৪ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০৩

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার

বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়াজ তুলতে হবে ; কংগ্রেসম্যান বেয়ার

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রে আওয়াজ তুলবার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান ডোনাল্ড এস বেয়ার। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সম্পৃক্ত করতে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসার কথাও জানান তিনি। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ কাউন্সিল ফর ডেমোক্র্যাসি আয়োজিত সেমিনার সিরিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী রীতা রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারের উদ্বোধনী সেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ভার্জিনিয়া হাউজ অব ডেলিগেটের মেম্বার মার্ক ডি সিকলেস। সেমিনারে তিনটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রীতা রহমান। সেমিনারে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ঝুঁকি ও বিশ্বাসহীনতার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্টিন পি স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাজ হাসমি, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পারস্পরিক আস্থাহীনতার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সাইদ ইফতেখার আহমেদ। এ ছাড়ও প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. ফয়সাল আহমেদ, মর্গান স্টেইট ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক ড. আশরাফ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্রে নেভাল অ্যাকাডেমির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. কামরুল ইসলাম, জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারী, মুসলিম কমিউনিটি টিভির সিইও সাংবাদিক কাজী শামসুল হক ও সাউথ এশিয়ান সলিডারিটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইমরান আনসারী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আলী ইমাম প্রমুখ।
উদ্বোধনী সেশনে কংগ্রেসম্যান ডোনাল্ড এস বেয়ার জুনিয়র বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি বাংলাদেশে জাতিগতভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যে প্রক্রিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও শুরু হয়েছে। এর পরিণতি কোনো জাতিরাষ্ট্রের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার মূল জায়গায় ফিরিয়ে আনতে আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উত্তরণে আওয়াজ তুলবার যে পক্রিয়া ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।
শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য মুক্ত গণমাধ্যমের কথা তুলে ধরতে গিয়ে বেয়র বলেন, একটি অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।

বাংলাদেশের বিরাজমান সঙ্কটগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করেন এই কংগ্রেসম্যান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে আর এই প্রভাব স্পষ্টই অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশে। এতে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পৃক্ত করতে তিনি নিজে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান ডোনাল্ড এস বেয়ার।
মার্ক ডি সিকলেস বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়াজুড়েই আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।
রীতা রহমান তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের নির্বাচনীব্যবস্থা দিনের পর দিন যেভাবে ক্ষমতাসীন দল কুক্ষিগত করে রেখেছে, তা নজিরবিহীন। মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি বিশেষ করে গুম খুন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার দুর্বল দিকগুলো প্রবন্ধে তুলে ধরেন। গত নভেম্বরে বাংলাদেশে গুম হয়েছে অত্যন্ত ৫০০ জন মানুষ।
ড. তাজ হাসমি বলেন, বাংলাদেশের জাতি রাষ্ট্রকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলকে পাকিস্তানি হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ বিরোধী দল তথা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে। সরকারি দল চাইছে বিরোধী দলকে চিরতরে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে।

তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহনশীলতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন। নির্বাচনে পরাজিত হলে দলটি ফলাফল মেনে নিতে চায় না। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও মনে করেন। নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সরকার ‘স্বৈরতন্ত্রের’ পথে হাঁটছে বলে মনে করেন তিনি।
ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল তাদের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি। এর অন্তর্নিহিত কারণগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থাহীনতা এ জাতি রাষ্ট্রটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় বাংলাদেশী না বাঙালি এ বিতর্ক জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রব্যবস্থার জাতীয় সংহতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/273674