২৫ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:৫৯

‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

আবারো বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৫ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এই বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যদিও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বিদ্যুতের এই মূল্য বৃদ্ধিকে ‘সামান্য’ ও ‘মামুলি ব্যাপার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ‘জনজীবনে এর প্রভাব পড়বেনা’ বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বিদ্যুতের এই মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন পেশা ও শ্রমজীবী মানুষ। তারা বলছেন, ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কয়েক বছর ধরেই জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে।

জীবনযাত্রার প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে পর্যদস্তু ও দিশেহারা তারা। নতুন করে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি তাদের ওপর চাপ আরো বাড়াবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিকে তারা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ বলে মন্তব্য করছেন।
খিলক্ষেত নিকুঞ্জ-২ এলাকার বাসিন্দা কম্পিউটার প্রকৌশলী বাপ্পি দত্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে কয়েক দফা বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো হলো। এতে করে সাধারণ মানুষের খরচ বাড়বে। একই সঙ্গে তাদের জীবন যাত্রার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। ব্যয় সামলাতে গিয়ে তারা আরো চাপে পড়বে। নতুন করে বিদ্যুৎ বিল বাড়া যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। একটি প্রতিষ্ঠিত এনজিওতে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) পদে চাকরি করেন মো. নজরুল ইসলাম (৫০)। বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। প্রতি মাসে তাকে বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ১৫০০/ ১৬০০ টাকা। গতকাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর শাহবাগ এলাকায়। বিদ্যুৎ বিল বাড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিল না বাড়ানোর জন্য নানা কথা হলো। গণশুনানি হলো। এত এত মানুষের আকুতি পাত্তাই পেলনা। তিনি বলেন, এমনিতেই জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তার ওপর কিছুদিন পর পর বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের বিল বাড়ানো হয়। এ যেন ইচ্ছে পূরণের দেশ! যখন যা খুশি তাই করা যায়। নজরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের অনুভূতি এখন ভোতা হয়ে গেছে। এসব নিয়ে এখন কথা বলতে ইচ্ছা করে না। বিল বাড়ানো হয়েছে বিল দেব। কিন্তু কোত্থেকে দিব সেই চিন্তা আমাকেই করতে হবে।

সিএনজি চালক মো. সানী (৩২)। স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন মিরপুর-১৪ নম্বর এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। প্রতিমাসে তাকে বিদ্যুৎ বিল গুনতে হয় ৮শ থেকে ৯শ টাকা। তার ওপর সংসারের নিত্য খরচতো আছেই। নতুন করে বিদ্যুৎ বিল বাড়ার খবরে আতঙ্কিত তিনি। সানী বলেন, এমনিতেই খুব কষ্টে আছি। শুধু আমি না, আমার মতো শ্রমজীবী যারা ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ব্যবহার করেন, তাদের সবার একই অবস্থা। বিল দিতে দিতে ক্লান্ত আমরা। এখন বিদ্যুৎ বিল বাড়া নতুন যন্ত্রণা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সামনের মাস থেকে খরচ বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ বেকায়দায় পড়বে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মসজিদের খাদেম মো. রিয়াজুল ইসলাম আলাপকালে বলেন, কয়েক বছর ধরেই জীবনযাত্রার ব্যয় ও চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আবার কিছুদিন পর পর গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল বাড়ানো হয়। তিনি বলেন, আমরা ছোট চাকরি করি। আয়ও সীমিত। আমাদের মতো যারা আছেন তাদের জন্য এটি বোঝা।
ফার্মগেটের হোটেল নিউ স্টার অ্যান্ড কাবাব হাউসের ব্যবস্থাপক মো. কুদ্দুস বলেন, এমনিতে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকার মতো বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় আমাদের। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় খরচ আরো বেড়ে গেল। বিদ্যুতের মূল্য বাড়াতে মালিকের ওপর চাপ বাড়বে। কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের সততা জেনারেল স্টোরের মো. মজিবুর রহমান বলেন, দোকান ও বাসার বিদ্যুৎ বিল প্রতি মাসে দিতে হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সংসারের অন্যান্য খরচতো আছেই। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল মেলাতে এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছি। প্রতিদিনই ব্যয় বাড়ছে। এখন নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় ব্যয় আরো বাড়বে। কাওরান বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা (৬০)। গতকাল কথা হয় তার সঙ্গে। মোস্তফা জানান, যা আয় করেন তার প্রায় সবটাই পাঠাতে হয় লক্ষ্মীপুরের শ্রীরামপুরের গ্রামের বাড়িতে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি মাসেই খরচের হার বাড়বে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=93535