২৩ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৯

সিলেটে প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্রে অর্ধশত ভুল!

‘এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়’

প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীর (পিইসি) একটি প্রশ্নপত্রে প্রায় ৫০টি ভুল থাকার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সিলেটে চলতি পিইসি পরীক্ষার ইংরেজি ভার্সনের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এ ধরনের ভুল দেখা গেছে।
এ ঘটনায় অভিভাবকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
দেখা গেছে, প্রশ্নপত্রের ১, ২, ৪, ৯, ১১, ১৭, ২৩, ২৮, ৩৭, ৩৮ নম্বর প্রশ্নসহ অন্তত ২০টি বাক্য এবং অনেক বানান ভুল রয়েছে। এ ছাড়া অনেক প্রশ্নপত্রের অনেকগুলো প্রশ্ন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
পিইসির প্রশ্নপত্রের ১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে ‘What would happen if no the Mujibnagar govt. was formed?’ শুদ্ধ বাক্যটি হবে@‘What would happen if the Mujibnagar govt. was not formed?’। ২ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘Why Bangladesh to import a lot of vegetable oil?’, এই প্রশ্নটির বাক্য গঠন ভুল। এই প্রশ্নে ‘b’ নম্বর উত্তরেও ভুল বাক্য রয়েছে। বলা হয়েছ, ‘Because, Production is low than demand.’, কিন্তু বাক্যটি হওয়ার কথা ছিল, ‘Because, Production is lower than demand.’। এ রকম ভুল রয়েছে ৪ নম্বর, ৫ নম্বর ও ৯ নম্বর প্রশ্নের বেলায়ও।
এভাবে প্রশ্নপত্রটিতে আরো বেশ কয়েকটি ভুল আছে। এ ছাড়া অনেক প্রশ্নে ও উত্তরে শব্দের বানানও ভুল রয়েছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রণব কান্তি দেব। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এটাই প্রমাণ করে যে আমরা আমাদের ভবিষ্যেক নিয়ে তামাশা করছি। বড় পরিসরে প্রথমবার পরীক্ষা দিতে এসে কোমলমতি শিশুরা এমনিতেই মানসিক চাপে থাকে। এর মধ্যে প্রশ্নপত্রের ভুল তাদের জন্য সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করে তোলে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘একবার সৃজনশীল, একবার মরণশীল পদ্ধতি। তারপর বই নিয়ে বিচিত্র কর্মকাণ্ড দিয়ে বছরের শুরু হয় আর ভুলে ভরা প্রশ্নপত্র আর প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারিতে বছর শেষ হয়। এখন আমাদের ভাবার সময় এসেছে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি। ’
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক তাহমিনা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। ’ কিভাবে এই ভুলে ভরা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ছাড়া হয় কেন্দ্র থেকে। সুতরাং এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। এ বিষয়ে জানতে হলে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ’ ভুল বাক্যের প্রশ্নপত্রটি আপনি দেখেছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমি দেখিনি। আমাদের কাজ হচ্ছে কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখা পরীক্ষা ঠিকমতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে কি না। প্রশ্নপত্রে ভুল আছে কি না এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। ’
প্রশ্নপত্রে ভুল থাকার বিষয়টি স্বীকার করে সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম বলেছেন, এ ভুলের জন্য জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি দায়ী। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি তৈরি করে থাকে। আমরা যে প্রশ্ন পাই, সেটাই কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ করি। প্রশ্নে ভুল আছে কি নেই, সেটা দেখা আমাদের দায়িত্বের ভেতর পড়ে না। ’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/11/23/569059