৪ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:০২

দেশে সম্পদের বৈষম্য বেড়েছে শতভাগ

সিপিডির ব্রিফিং

দেশে সম্পদের বৈষম্য শতভাগ বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, উন্নয়নে বৈষম্য বেড়েছে, কাউকে পেছনে রেখে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে না।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ‘কাউকে পেছনে রাখা যাবে না’ প্রতিপাদ্যে আগামী ৬ ডিসেম্বর বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ‘নাগরিক সম্মেলন ২০১৭ : বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়ন নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
এ সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক প্রাক-সম্মেলন মিডিয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। আর এই ব্রিফিংয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়নে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং কাজ করার সাথে কাজের জবাবদিহিতা থাকতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকতে হবে, সমাজের কণ্ঠস্বর উচ্চারিত না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। সে জন্য বাস্তবায়নের পাশাপাশি জবাবদিহিতার বিষয়ে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকার বাস্তবায়নের স্বাক্ষর করে, অর্থ বরাদ্দ দেয়। এর পরও যদি জনগণের কণ্ঠস্বর উচ্চারিত না হয় তবে সে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ন্যায়বিচার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, ২০১০-১৬ পর্যন্ত আয়ের বৈষম্য যেমন বেড়েছে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে সম্পদের বৈষম্য।

নাগরিক সম্মেলন নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কারা পিছিয়ে আছে সম্মেলনে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। বৈশ্বিক কর্মসূচির আলোকে আমাদের চিন্তাভাবনা বিতর্ক থাকবে। প্রেরণা চিত্র প্রদর্শন করা হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়াদের আয়ের উৎস, জীবনচক্র কোথায় আছে, তাদের অবস্থান শহর বা গ্রাম নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া লিঙ্গ, পেশা, ধর্ম বৈষম্য তাকে পিছিয়ে রাখছে কি না সে বিষয়েও আলোচনা হবে।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের একার পক্ষে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ জন্য নাগরিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকার, নাগরিক সবাইকে সচেতন ও সক্রিয় হতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, রিকশাওয়ালা বা বাল্যবিয়ের শিকার স্কুলে না যাওয়া মেয়েরা কি জানে এসডিজি কী? অথচ সবাইকে সাথে নিয়ে এগোতে হবে। এ জন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে, জানাতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকে কার্যকর ও দৃশ্যমান করাসহ এসডিজি অভীষ্টগুলোর তাৎপর্য সম্পর্কে দেশব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কোনোভাবেই যেন এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সুফল থেকে বঞ্চিত না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।

দিনব্যাপী এ সম্মেলনে প্লাটফর্মের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বেসরকারি সংস্থাগুলো ও তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
সম্মেলনে এসডিজির বিভিন্ন অভীষ্ট ও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সমান্তরাল অধিবেশন, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের নিয়ে তৈরি করা প্রেরণা চিত্রের প্রথম প্রদর্শনী হবে। সেই সাথে এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। পরিশেষে সম্মেলনের পক্ষ কিছু পরামর্শ ও দাবিসংবলিত ‘নাগরিক ঘোষণা ২০১৭’ গ্রহণ করা হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/273652