঠক করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুলের নেতৃত্বে ব্যাংকটির পর্ষদের অন্য সদস্য ও এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ অংশ নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, জালিয়াতির প্রমাণ দিতে পারলেই কেবল সোনালী ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেয়া হবে।

জানা গেছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে ফান্ডেড, নন-ফান্ডেড মিলে হলমার্কের কাছে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার পাওনা রয়েছে তিন হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে নন-ফান্ডেড তথা সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃতির বিপরীতে ৪১টি ব্যাংক দুই হাজার ৩৪২টি বিলের বিপরীতে এক হাজার ৩১৪ কোটি টাকা দিয়েছে। এসব দায় তৈরি হয়েছিল মূলত পোশাক তৈরির কাজে স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল (সুতা বা কাপড়) সরবরাহের মাধ্যমে। স্বীকৃত বিলের নিয়ম অনুযায়ী, ১২০ দিনের মধ্যে গ্রাহক অর্থ পরিশোধ না করলে স্বীকৃতি দাতা ব্যাংক তা পরিশোধ করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো সোনালী ব্যাংকের স্বীকৃতি বিলের দায় পরিশোধের বিষয়ে দফায় দফায় চেষ্টা করেও পায়নি। একপর্যায়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে। একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স বৈঠকে এ সংক্রান্ত এক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতির আলোকে ব্যাংকার্স সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা পরিশোধ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করা হবে। সোনালী ব্যাংক স্বীকৃতি বিলের জালিয়াতির প্রমাণ দিতে পারলে সোনালী ব্যাংককে অন্য ব্যাংক অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর অর্থ ফেরত দিতে গড়িমসি করায় সোনালী ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করা হয়েছিল। সোনালী ব্যাংক ওই অর্থই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ফেরত চেয়েছিল। গতকালের বৈঠকে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদকে একই কথা বলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। বলা হয়েছে, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সোনালী ব্যাংকের দেয়া স্বীকৃতি বিলের প্রমাণ দিতে পারলেই কেবল অর্থ ফেরত দেয়া হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে করার কিছুই থাকবে না।