২৩ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪১

দু’বছরের মধ্যে ‘ডেডলক’ হওয়ার আশঙ্কা

চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা

আমদানি-রফতানির বিপরীতে অবকাঠামো সুবিধা সেই তিমিরে, বাড়ছে কনটেইনার ও জাহাজজট * পণ্য খালাসে প্রয়োজন অন্তত ৬০টি জেটি, আছে মাত্র ১৩টি : স্বয়ংসম্পন্ন বেসরকারি ডিপো দরকার কমপক্ষে ৪০টি, আছে ১৭টি


চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। যেভাবে আমদানি-রফতানি বাড়ছে সেভাবে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে না। তারা বলছেন, বিচ্ছিন্নভাবে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ, যন্ত্রপাতি কেনা কিংবা বাড়ানো হচ্ছে অবকাঠামো সুবিধা। কিন্তু তা পরিকল্পিত ও পর্যাপ্ত নয়। বলা যায়, আমদানি-রফতানির বিপরীতে অবকাঠামো অবস্থা সেই তিমিরে। প্রয়োজন ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর কেমন হবে সেটি মাথায় নিয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সেটি সুদূরপরাহত। এ অবস্থা চলতে থাকলে দু-এক বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর ‘ডেডলক’ বা ‘অচল’ হয়ে যাবে। এতে করে দেশের অর্থনীতির ওপর যে আঘাত আসবে তা কোনো সরকার সামাল দিতে পারবে না। স্থানীয় ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় কয়েকজন বুধবার যুগান্তরের কাছে এমন শঙ্কার কথা তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনার জট লেগেই আছে। বছরের পর বছর জট পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির শেষ নেই। সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পেরে একদিকে ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের বোঝা টানতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী দেউলিয়া হচ্ছেন। বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সংকট নিরসনে চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে চট্টগ্রাম চেম্বার, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে দাবি-দাওয়া ও সুপারিশমালা দিয়ে আসছে সরকারকে। কিন্তু তাদের সেসব দাবি ও সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখছে না। কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। লাইটার জাহাজ, ইকুইপমেন্ট ও জেটি সংকট বন্দরের নিত্যদিনের সমস্যা। বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জট যেমন লেগে আছে, তেমনি বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার জটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৩৩ হাজার কনটেইনার চেম্বার, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন বিভিন্ন সময়ে দাবি-দাওয়া ও সুপারিশমালা দিয়ে আসছে সরকারকে। কিন্তু তাদের সেসব দাবি ও সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখছে না। কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকছে। লাইটার জাহাজ, ইকুইপমেন্ট ও জেটি সংকট বন্দরের নিত্যদিনের সমস্যা। বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জট যেমন লেগে আছে, তেমনি বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার জটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ৩৩ হাজার কনটেইনার ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে কখনও কখনও ৪০ হাজার বা তারও বেশি কনটেইনারের উপচে পড়া জট থাকে বন্দরে। এছাড়া দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যার খেসারত দিতে হয় ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম বন্দরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা ছিল ১৪৩টি। বিভিন্ন জেটিতে অবস্থানরত ছিল ২৪টি জাহাজ। একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ কার্গো ও কনটেইনার জাহাজের অবস্থান অস্বাভাবিক। কিন্তু কারণ কি। সোজাসাফটা জবাব একটাই, সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পেরে এসব জাহাজকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে একটি জাহাজ বার্থিং নেয়ার পর ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু বহির্নোঙ্গরে আসার পর ২০-২২ দিন, ক্ষেত্রবিশেষে এক মাস পরও একটি জাহাজ পণ্য খালাস করে ফিরতে পারছে না। যে কারণে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জট লেগেই আছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বুধবার কনটেইনার ছিল ৩৩ হাজার ৩২৩টি। যা ধারণ ক্ষমতা ছুঁই ছুঁই। অবশ্য রোববার পতেঙ্গায় ৩ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইক্যুভেলেন্ট ইউনিটস) ধারণ ক্ষমতার সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড উদ্বোধন করা হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ও এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, পণ্য খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে এখন প্রয়োজন অন্তত ৬০টি জেটি। কিন্তু আছে মাত্র ১৩টি। ইকুইপমেন্টসহ স্বয়ংসম্পন্ন অন্তত ৪০টি বেসরকারি ডিপো বা পোর্ট (আইসিডি) দরকার। আছে মাত্র ১৭টি। তাও সবগুলো স্বয়ংসম্পন্ন নয়। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম লাইটার জাহাজ আছে। নতুন কোনো লাইটার জাহাজের অনুমোদন মিলছে না। এ অবস্থায় বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না। যন্ত্রপাতির অভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি দেয়া হয় ধীরগতিতে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে তিনটিসহ সারা দেশে অনেকগুলো ইকোনোমিক জোন হচ্ছে। এফআইডি বা ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট আসারও কথা। বাস্তবে তা হলে বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো সুবিধা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, যেভাবে আমদানি-রফতানি বাড়ছে সেভাবে অবকাঠামো সুবিধা বাড়ছে না। যা বাড়ছে তা বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিত। একুশ শতকের কথা মাথায় রেখে বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ৫০ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দর কেমন হবে তার একটি হোমওয়ার্ক এখনই করতে হবে। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা বাড়াতে হবে। তবেই বন্দর সচল রাখা যাবে। নয়তো এ বন্দর অচিরেই ডেডলক হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, গার্মেন্ট সেক্টর এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গার্মেন্ট সেক্টরকে লাইফ সাপোর্ট থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। পণ্য ভর্তি কনটেইনার বন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তা অফডকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে আরএমজি খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বন্দরের বিদ্যমান অবকাঠামো সুবিধায় কখনোই সম্ভব হবে না।

https://www.jugantor.com/first-page/2017/11/23/174031