২৬ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:১৯

জাতিসংঘের হুশিয়ারি

রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইন এখনও নিরাপদ নয়

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন অচিন্তনীয়, বিপজ্জনক : অ্যামনেস্টি * ফেরত পাঠানোর আগে বেশকিছু শর্ত পালন করতে হবে : কানাডা

রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরার মতো নিরাপদ পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন অচিন্তনীয় ও বিপজ্জনক। অন্যদিকে কানাডা সরকার বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে বেশকিছু শর্ত পালন করতে হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পর এসব হুশিয়ারি এলো।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলেছে, ‘এ মুহূর্তে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের ফেরার এবং বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়। এখনও অনেক মানুষ পালাচ্ছে। বহু মানুষ সহিংসতা আর ধর্ষণের শিকার হয়ে মারাত্মক মানসিক আঘাতের মধ্যে পড়েছে। অনেকে নিজের চোখের সামনে বন্ধু-স্বজনদের খুন হতে দেখেছে। বেশিরভাগই তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি, গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আদ্রিয়ান অ্যাডওয়ার্ড শুক্রবার জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরার পথ তৈরি করতে বৃহস্পতিবার নেপিদোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দফতরের মন্ত্রী চ টিন্ট সোয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা এবং এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি সুনির্দিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সমঝোতা স্মারকে। তবে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আদ্রিয়ান অ্যাডওয়ার্ড জানান, ওই সমঝোতা স্মারকে কী আছে, তা এখনও তারা দেখেননি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সহিংসতার শিকার মিয়ানমারের ওই জনগোষ্ঠীর রাখাইনে ফেরার বিষয়টি যেন স্বেচ্ছায় এবং নিরাপদে হয়, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে এবং এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।’ সংস্থাটি বলছে, অপরিপক্বতার মধ্যে যেন তাদের ফেরত পাঠানো না হয়।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোনো আলোচনাই অর্থপূর্ণ হবে না। সংস্থার শরণার্থী ও উদ্বাস্তু অধিকার বিভাগের পরিচালক চার্মেইন মোহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিয়ানমারে বর্ণবাদী ব্যবস্থা বহাল এবং বন্দিশিবিরের মতো পরিবেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে আটকে রাখা হচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন একেবারেই অচিন্তনীয়। তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চুক্তি সম্পর্কে অন্ধকারে রেখে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। চার্মেইন মোহাম্মদ বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকার অধিকার থাকতে হবে আর কেউ ফেরত যেতে না চাইলে তাকে জোর করা যাবে না।
অ্যামনেস্টির ইউকে শাখার পরিচালক কেট অ্যালেন দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, বর্ণবাদী ব্যবস্থা যতদিন বহাল আছে ততদিন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুধু বিপজ্জনকই নয়, অপরিপক্বও বটে। তিনি বলেন, সত্যিই কোনো উন্নতি চাইলে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জায়গা-জমি ফেরত দিতে এবং ভীতিমুক্ত পরিবেশে বাস করা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মেরি-ক্লড বাউবৌ বলেছেন, নীতিগতভাবে চুক্তিটি ভালো কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর আগে বেশকিছু শর্ত পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা চুক্তিটির শর্তাবলি দেখিনি। কিন্তু আমরা জানি কফি আনান কমিশনের সুপারিশে কি ছিল। তাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মর্যাদা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে যেতে পারবে।’

https://www.jugantor.com/first-page/2017/11/26/174826