২৩ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১১

মিত্র চেনার সময়

অন্য দৃষ্টি

জসিম উদ্দিন

জাতিসঙ্ঘের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে উত্থাপিত প্রস্তাবের পক্ষে ১৩৫ রাষ্ট্র ভোট দিয়েছে। প্রস্তাবটির সারমর্ম হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজবাসভূম রাখাইনে ফেরত যাওয়া এবং নাগরিকত্ব দেয়া। এটি একটি মৌলিক মানবিক দাবি, যা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এর পরেও এই প্রস্তাবের সরাসরি বিরোধিতা করেছে ১০টি দেশ। বিরোধিতা করার পক্ষে দেশগুলো নানা ছলাচাতুরিপূর্ণ যুক্তিতর্কের আশ্রয় নিয়েছে। আর নিরপেক্ষ ছিল ২৬টি দেশ। এই দেশগুলোর প্রত্যেকেই একবাক্যে স্বীকার করেছে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম কায়দায় নির্যাতন হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতটুকু স্বীকার করার পরও তারা রোহিঙ্গাদের পক্ষে ভোট দিয়ে অবস্থান নিতে পারেনি। আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ অত্যন্ত জটিল। কেউ তার স্বার্থ ছাড়া এক কদমও অগ্রসর হয় না। নীতি আদর্শের যে কথা আওড়ানো হয় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফাঁকা বুলি।

ইন্দোনেশিয়া এ প্রস্তাবের ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিপক্ষে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। রোহিঙ্গা নিপীড়নের ফলে ইন্দোনেশিয়া সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। রাখাইনে অপারেশনের শুরুতে ইন্দোনেশিয়া এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। কী এমন কারণ থাকতে পারে, যে জন্য ওআইসির উত্থাপিত প্রস্তাবটির পক্ষে দেশটি অবস্থান নিতে পারল না? আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের অন্যতম উদ্যোক্তা ইন্দোনেশিয়া। এই জোটে তখনকার একঘরে হয়ে থাকা দেশ মিয়ানমারকে যুক্ত করতে ইন্দোনেশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আঞ্চলিক রাজনীতির সুবিধার্থে সম্ভবত দেশটির ওআইসির আনা প্রস্তাবটিতে সমর্থন দিতে পারেনি। এখানে মিয়ানমারের জোরালো কূটনীতির ভূমিকা থাকতে পারে। ব্যাপারটি এখন পর্যন্ত লক্ষণীয় যে একটা বড় অন্যায় করে মিয়ানমার বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোকে নিজের পক্ষে রাখতে পেরেছে। অন্য দিকে অন্যায়ের শিকার হয়েও অনেক দেশকেই বাংলাদেশ নিজের পক্ষে কাজে লাগাতে পারেনি। অন্তত চীন রাশিয়ার মতো দেশ যেভাবে মিয়ানমারকে ছায়া দিয়ে চলেছে তাতে এ কথাটির প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সে ধরনের কোনো বন্ধুরাষ্ট্র দেখা গেল না। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ধর্মীয় স্বার্থে এবং এর সাথে পশ্চিমারা মানবিক অধিকার ও চীন রাশিয়ার বিরোধিতা করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষ নিয়েছে। এটাকে সেভাবে বাংলাদেশের পক্ষ দাঁড়িয়েছে বলা যায় না।

ইরান ও সিরিয়ার মতো দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। ইরান শুরুতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছে। অন্য দিকে সিরিয়া বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। কেন তারা নিরপেক্ষ অবস্থান নিলো দেশগুলোর জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত প্রতিনিধিরা তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেল, শুধু সৌদি আরবের সাথে দ্বন্দ্বের জেরে এমনটা তারা করেছে। ওআইসির পক্ষ থেকে প্রস্তাব রচনার ক্ষেত্রে তাদের সাথে রাখা হয়নি। এই সামান্য কারণ দেখানো হলেও সৌদি আরবের কিছু অবস্থানের সমালোচনা তারা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবও তাদের সমালোচনা করেছে। এই নিয়ে জাতিসঙ্ঘে তর্কবিতর্ক হয়েছে ইরান ও সৌদি আরবের সাথে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি সামান্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও তাদেরকে প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিতে রাজি করানো যেত বলে তাদের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়েছে।

নিরপেক্ষতা গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কাছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানও রয়েছে। দেশগুলো রোহিঙ্গাদের মানবিক অবস্থানের প্রতি অবস্থান নিতে পারেনি। সেটা ঠিক আছে কিন্তু বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের মর্যাদার বিষয়টিও তারা বিবেচনায় আনেনি। তবে প্রত্যেকটি দেশের প্রতিনিধি জাতিসঙ্ঘে এই প্রস্তাবের ব্যাপারে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। কথা বলার সময় সবাই মানবতার বিশাল কাণ্ডারি সেজেছে। তাদের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন হয়েছে। এরা বাড়িঘর থেকে উৎখাত হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এরা মানবেতর জীবন যাপন করেছে। এমনকি বাংলাদেশের অবস্থানের বিপুল প্রশংসা করছে। কিন্তু এমন অমানবিক ঘটনার জন্য কে দায়ী, সেটা বলতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয়দানকারী ভারতের অবস্থান আগে থেকে ঠিক এমনটা।
এই দেশগুলোকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। কারণ, এর আগে মানবাধিকার নিয়ে জাতিসঙ্ঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যখন প্রস্তাব উঠেছে, বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে তখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। লাখ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশ এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত পরিণতি। আগে থেকে মানবাধিকারের পক্ষে কঠোর অবস্থান নেয়া গেলে আদৌ এমনটি ঘটানোর সুযোগ পেত না মিয়ানমার। নিরপেক্ষ থেকে এমন বন্ধুত্ব প্রদর্শনের হেতু কী বোঝা বড় কঠিন। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি। তেমনটি হলেও রোহিঙ্গারা চরম নিপীড়নের মুখে পড়তেন না। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পেরেছে এমনও হয়নি। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী মিয়ানমার নিজেদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার মুলাকে শক্তভাবে কাজে লাগিয়ে চীন রাশিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে চলেছে। ভারতকেও তাদের আঁচলের মধ্যে নিয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও ভুটানের মতো বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রকে অনেকটাই তাদের অনুকূলে রাখতে পেরেছে।

মানবাধিকারের কথা বললে সবাই দিশেহারা। চীন-রাশিয়ারও একই অবস্থা। দেশ দু’টি রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে। কিন্তু মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন ও ভালোবাসা এতটা বেশি যে ওই নিপীড়ন তাদের কাছে কোনো ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে না। এমনকি চীন-রাশিয়ার বন্ধুরাষ্ট্র বাংলাদেশের সমস্যাটাও তাদের কাছে তুচ্ছ।
পশ্চিমারা এখন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় মিয়ানমার নড়েচড়ে বসেছে। বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করার জন্য তারা যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে তারা বিষয়টি নিয়ে গাফিলতি দেখাচ্ছিল। তারা বিষয়টিকে হেলাফেলার পর্যায়ে নামিয়ে এনেছিল। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একধরনের সমঝোতা করে পরে বিবৃতিতে সেটার অনেক বিষয় পাল্টে দেয়। এমনকি কেন এমন উল্টোপাল্টা করেছে সে ব্যাপারে কোনো মতামত দেয়ার প্রয়োজনও বোধ করেনি। বরাবরের মতো সময়ক্ষেপণের নীতি নিয়েছিল তারা। কিন্তু এখন তারা তড়িত মতামত দিচ্ছে। এমনকি দ্রুত একটি চুক্তিও করে ফেলতে চায়। অবস্থার এমনতর পরিবর্তন চীন সচেতনতার সাথে লক্ষ করেছে। সর্বশেষ চীনও সমঝোতার একটা প্রস্তাব রেখেছে। যেমন গরজ আগে তারা দেখায়নি।

চুক্তির মধ্যে অস্পষ্টতা রেখে মিয়ানমার তার সুযোগ নিতে চায়। বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে জানা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সাক্ষী রেখে একটি পাকাপোক্ত চুক্তি করার নীতি নিয়েছে। মিয়ানমার ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায়। বাংলাদেশের দাবি সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের এককভাবে মিয়ানমার যাচাই করতে চায়। বাংলাদেশ চায় জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় দুই দেশ মিলেই পরিচয় যাচাইয়ের কাজটি করবে। সর্বশেষ সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়ার মাধ্যমে মিয়ানমার চেয়েছিল রাখাইনে তাদের আবার বসতি স্থাপনকে অসম্ভব করে তুলতে। এখন এরা চায় রোহিঙ্গাদের আলাদা ক্যাম্প করে রাখতে। এর বিপদটা বাংলাদেশ ও সহযোগী সবাই জানে। তাই তাদের প্রস্তাব যে গ্রাম থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে সেখানে তাদের আবার বাড়িঘর তৈরি করে দেয়া হোক।
মিয়ানমার একতরফাভাবে সমস্যাটি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করতে চায়। এর আগে তারা এমন একটি শর্ত আরোপ করতে চাচ্ছিল যে, এ ব্যাপারে তৃতীয় কোনো পক্ষের সাথে বাংলাদেশ আলোচনা করতে পারবে না। প্রত্যাবাসন নিয়ে সমঝোতার পর কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সহযোগিতা চাইতে পারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ ধরনের শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর বাংলাদেশের প্রতি কেমন ধৃষ্ট আচরণ করছে এগুলো তার প্রমাণ। তারা বাংলাদেশকে অনেকটাই যেন কাবু করে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। এমন আচরণের শিকার তারাই হয় যাদের কোনো বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক থাকে না।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহির বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। পাকিস্তান ও চীনের চেয়ে বাংলাদেশই বড় চ্যালেঞ্জ। গত বৃহস্পতিবার আসাম সফরে গিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবিষয়ক এক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ স্রেফ তথাকথিত বন্ধু, কেননা স্পষ্টত তারা অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভারতের অনেক ক্ষতি করেছে।’ ঠিক কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সফররত ভারতের অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যাপারে কী বলেছেন আমরা তা দেখে নিতে পারি।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে বলেন, ‘ভারতের নীতি হলো প্রতিবেশী প্রথম। আর প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম।’ তার আগে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফরে আসেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেই সময় তিনি এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক আজ সর্বোচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে। এবং অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণযোগ্য একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ আমরা দেখে নিতে পারি আমাদের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বন্ধুতার ব্যাপারে কী মন্তব্য করেছেন সেটাও। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে মোদি সুধী সমাবেশে বলেন, ‘উন্নতির জন্য বাংলাদেশকে শুধু পাশে নয়, সাথে নিয়ে চলব। সমস্যা মোকাবেলায় একসাথে লড়ব। আজ আমরা একসাথে চলি, কাল একসাথে দৌড়াব। দুই দেশের জন্য এক স্বপ্ন দেখি।’
আহিরের বক্তব্য সঠিক ধরে নিলে দেশটির পররাষ্ট্র, অর্থ ও প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্য ‘কৃত্রিমতা’ ছাড়া অন্য কিছু নয়। বাস্তবতা হচ্ছে দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চাইছেন তারা। অথচ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নয়, মিয়ানমারের নাগরিক। সেখানে বাংলাদেশীদের অনুপবেশের ধাপ্পাটি বিজেপির একটি রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এমন ধাপ্পা দিতে গিয়ে তারা বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টিও ভুলে যাচ্ছেন। ভারতের দায়িত্বশীল ব্যক্তি-শাসকদের বাংলাদেশের ব্যাপারে সঠিক নীতি কী সেটাও ধোঁয়াশা হিসেবে থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের একজন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব একটি পত্রিকার কাছে বলেছেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী দল ক্ষমতায় আছে। তাদের দেশে যেকোনো নিয়োগে আরএসএসের প্রভাব থাকে। উত্তর প্রদেশ তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। ভারতের মন্ত্রিসভা যদি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন না করে তবে ধরে নেবো যে, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত নয়, সরকারের মনোভাব। এমন হলে তা হবে খুবই দুঃখজনক।’ বাস্তবতা হচ্ছে, আহির যে বক্তব্য রেখেছেন এটা এবারই প্রথম নয়। দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক সময় বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়। আহিরের বক্তব্য ভারতের শাসকগোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এমন খবর দেখা যায়নি।

ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে দেখে। বিগত এক দশকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উত্তরণে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। এমন ছাড় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক সময় বাংলাদেশের নিজের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রতিবেশীর উপকার করতে গিয়ে তারপরও পিছপা হয়নি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় ভারতের যে উদারতা ও বন্ধুতা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল, সেটি কোনোভাবেই পাওয়া যায়নি। বিপদের সময় ভারত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেনি। অন্তত রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে আসার পর বিষয়টি সবার কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে। এই যখন ‘সর্বোচ্চ সম্পর্কের’ প্রকৃত অবস্থা, তখন ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে আরো হতাশ করলেন।
jjshim146@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/270652