৪ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০৫

রাজনৈতিক বিবেচনায় আরো তিন ব্যাংক আসছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে উঠছে আজ

রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন আরো তিন ব্যাংক আসছে। প্রাথমিক অনুমোদনের জন্য আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠেয় পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে উঠছে। পর্ষদ অনুমোদন দিলে ব্যাংক তিনটির লাইসেন্স পেতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদন পেতে যাওয়া প্রস্তাবিত নতুন তিন ব্যাংকের মধ্যে পিপলস ইসলামী ব্যাংক, বাংলা ব্যাংক ও পুলিশ বাহিনীর জন্য পুলিশ ব্যাংক। পিপলস ইসলামী ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এম এ কাশেম। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আর বাংলা ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো: জসিম উদ্দিন।
ব্যাংক তিনটির অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তা আমলে নিয়ে অনুমোদনের জন্য পরিচালনা পর্ষদে পাঠিয়েছে। আজ বৈঠকে অনুমোদন দিলে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৫৭ থেকে বেড়ে ৬০টিতে উন্নীত হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত তিন ব্যাংকের অনুমোদন দিলে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা চাওয়া হবে। একই সাথে ব্যাংক পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কিছু প্রেসক্রাইব শর্ত দেয়া হবে। উদ্যোক্তা শর্ত পরিপালন করে এবং তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তা যাচাই-বাছাই করে পরিচালনা পর্ষদের কাছে ফের ‘টেবিল মেমো’ জমা দেবে। পরিচালনা পর্ষদ আবার অনুমোদন দিলে ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দু’বারের মেয়াদের প্রথম বারে ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছিল। ওই সময় সব শ্রেণীর মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু এর পরও যে ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে তাদের ব্যবসায়িক অবস্থা সুখকর নয়। এরই মধ্যে একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এমডিকে অপসারণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অন্য একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিভিন্ন অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় এমডি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। আরেকটি ব্যাংকের নানা দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পাওয়ায় এমডিকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই ব্যাংকের এমডির বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এরই মধ্যে ওই এমডির ভাগ্য এখন ঝুলে আছে গভর্নরের টেবিলে। বাকি ব্যাংকগুলোর অবস্থাও চলছে ধুঁকে ধুঁকে।

এ পরিস্থিতিতে আরো তিন ব্যাংকের অনুমোদন দিলে ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নতুন তিন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ব্যাংক রয়েছে। তার পরও প্রচুর অঞ্চল ব্যাংক সেবার বাইরে রয়েছে। এ কারণেই নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক ব্যাংক একীভূত (মার্জ) করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট কাটাতে সরকার কাজ করছে। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তা অনুমোদনের বাইরে অন্য কিছুই করার থাকবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/273641