৪ ডিসেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৯:৪২

আরো একটি নিকৃষ্টতম ‘আয়োজন’

চলতে ফিরতে দেখা

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক বলতে পারলে খুশি হতাম। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পুনর্বাসনের জন্য সেখানকার সরকার চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) কোনোটিই স্বাক্ষরে রাজি হয়নি। আসলে তারা কোনো কিছুতেই রাজি ছিল না। কিন্তু রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে গণহত্যা সে দেশের সরকার পরিচালনা করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। জাতিসঙ্ঘও এই হত্যাযজ্ঞকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে। বিশ্বসমাজে নিন্দার ঝড় উঠেছে। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে সে দেশের সরকার এমন এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যাতে রোহিঙ্গারা মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। মিয়ানমারের সু চি সরকার এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। যার সংখ্যা ইতোমধ্যেই সাত লাখ ছাড়িয়ে গেছে। নদী, সাগর, বনজঙ্গল পাড়ি দিয়ে, ইজ্জত ও স্বজন হারিয়ে তারা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নিয়েছে। টেকনাফ কিংবা উখিয়ায় দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, আগুনের লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের গ্রামকে গ্রাম। বসতবাড়ি, ভিটেমাটি, জমিনের ফসল। এখনো দেখা যায় আগুন জ্বলছে মংডুর আশপাশের গ্রামে। তাদের কষ্টের কোনো শেষ নেই।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার মনস্থির করতে পারছিল না, তারা এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে কী করবে। প্রথম দিকে সরকার ভীত চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলÑ কী করা যায়, কী করা যায়। কিন্তু রোহিঙ্গারা আসছিল স্রোতের মতো। হয় তাদের বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ঠেকাতে হবে অথবা তাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে হবে। সরকার মানবিকই হয়েছে। বিরোধী দলও দাবি জানিয়েছিল মানবিক হওয়ার। শেষ পর্যন্ত সরকার মিয়ানমারের সাথে কোনোরূপ দেনদরবারে না গিয়ে, বিশ্বসভায় কোনো শোরগোল না তুলে, মিয়ানমারের গণহত্যাযজ্ঞ বিষয়ে প্রশ্ন না তুলে সীমান্ত একেবারে খুলে দিয়েছে। সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের সন্ধানে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে এসেছে। এখনো আসছে। আর সরকারের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, তারা ভক্ত-অনুরক্তের মতো মিয়ানমারকে কেবল তোয়াজই করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে ভয় দেখানোর জন্য মিয়ানমার কমপক্ষে ১২ বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। সরকার বলেছিল, মিয়ানমার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পাশাপাশি সু চি সরকার ১২ বার আকাশসীমা লঙ্ঘন করল আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম কেন? কেন আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী বিমানগুলোকে আকাশেই মিসমার করে দিলাম না? তার বদলে আমাদের আদালতে দণ্ডিত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে চাল কিনতে গেলেন মিয়ানমারে। ভাবখানা এই, যেন কিছুই হয়নি। কিছুই হচ্ছে না।
মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য দীর্ঘকাল গৃহবন্দী ছিলেন অং সান সু চি। সে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৯১ সালে সু চিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয় নোবেল কমিটি। সেই সু চি যখন রক্তপিপাসু হায়েনার মতো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা শুরু করেন, তখন সারা বিশ্ব তাকে ধিক্কার জানায় আর এই নরহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানায়। সু চি সেদিকে কর্ণপাত করেননি। তিনি ব্রিটেনের অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করেন। তারাও তাকে নানা সম্মাননা দিয়েছিল। তার এই গণহত্যার প্রতিবাদে অক্সফোর্ডের সব স্থাপনা থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়েছে। বিশ্বের নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাকে এই গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু সু চি সেসবে কর্ণপাত করেননি। নোবেল পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তা না হলে এত দিনে সেই পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া হতো।
এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত নাম মিয়ানমারের অং সান সু চি। বসনিয়া-হারজেগোভিনায় গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক আদালতে দণ্ডিত মিলোসেভিচের মতো সু চিরও একই আদালতে দণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা যেন তার পায়ে পড়ে গেলাম। বাবা সু চি, আমাদের একটা কাগজ দাও; আমরা গর্ব করি। মিয়ানমার আসলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোনো ধরনের চুক্তিই করতে চায়নি, বরং তারা তাদের দেশের ১৩৯টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্য থেকে রোহিঙ্গাদের নাম মুছে ফেলারই চেষ্টা করেছে। অথচ এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করে আসছে। তারা এতটাই বেপরোয়া, ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস যাতে রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণও না করেন, সেজন্য আগে থেকেই মিয়ানমারের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতাকে সতর্ক করে দিয়েছিল। মিয়ানমারের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতা পোপ ফ্রান্সিসকে সে কথা জানিয়েছিলেন। ফলে সেখানে ভাষণ দানকালে পোপ আর রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চরণ করেননি। সেটাই সম্ভবত সঙ্গত হয়েছিল। কারণ পোপ হয়তো আশঙ্কা করেছিলেন যে, মিয়ানমারের শাসকদের অবাধ্য হলে সেখানকার ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা রোহিঙ্গাদের ভাগ্যই বরণ করতে পারে।
বাংলাদেশ একটি চুক্তির জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। তার আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে ধোঁকা দেয়া। সরকার যাতে বলতে পারে, মিয়ানমারের ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য তারা একটি চুক্তি করেছে এবং শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু কী আছে সে চুক্তিতে? চুক্তি অবশ্য বলা যাচ্ছে না। ‘আয়োজন’ বলাই ভালো। সরকার তেমন একটি ‘আয়োজনে’ স্বাক্ষর করেছে এবং সেটা মিয়ানমার যেভাবে চেয়েছে ঠিক সেভাবেই। সে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১০০ বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কাজ শেষ হবে না। গত ২৩ মার্চ স্বাক্ষরিত ওই ‘আয়োজনে’র কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সহাস্যবদনে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের দাবির আলোকেই চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছে।

সেখানে সম্পাদিত ‘আয়োজনে’র ১৯টি দফার প্রথম দফাতেই বলা হয়েছে, স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে বাস্তুচ্যুতদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে যাচাই সম্পাদন করা হবে। মিয়ানমার রাখাইনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, যে গণহত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, যে নির্যাতন করেছে, তাতে উপযুক্ত নিরাপত্তা না পেলে সেখানে স্বেচ্ছায় কোনো পাগলও ফিরে যেতে চাইবে না। ১৯৯২ সালের চুক্তিতে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল। এবার মিয়ানমার তেমন কোনো মধ্যস্থতাকারীর দাবি মেনে নেয়নি। জাতিসঙ্ঘ বলেছিল, মধ্যস্থতাকারী দরকার। তা না হলে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো একই কথা বলেছে। কিন্তু মিয়ানমার রাজি হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২৩ নভেম্বর ‘আয়োজন’ স্বাক্ষর করে ঢাকায় ফিরে বলেছেন, কবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শেষ হবে এসব কথা বলে লাভ নেই। যেন জনগণের এ বিষয়ে কিছুই জানার অধিকার নেই। তাই তার কথার ভেতরে এমন তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর বাস্তুচ্যুতরা যাতে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে সেজন্য রাজি মিয়ানমার। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, ‘আয়োজন’ স্বাক্ষরের দিন থেকে এখনো প্রতিদিনই আশ্রয়ের সন্ধানে শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রেখেছে। এখনো মংডুর আশপাশে মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিয়ানমার বাহিনী। যেহেতু এখানে আন্তর্জাতিক কোনো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি নেই, সে কারণে কোথাও নালিশও করতে পারছে না বাংলাদেশ।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এবং ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর মিয়ানমার থেকে চলে আসা ব্যক্তিদের তথ্য-উপাত্ত দেবে বাংলাদেশ। মিয়ানমার সরকার সেসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করবে। তারপর তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করবে। ব্যাপারটা খুবই চালাকির। এখানে বাংলাদেশ একেবারেই বেকুব বনে গেছে। বাংলাদেশ প্রথমে বাস্তুচ্যুতদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নেবে। অর্থাৎ তাদের যেভাবে নিবন্ধন করা হয়েছে, সেসব তথ্য মিয়ানমার সরকারকে দেবে। যে জনাব এক্স রাখাইনের অমুক জেলার অমুক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। রাখাইন এখন জনশূন্য বিরানভূমি। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসতবাড়িতে এসে ঘরবাড়ি তুলছে মিয়ানমারের বৌদ্ধরা। তাদের মধ্যে কে স্বীকার করবে যে, এই বাড়িটিই জনাব এক্স-এর ছিল। অর্থাৎ শুরুতেই একটা বড় ধরনের হোঁচট খেতে হলো। মিয়ানমার সরকার তখন বলবে, জনাব এক্স যে ওই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেল না। তাহলে কী হবে? তাকে মিয়ানমার আর কোনো দিনই ফেরত নেবে না।
‘আয়োজনে’ বলা হয়েছে, মিয়ানমার প্রতিদিন এ রকম ৪০০ লোকের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করবে। কতজনের তথ্য-উপাত্তকে মিয়ানমার সরকার সঠিক বলে মনে করবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ২০ জন, ৪০ জন, ৫০ জন। আবার সেসব লোকেরই তথ্য-উপাত্ত মিয়ানমার যাচাই করবে, যাদের কাছে মিয়ানমারের পুরনো নাগরিকত্ব সনদ রয়েছে। যে পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছে, তাদের দলিলদস্তাবেজ নিয়ে বের হওয়ার সময় হয়নি। এ দিকে আবার ১৯৮২ সালে মিয়ানমারের সামরিক সরকার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়েছে। ফলে তাদের কাছে তেমন কোনো তথ্যপ্রমাণও নেই। নতুন করে পালিয়ে আসা প্রায় আট লাখ লোকের মধ্যে হাতেগোনা কিছু লোকের কাছে ওই ধরনের কোনো দলিল থাকলেও থাকতেও পারে। বাকি সবাই রিক্তহস্ত। প্রমাণ করার উপযুক্ত কিছু তাদের কাছে নেই। অতএব প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

ইউএনএইচসিআর এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সনদপত্র দিয়েছিল। মিয়ানমার জানিয়ে দিয়েছে, সে সনদপত্রও তারা মানবে না। সেগুলো আবার পুনরায় যাচাই করা হবে। আবার এ কথাও বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যারা মিয়ানমারের বাসিন্দা বলে প্রমাণিত হবে তাদেরকে নিয়ে রাখা হবে অস্থায়ী ক্যাম্পে। ক্যাম্প-জীবনের ভয়াবহতা মিয়ানমারের বাসিন্দারা ইতোমধ্যেই দেখে ফেলেছেন। সেটি হিটলারের বন্দিশিবিরের চেয়ে কম ভয়াবহ নয়। মিয়ানমার যেভাবে বলেছে, তাতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে কমপক্ষে ৫০ বছর লাগবে। আর এই ৫০ বছরে তাদের জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। তাতে ধরে নেয়া যায় সময় লাগবে ১০০ বছর। অর্থাৎ প্রত্যাবাসন হবে না। এতেই খুশিতে গদগদ হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এই ‘আয়োজন’কে বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় কূটনৈতিক সাফল্য নাকি আর অর্জিত হয়নি। তাই যদি হয়, তাহলে সমগ্র দুনিয়া থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ডেকে এনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে কাজ করতে তিনি কেন বললেন? এক দিকে বলছেন, তৃতীয় পক্ষ লাগবে না। অপর দিকে কূটনীতিকদের সারা পৃথিবীতে জনমত গড়ে তোলার কথা বলছেন। এটা একটা বড় ধরনের গোঁজামিল। সাফল্য নয়। সাফল্য দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা। সামগ্রিক বিচারে তাই বলা যায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিলো। অথচ এর সাথে জাতিসঙ্ঘ থাকলে আমরা তাদের দ্বারস্থ হতে পারতাম। কিন্তু ‘আয়োজনে’র শর্তে বলা হয়েছে, কোনো বিরোধ দেখা দিলে দুই দেশ বসে মীমাংসা করবে। দুই দেশ বসলে কী হয়, সেটি আমরা সম্পাদিত আয়োজনে স্পষ্টই দেখতে পেলাম।

এ দিকে প্রধানমন্ত্রী আবার শুরুর দিকে বলেছিলেনÑ আমরা যদি ১৬ কোটি লোককে খাওয়াতে পারি, তাহলে আর ১০ লাখ লোককে খাওয়াতে পারব। চালের কেজি ৭০ টাকা। রোহিঙ্গাদের খাওয়াতে প্রতিদিন লাগছে ১০০ টন চাল। এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে তা যদি আসে, তাতেও চলবে মাত্র আর ১০০ দিন। তারপর অনন্ত অন্ধকার। সরকার যদি মেনেই নিয়ে থাকে যে, এই রোহিঙ্গাদের খাইয়ে-পরিয়ে বাংলাদেশেই রাখবে, তাহলে তাদের মূল জনস্রোতে মিশে যাওয়ার সুযোগ দেয়াই ভালো। কাজ করুক। উপার্জন করুক। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকুক। ‘আয়োজনে’র ধোঁকা দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ১৯৯২ সালের চুক্তিতে বলা হয়েছিল, মিয়ানমার ছয় মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। দুই লাখ লোককে তারা ফেরত নিয়েছিল। এবার কোনো আশা নেই। স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাবে, তেমন ভরসাও নেই। সুতরাং তাদের বোধহয় মিশিয়ে দেয়াই ভালো।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
rezwansiddiqui@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/273550