২৩ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৫

রাজধানীতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা

রাজধানীতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা। সাধারণ মানুষ এই অপরাধীদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। নিজের ঘর, রাস্তাঘাট সর্বত্র নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠছে মানুষ। নিরাপদে-নির্বিঘেœ পথ চলতে পারছে না। অহরহ ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। অপর দিকে পুলিশ ব্যস্ত ভিন্ন কাজে। নিরাপত্তা দেয়ার জন্য রাস্তায় নেমে উল্টো মানুষকে হয়রানি করে বলে পুলিশের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।

গত সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম দম্পতি। তারা কলেজ গেট থেকে রিকশায় আজিমপুরের বাসায় যাচ্ছিলেন। সাড়ে ৬টার দিকে তাদের বহনকারী রিকশাটি নিউ মার্কেট এলাকায় পৌঁছলে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার থেকে শফিকুল ইসলামের স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ টেনে নিয়ে যায়। শফিকুল জানান, সাদা রঙের ওই প্রাইভেট কারটি ছিল নম্বরপ্লেট ছাড়া। যেখানে শফিকুল দম্পতি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তার একটু দূরে নিউ মার্কেট থানা। অথচ এই থানার আশপাশেই নম্বরপ্লেটহীন গাড়িতে করে দুর্বৃত্তরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। নিউ মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী সাগর জানান, এই রাস্তায় এভাবে অহরহ ছিনতাই করছে। ব্যবসায়ীদের মালামাল কেড়ে নিয়ে যায় প্রায়ই। নীলক্ষেত-নিউ মার্কেট এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। নিউ মার্কেট দক্ষিণ গেটসংলগ্ন রাস্তায় মাদকসেবীদের ভিড় জমে যায়। এই মাদকসেবীদের হাতে প্রায়ই নাজেহাল হন পথচারীরা।

গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর শাপলা চত্বর এলাকায় অপর এক দম্পতি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। তারা রিকশায় যাওয়ার সময় একটি চলন্ত গাড়ি থেকে ছোঁ মেরে ভ্যানিটি ব্যাগ কেড়ে নিয়ে যায়। এই এলাকায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ অক্টোবর ভোরে এ এলাকাতেই ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আবু তালহা নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র নিহত হন। তালহা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাসার সামনের রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা দেখে তালহা ছিনতাইকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় এক ছিনতাইকারীকে ধরে ফেললে তার সঙ্গীরা তালহাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তালহা নিহত হন।
রাজধানীর পল্টন মোড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখা যায় ছিনতাইয়ের দৃশ্য। এখানে একদল যুবক দিনরাত আশপাশে অবস্থান করে। তারা সুযোগ বুঝে যাত্রীদের মালামাল কেড়ে নিয়ে দৌড়ে আশপাশের গলিতে ঢুকে যায়। পুলিশের চোখের সামনেই এই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে বেশ কিছু এলাকায় দামি গাড়িতে করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। প্রকাশ্যেই এই গাড়িগুলো রাস্তায় চলছে। এমনকি নম্বরপ্লেট ছাড়াও এই গাড়িগুলো রাস্তায় চলাচল করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। একাধিক ভুক্তভোগী বলেছেন, কিছু পুলিশ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার চেয়ে মানুষকে হয়রানি করছে বেশি। জাহিদ নামে এক ডাক্তার জানিয়েছেন, পুলিশ তার মোটরসাইকেল আটকে তাকে হয়রানি করেছে। তিনি রায়েরবাজার শেরেবাংলা সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে মেরাজুল নামে হাজারীবাগ থানার এসআই তার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করেন। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন কিন্তু নম্বরপ্লেট পাননি। টাকা জমা দেয়ার কাগজপত্র সবই রয়েছে। এর পরও এসআই ওই ডাক্তারকে নাজেহাল করেন। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলসহ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। পরে ওই এসআই ডাক্তার জাহিদুলের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত চা খাওয়ার অর্থ দাবি করেন। জাহিদুল বলেন, পকেটে টাকা না থাকায় ওই এসআইকে কিছুই দিতে পারেননি তিনি। জাহাঙ্গীর আলম বাবু নামে এক ব্যক্তি গত সোমবার দুপুরের পর জানান, তিনি পুরান ঢাকার শিয়া গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় আমানউল্লাহ নামে এক এসআই পথচারীদের দাঁড় করিয়ে ছবি তুলছিলেন। বাবুকেও দাঁড় করিয়ে ছবি তোলেন ওই এসআই। জিজ্ঞেস করা হলে ওই এসআই বাবুকে বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে এভাবে দাঁড় করিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। তবে মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, এমন কোনো নির্দেশনা নেই।

মিজান নামে এক পথচারী জানান, গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্সের কাছে এক মহিলা পথচারীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এক দুর্বৃত্ত। ওই মহিলা ছিনতাইকারীকে ধরে ফেলেন। এ সময় পথচারীরা এসে ছিনতাইকারীকে উত্তম-মধ্যম দেয়া শুরু করলে ট্রাফিক পুলিশের এক কনস্টেবল ছিনতাইকারীকে জনতার হাত থেকে নিয়ে যান। পরে একটু দূরে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/270782