২৬ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:০৪

সমঝোতা চুক্তিতে মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিতের সম্ভাবনা ক্ষীণ

বর্মী প্রশাসনের সামগ্রিক কার্যক্রম একরোখা ধরনের। বাংলাদেশ পক্ষীয় প্রস্তাবকে সহজে গ্রহণ না করার প্রবণতাটাই বেশি তাদের। দাবি উপেক্ষিত সমঝোতা চুক্তি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অশনি সংকেত। এতে তাদের (রোহিঙ্গা মুসলমান) মৌলিক অধিকার পদে পদেই ক্ষুণ্ন হবে। সুনিশ্চিত হবার সম্ভাবনাটা খুবই কম। সরল প্রস্তাবকে সহজে না নিয়ে উল্টো চাপপ্রয়োগমূলক প্রস্তাব উত্থাপন করে সমঝোতা চুক্তিতে বাংলাদেশকে বাগে আনতে কায়দা অনুসরণ করছে বর্মী সরকার। সহজ ভাষায় বাংলাদেশের প্রস্তাবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে সরাসরি অগ্রাহ্য করেছে তারা। এর বিপরীতে বর্মী সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেন্দ্রভিত্তিক আরাকানে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর রোহিঙ্গাদের এভাবে ফিরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ভিনদেশী কিংবা বাঙ্গালি সন্ত্রাসী আখ্যা দিতেও কোন বাধা থাকছেনা সেদেশের প্রশাসনের।

বিশ্লেষকদের ধারণা, মিয়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তিটি হয়েছে তাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আশা ও বাস্তবতা রীতিমাফিক উপেক্ষিত হয়েছে। কারণ উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী বৌদ্ধ শাসিত রাজ্যে কোনভাবেই যেনো মুসলমানের অস্থিত্ব সম্পর্কের আবির্ভাব না ঘটে সেই পরিকল্পনায় হাটছে তারা। যে প্রক্রিয়ায় সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবার সম্ভাবনাটা অনেকাংশে রুদ্ধ। কারণ তাদের ফেরত নেওয়ার চুক্তিতেও কৌশলগত মারপ্যাচ রয়েছে বর্মী সরকারের। বিশ্লেষকদের আরো ধারণা, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে বর্মী প্রশাসন নাগরিকত্ব ইস্যু তুলে নানান সংকট ও জঠিলতা সৃষ্টি করে নতুন সহিংসতার উসকানি দিতে পারে। এমনকি ফের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিতে পুরোনো নির্যাতনের ধরণের সাথে নতুন নির্যাতনের ধরণ প্রয়োগ করতে পারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর; এমনটিও মনে করছেন বিশ্লেষকগণ।
সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাব পাল্টা প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে অবশেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমঝোতা স্বাক্ষর হলেও, এই সমঝোতা স্মারকে প্রাধান্য পেয়েছে বার্মার সমস্ত প্রস্তাব। এতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবই স্থান পায়নি।

বার্মার রাজধানী নেপিদোতে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াও টিন্ট সোয়ে স্বাক্ষর করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে সূত্র দাবি করেছেন, সমঝোতা স্মারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবার কথা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ চায় প্রক্রিয়া শুরু হবার এক বছরের মধ্যেই সমন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সময় নির্দিষ্টকরণের জন্য জোরালোভাবে প্রস্তাব রাখা হলেও কতদিনের মধ্যে সমস্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তার সুনির্দিষ্ট কোন সময় উল্লেখ করার প্রতি কর্ণপাত করেনি বার্মা। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরেকটি প্রস্তাব, সমস্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে জাতিসংঘ অধীনস্ত কোন সংস্থার সংপৃক্ততার জন্য প্রস্তাব করা হলেও, তাতেও সাড়া দেয়নি বার্মা। এতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সময়ে এবং রোহিঙ্গা শনাক্তকরণের সময় কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে জাতিসংঘের সংপৃক্ততা না থাকায় তা আরো জঠিল আকার ধারণ করবে।
সূত্রে প্রকাশ, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে প্রত্যাবাসন করার জন্যও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রতিও বার্মা নজর দেয়নি। তারা চায় রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্পের মাধ্যমে রাখতে। এতে করে ওই ক্যাম্পে এতো সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে তাদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে। সম্পাদনকৃত প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের মৌলিক দাবি রোহিঙ্গাদেরকে বার্মার নাগরিকত্ব প্রদান করার প্রস্তাবকেও খুব কৌশলের সহিত এড়িয়ে গিয়েছে বার্মা।
সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, এটা হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ। আমরা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করবো। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে বাড়ি-ঘর পুড়ে গেছে। তাই তাদের জন্য বাসযোগ্য করতে সময় লাগবে।

http://www.dailysangram.com/post/309079