২২ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:২৩

এবার গুপ্তহত্যায় মেতেছে উগ্রপন্থী রাখাইন মগেরা

কামাল হোসেন আজাদ ও শাহনেওয়াজ জিল্লু : বিধ্বস্ত আরাকানে এখনও রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের যেকোনভাবেই বিতাড়িত করতে চাচ্ছে সেদেশের সরকার ও স্থানীয় উগ্রপন্থী রাখাইন মগেরা। মগসেনাদের নির্যাতনের পাশাপাশি সমানতালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় উগ্রপন্থী রাখাইন ও মগবাসিন্দারা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতাড়নে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। তারা সেখানে প্রতিনিয়তই সহিংস অবস্থানে রয়েছে। কোন না কোনভাবেই থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের সহ্য করতে পারছে না। তাদের বিতাড়নে নানাবিধ কৌশল খাটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে রাখাইন উগ্রপন্থীরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের জ্বালানি সংগ্রহ, মাছ ধরা ক্ষেত খামারসহ আরোও নিত্যপ্রয়োজনীয় কর্মে বাধা দিয়ে আসছে। এরপরেও রোহিঙ্গারা সেখানে ধৈর্য্যধারণ করে অবস্থান করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সম্প্রতি রোহিঙ্গা যুবক কিশোরদের ধরে নিয়ে গিয়ে গোপনে হত্যা করা হচ্ছে। এভাবে উগ্রপন্থী রাখাইন মগেরা রাষ্ট্রীয় মদদে একের পর এক গুপ্ত হত্যায় মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ নভেম্বর রোববার মংডুতে নিখোঁজ ৩ রোহিঙ্গা কিশোরের মধ্যে ২ কিশোরের হাতপা বাঁধা গলিত লাশ সন্ধান মিলেছে। স্থানীয়রা লাশ দু’টি একটি খালের কিনারা হতে উদ্ধার করে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, সপ্তাহখানেক আগে মংডুর সিকদার পাড়া ও কাইন্দাপাড়া সংলগ্ন ছনবইন্যা এলাকার তিন কিশোর পাহাড়ে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তাদের সন্ধান পায়নি পরিবারের সদস্যরা। গেল রোববার স্থানীয় কিছু ব্যক্তি নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দু’টি লাশ দেখতে পেয়ে গ্রামে খবর দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লাশ দু’টো একই রশিতে পিছন দিক থেকে মোড়ান ও হাতপা বাঁধা ছিল। গায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। তাদের ধারণা, হাত-পা বাঁধার পর গলাকেটে তাদের হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা এসে লাশ দু’টি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে ৩য় কিশোরের এখনো কোন হদিস পায়নি বলে জানিয়েছে মংডুর কাইন্দাপাড়ার লোকজন।
স্বজনদের ধারণা, স্থানীয় রাখাইন গোষ্ঠীর উগ্রবাদীরা তাদের হত্যা করেছে। কেন না, রাখাইনরা রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র হয়রানি করছে। পান থেকে চুন খসতেই মারতে উদ্যত হয় রাখাইনরা। রোহিঙ্গারা জ্বালানি সংগ্রহ, মাছ শিকার, ক্ষেত খামার করলে তা রাখাইনরা সহ্য করতে পারছে না। রোহিঙ্গাদের হত্যা করাকে তারা মামুলি কাজ বলে মনে করে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ১৭ হাজার শিশু
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। এর মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে ১৭ হাজার শিশু। আর প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগছে। ইউনিসেফ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
বার্মার আরাকান থেকে পালিয়ে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ৬ লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আড়াই লাখের মতো শিশু। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু প্রতিনিয়ত অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। আর অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭ ভাগ, অর্থাৎ প্রায় ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। ইউনিসেফের কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম এতথ্যের সত্যতা নিশ্চত করেন।

http://www.dailysangram.com/post/308585