২৫ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:৪৯

বেপরোয়া প্রশ্ন বাণিজ্য নজরদারি নেই

জেএসসির পর এবার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের জোরালো অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখন এই ‘প্রশ্নপত্র’ বিক্রির হাট।
দরাদরি করে চলছে বেচাকেনা। ফেসবুকের মাধ্যমে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে অনেকাংশে মিলও পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার হলে দেওয়া প্রশ্নের সঙ্গে। শিশুদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিক্রির নামে অরাজকতা যারা চালাচ্ছে দৃশ্যত তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও প্রশাসন কাউকেই তোয়াক্কা করছে না। নেই এসব কর্তৃপক্ষের তরফেও প্রতিরোধের কোনো উদ্যোগ। পিইসির প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নেই কোনো মনিটরিং কমিটিও। ফলে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে কি না এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখছে না কেউ। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ও গোয়েন্দা ইউনিটও জানে না কিছুই!

গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর আগের রাত থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে এই ‘প্রশ্ন’ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় পরীক্ষা শেষে পাওয়া মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মিল রয়েছে।
নৈর্ব্যক্তিক অংশের চেয়ে রচনামূলক অংশেই মিল বেশি। পিইসির গণিত পরীক্ষা আগামী শনিবার। এই প্রশ্নও বৃহস্পতিবার আগাম পাওয়া যাবে বলে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে ঘোষণা দিয়ে বলা হচ্ছে, আগে ইনবক্সে কথা চূড়ান্ত করতে হবে। ফাতেমা নূর নামে ঢাকার একজন শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলে, গতকাল ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা পরীক্ষার সময় হলে অনেকেই বলেছে, তারা ফেসবুকে প্রশ্ন দেখে এসেছে এবং এর সঙ্গে মূল প্রশ্নপত্রের মিল রয়েছে। ফাতেমা কালের কণ্ঠকে বলে, ‘সকালে আমি একটি কপি দেখার সুযোগ পাই এবং হলে গিয়ে দেখি রচনামূলক অংশ প্রায় মিলে গেছে। ’

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি, পিইসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে এসব নাকি ভুয়া। প্রশ্ন মেলে না। তদন্ত করতে পারলে বের হবে আসল বিষয়। ’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, তাঁদের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংঘবদ্ধ অপরাধ দলের প্রধান, বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সূত্র পেলে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি না এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখব। ’

ফেসবুক হাটে : ‘পিএসসি গণিত প্রশ্ন এই মাত্র পেলাম’ নামের পেজ খুলে রাকিব হাসান নামের একজন পিইসি গণিত প্রশ্ন মূলকপি দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। গতকাল সন্ধ্যায় ০১৭৭৪০২৮৩২৪ মোবাইল নম্বরে কল করলে একজন নিজেকে রাকিব হাসান বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘এখন আমার হাতে প্রশ্ন আছে। পেতে হলে ৫৫০ টাকা আমার নম্বরে বিকাশ করতে হবে। এরপর ফেসবুকের ইনবক্স, হোয়াটস অ্যাপ বা ইমোতে পাঠাব। ’ পরিচয় জানতে চাইলে রাকিব বলেন, ‘আমি বোর্ডে ছোট চাকরি করি। লাইন করে পাইছি। এর বেশি কিছু বলা যাবে না। ’ বলে লাইন কেটে দেন।

‘সামিরা খান’ নামে এক আইডি থেকে বিজ্ঞাপন সূত্রে গতকাল সন্ধ্যায় একজন শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। ‘সামিরা খান’ ৩০৫ টাকা বিকাশ বা রকেটে পাঠাতে বলে এবং ০১৮৩৭৩৫৫৫১২ নম্বরটি দেয়। ওই নম্বরে টাকা পাঠালে ১০০% কমন পড়বে এমন প্রশ্ন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে ওই নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। ‘পিএসসি এক্সাম কোয়েশ্চেনস ২০১৭’ নামে পেজে সন্ধ্যায় অল বোর্ডের ক্লিয়ার প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা চেয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেখানে একটি গণিত প্রশ্নের ওপরের অংশের ছবিও দেওয়া হয়। সেখানে দেওয়া ০১৬৩৫৪৪২৯৬৮ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ‘জীবন’ নামের একজন বলেন, তাঁর অন্য একটি নম্বরে ৫০০ টাকা পাঠাতে হবে। এ জন্য তাঁকে ফেসবুকে আগে অ্যাড করতে হবে। এরপর কথা বলে ই-মেইল, ইমো বা ফেসবুকে পাওয়া যাবে প্রশ্ন। ‘জীবন’ দাবি করেন, ‘আমদের কাছে সঠিক প্রশ্নই আছে। আগের পাঁচটি পরীক্ষায় শতভাগ মিলেছে। পরীক্ষার আগের দিনই আমরা সেগুলো দিয়েছি। ইসলাম ধর্ম বাদে সব প্রশ্নের জন্যই আমরা ৫০০ টাকা নেই। আমার এই ফোন সব সময় খোলা থাকে। সঠিক জিনিস পাই এবং দেই বলেই ঝামেলা নাই!’ কোথায় প্রশ্ন পান, জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা তো বলা যাবে না। আপনার প্রশ্ন দরকার, পাবেন। না মিললে টাকা ফেরত। ’
‘পিএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ২০১৭’ নামে আরেকটি পেজে বিজ্ঞাপন দেখে ‘সাব্বির ভাই’ নামের একজনের ০১৯৯৭০৩৪৬৬৫ নম্বরে কল করলে বলা হয়, তাঁর মোবাইলে মেসেজ করে মোবাইল ফোন নম্বর দিতে। সেখানে তিনি আরেকটি নম্বর দেবেন যেখানে রকেট বা বিকাশে ৫০০ টাকা পাঠাতে হবে। এরপর হোয়াটস অ্যাপ বা ইমোতে মিলবে প্রশ্ন। কোথায় প্রশ্ন পেয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা বলব না। আপনি ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন পেয়ে যাবেন। ’ এখানে ‘ঢাকা বোর্ড নয়, ঢাকা জেলার প্রশ্ন’ হবে—এমন মন্তব্য করতেই ফোনের লাইন কেটে দেন সেই ‘সাব্বির ভাই’।

‘পিএসসি জেএসসি এসএসসি এইচএসসি অল ঢাকা বোর্ড কোয়েশ্চেনস ২০১৭’ পেজে এম ডি মোশাররফ আইডি থেকে টাকার বিনিময়ে ফলাফল পরিবর্তনেরও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ০১৭৩৮৩৪১৮৯৩ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। একই পেজে গতকাল দুপুরে শামিম ইসলাম নামের একটি আইডি থেকে যাদের গণিত প্রশ্ন লাগবে তাদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখানে দেওয়া ০১৭৫০৭১৩৯০৯ মোবাইল ফোনের নম্বরে সন্ধ্যায় যোগাযোগের চেষ্টা করে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সাদা এ্যাপ্রন, মেঘ বালক, এনকে নাহিদ হাসান, অরিন খান, খন্দকার রিজভি আলম, হিমু আহমেদ, এমডি রবিন সরকার, আনুয়ারুল হকসহ বেশ কয়েকটি আইডি থেকে গণিত প্রশ্নপত্র বিক্রির ঘোষণা দিতে দেখা যায়। সেখানে যারা লাইক বা কমেন্ট করছে তাদের মধ্যেই বিষয়টি যে অপরাধ এমন কোনো ভাবলেশ নেই।
কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ জাতীয় অনেক গ্রুপ থেকেই প্রাথমিকের প্রশ্নপত্র বিক্রির অফার দেওয়া হচ্ছে। ‘পিএসসি জেএসসি এসএসসি এইচএসসি ডিগ্রি অনার্স মাস্টার্স এডমিশন টেস্ট বিসিএস জব কোয়েশ্চেনস আউট’ পেজে বেশি পাওয়া যাচ্ছে প্রশ্ন। অলি জামিল নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রশ্ন শিরোনামের গ্রুপে সতর্কও করা হয়েছে, ‘আগে টাকা দিয়ে প্রশ্ন নিবেন না কেউ, লাস্ট টাইম ওয়ার্নিং। টাকা মাইর গেলে আমরা দায়ী না। কেউ আগে টাকা দিয়ে বাশ খাইলে এডমিন দায়ী না। ’ ওই পেজে ‘আফিফ স্বাদ’ নামের একটি আইডি থেকে প্রশ্নপত্র দিয়ে বলা হয়, ‘গণিত প্রশ্ন, টাকা লাগবে না। হেল্প করতে পারলেই খুশি। ’

‘পিএসসি জেএসসি এসএসসি এইচএসসি কোয়েশ্চেনস সাজেশন অল বোর্ড এক্সামিন ২০১৭ + ২০১৯ + ২০ + ২১ বিডি’ নামে পেজে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন। নোমান ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘গতকাল বিকেলেও গণিত প্রশ্নের গণিত প্রশ্ন পাবেন সবার আগে!!!!! (সম্পূর্ণ ফ্রি)। পিএসসি প্রশ্ন ১০০% সরাসরি বোর্ড কপি ক্লিয়ার পিকচারসহ সবার আগে প্রশ্ন পেতে চাইলে আপনার জেলার নাম লিখে কমেন্ট করুন। ’ ৩২২ জন সেখানে জেলার নাম লিখে কমেন্ট করেছে। সাইফুল ইসলাম সিফাত নামের একজন লিখেছে, ‘প্রশ্ন যারা একদম ফ্রি পেতে চাও তারা আমাকে এ্যাড করে ইনবক্স-এ আসো। ’

একটি গ্রুপের নাম ‘পিএসসি জেএসসি এসএসসি এইচএসসি ডিগ্রি অনার্স মাস্টার্স অ্যাডমিশন টেস্টে বিসিএস জব কোয়েশ্চেন আউট। অনেকেই গ্রুপে পোস্ট দিচ্ছে গণিতের প্রশ্নপত্র বিক্রির। তাদের একজনের আইবি রুদ্র ইসলাম, পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাও রয়েছে। তার ০১৭৯৬১৭২১৭৬ নাম্বারে ফোন দেওয়া হলে তিনি দাবি করেন, প্রশ্নপত্র, সিমি, ফেসবুক আইডি সবই অন্য একজন তাকে দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য : প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন আসছে বলে আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। এখন সাত হাজার কেন্দ্রের মধ্যে একজন দুষ্টু লোক থাকতে পারে, যে পরীক্ষা শুরুর আগে মোবাইলে ছবি তুলে তা ছড়াতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক আছি। তবে অনেক সময় শিক্ষকরা সাজেশন দিলেও অনেকাংশে মিল থাকে। সেটাও কেউ কেউ ছড়িয়ে দেয়। কয়েকটা প্রশ্ন মিললে সেটাকে কোনোভাবেই প্রশ্ন ফাঁস বলা চলে না। ’
ডিবির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, ‘আমাদের জেএসসি পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে মনিটরিং আছে। গত এক বছরে আমরা ৯টি মামলায় অনেককে গ্রেপ্তার করেছি। এসএসসি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সাভারের এক স্কুল শিক্ষকসহ ১১ জনকে ধরা হয়েছে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে একটি মনিটরিং কমিটি আছে, যেখানে আমিও সদস্য। আমাদের বলা হয়েছে, এসব চক্রের হোতাদের খুঁজে বের করে জালিয়াতি বন্ধ করতে হবে। তবে পিইসির ক্ষেত্রে এমনটি নেই। এখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। ’
কিছু অভিভাবক ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে ছুটলেও আতঙ্কে রয়েছেন বেশির ভাগ অভিভাবক। আর এই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় শিশুমনেও এর প্রভাব পড়ছে। রাজধানীর পূর্ব মণিপুরের বাসিন্দা জাকির হোসেনের ছেলে জাহিন এবার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ছেলেও আমার কাছে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। ওর বন্ধুদেরও কেউ কেউ ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আগেই পায় বলে জানিয়েছে। এখন এই প্রশ্ন মিলুক আর না মিলুক এতে যারা ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে ছোটাছুটি করে না তাদের মন ছোট হয়ে যায়। অনেক সময়ই হীনম্মন্যতায় ভুগে যারা প্রশ্ন পেয়েছে তারা ওর চেয়ে বেশি নম্বর পেয়ে যায় কি না?’

উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের উচ্চপদস্থ কাউকে কটূক্তি করলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু দিনের পর দিন ফেসবুকে মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরও সরকার এখন পর্যন্ত কোনো শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা বিষয়টি স্বীকার পর্যন্ত করেনি।
জানা যায়, প্রায় প্রতিবছরই পিইসি পরীক্ষার সময় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তবে শুধু ২০১৪ সালে একবারই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। তখন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এস এম আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিকের বাংলায় ৫৩ এবং ইংরেজি বিষয়ে ৮০ শতাংশ প্রশ্ন ফাঁস হয় বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। কমিটি তাদের প্রতিবেদনে প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ‘আমূল’ পরিবর্তনের সুপারিশ করে বিজি প্রেসের কাগজ শনাক্ত করার জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করতে বলা হয়। এ ছাড়া প্রশ্ন তৈরি ও বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ করার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। এর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে গত বছর থেকে সারা দেশে আট সেট প্রশ্ন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক জেলার সঙ্গে পাশাপাশি জেলার প্রশ্ন ভিন্ন রাখা হয়।

জানা যায়, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৭ লাখ পরীক্ষার্থী। এ জন্য বোর্ড রয়েছে ১০টি। সে হিসাবে প্রতি বোর্ডের অধীনে গড়ে এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী ভাগে পড়ে, যা নিতেই অনেক কষ্ট করতে হয় বোর্ডগুলোকে। কিন্তু পিইসি ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ৩১ লাখ পরীক্ষার্থী। কিন্তু এর জন্য কোনো বোর্ড নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (নেপ) তাদের অতিরিক্ত কাজের অংশ হিসেবে যৌথভাবে এই পরীক্ষা পরিচালনা করে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে নেপ। আর পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার সক্ষমতা নেই এই পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুটির। ২০০৯ সাল থেকে এই পরীক্ষা চালু হলেও গত আট বছরেও গঠিত হয়নি প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/11/24/569453