২২ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৫৫

আবারও দখল হচ্ছে ঢাকার খাল

হাইকোর্টে জেলা প্রশাসকদের প্রতিবেদন

বার বার দখলমুক্ত করা হলেও আবারো অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে যাচ্ছে ঢাকার খালসূমহ। অবৈধ দখলদারদের ঠেকাতে এবার রাজধানীর খালসূমহ খনন করে বৃক্ষরোপণসহ ওয়াক-ওয়ে নির্মাণের সুপারিশ করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। হাইকোর্টে দাখিল করা জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহানগর জরিপে ঢাকার খালসূমহ অত্যন্ত সংকীর্ণভাবে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। নকশা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কোনো কোনো খালের প্রস্থ কোথাও কোথাও মাত্র পাঁচ ফিট এবং কোনো কোনো খালের মহানগর নকশায় হঠাত্ করেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সি.এস/এস.এ নকশা বিবেচনায় নিয়ে খালসূমহের অবৈধ দখল উচ্ছেদ পরিচালনা এবং আর.এস ও সিটি জরিপে ব্যক্তি নামে রেকর্ডভুক্ত জমি অধিগ্রহণ পূর্বক খালসূমহ খনন করা প্রয়োজন। এজন্য দরকার বৃহত্ প্রকল্প গ্রহণ করা।

অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অবকাঠামো ও জনবল সংকটের কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক মাসে জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত উচ্ছেদ কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায় যে, উচ্ছেদ চলাকালে বুলডোজার, ভেকু, চেইন-বুলডোজার এবং পর্যাপ্ত শ্রমিক প্রয়োজন। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেই। ফলে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিআইডব্লিউটিএ এর সহযোগিতার দরকার হয়। একইসাথে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করার পর পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে অবৈধ দখলদাররা পুনরায় সেই স্থানটি দখল করে নেয়। এজন্য অবৈধ দখল রোধে খালের দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণসহ ওয়াক-ওয়ে নির্মাণ জরুরি।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট তাপস কুমার বিশ্বাস ইত্তেফাককে বলেন, প্রতিবেদনটি হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে সরকারি খালসমূহ অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রশাসন পূর্ব থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ প্রতিপালন করে খাল দখলমুক্ত করতে কি ব্যবস্থা নিয়েছে সেটিও প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে জেলা প্রশাসন।

গত অক্টোবর মাসে একটি জাতীয় দৈনিকে “ঢাকার খালে ২৪৮ দখলদার” এবং “রূপনগর খাল নিয়ে কুিসত কর্মকাণ্ড” শীর্ষক শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর হাইকোর্ট এক আদেশে এসব খাল অবৈধ দখলমুক্ত করতে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এফিডেভিট আকারে দাখিলকৃত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্ছেদযোগ্য খালের তালিকা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বরাবর পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে খাল সংক্রান্ত মামলার তালিকাও দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২ নভেম্বর রাজধানীর কালুনগর-হাজারীবাগ খালের প্রায় ৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী (জিরানী) খালের উপর অবৈধ স্থাপনাসহ প্রায় ২১৮ জন অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

রূপনগর খাল নিয়ে প্রতিবেদন

রূপনগর খালটি দুটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে রূপনগর খাল (আরামবাগ খাল) এবং রূপনগর খাল (নিম্ন অংশ) নামে পরিচিত। খালটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকা ওয়াসা বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুর সার্কেলাধীন রূপনগর খালের নিম্নঅংশে দুয়ারীপাড়া মৌজার মহানগর ৭০১ নং দাগে প্রায় ৩০-৪০ ফুট প্রস্থ এবং ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যে সরেজমিনে দৃশ্যত খাল হিসেবে নির্ধারণ করা আছে। এর ধারাবাহিকতায় উত্তর অংশে ৩০-৪০ ফুট প্রস্থ ও ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যে আর.এস রেকর্ড মোতাবেক খাল থাকলেও মহানগর রেকর্ডে ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। যা সরেজমিনে ভরাটকৃত অবস্থায় রয়েছে।

 

http://www.ittefaq.com.bd/capital/2017/11/22/136759.html