২৫ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:২১

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

হলে হলে মাদকের আড্ডা, ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের

মাদকের সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের হলগুলোতে মাদকের আড্ডার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভ্রুক্ষেপ না থাকায় মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বেড়ে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাতে হলগুলোতে মাদকের আসর বসলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বার মোড়, শেষ মোড় এবং পার্শ্ববর্তী বয়রা ও কেওয়াটখালী এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং দোকানদার শিক্ষার্থীদের মাদক সরবরাহ করে থাকেন। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের পেছনের পুকুরপাড়, শেষ মোড়ের ব্যাচেলর কোয়ার্টার, জব্বার মোড়, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় এবং আমবাগান এলাকায় প্রকাশ্যে ও গোপনে গাঁজা, মদ, হেরোইন ও ইয়াবা কেনাবেচার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব মাদকদ্রব্যের প্রধান খরিদ্দার বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি আবাসিক হলের ছাত্ররা। খরিদ্দারের মধ্যে আরও রয়েছেন কিছু কর্মকর্তা এবং বেশ কিছু কর্মচারী। কিছুদিন আগেও মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর অভিযান ছিল। কয়েকবার মাদকসহ কয়েকজন সরবরাহকারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দও করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় হলে হলে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মাদকসেবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দামে কম ও সহজলভ্য হওয়ায় হাতের নাগালেই মিলছে এসব মাদকদ্রব্য। মাদকসেবী শিক্ষার্থীরা সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রতি পুরিয়া গাঁজা কেনেন ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মাদকসেবীদের মধ্যে যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তাঁরা বেশি ঝুঁকছেন ইয়াবা বড়ি সেবনে। প্রতিটি বড়ি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩০০-৩৫০ টাকায়। ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের ওই স্থানগুলোতে মাদক ঢোকে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের সীমানা ঘেঁষে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় বাংলা মদের একটি উৎস।

আবাসিক হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যাঁরা নিয়মিত মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকেন। এর মধ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, জামাল হোসেন হল, ফজলুল হক হল, শামসুল হক হল ও আশরাফুল হক হলে মাদকাসক্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. হাসানুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘হলে মাদকের আসর বসে এ রকম তথ্য কিংবা অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভায়ও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি ‘মাদক নয় বন্ধু’ (মানব) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদকবিরোধী বেশ কিছু প্রচারণাও চালায় সংগঠনটি। পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা না পাওয়ায় সংগঠনটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাদক সেবনের টাকা জোগাতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা।
প্রক্টর মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, এমনটা নয়। আমরা ময়মনসিংহ পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা বাহিনীকে মাদক সরবরাহের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। মাদকদ্রব্য সরবরাহ রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সচেষ্ট রয়েছে।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1372881