২১ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:৩২

বন্দরে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ, পরীক্ষা বাতিলে আলটিমেটাম

চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। গতকাল সোমবার সকালে নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে বন্দর ভবনের সামনে 'আমরা চট্টগ্রামবাসী'র ব্যানারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়। নিয়োগ বাতিল না করলে লাগাতার আন্দোলনেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে সমাবেশ থেকে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগকৃতদের ৭৫ শতাংশই নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের নিজ জেলা মাদারীপুরের বাসিন্দা। তাদের দাবি, নিয়োগপ্রাপ্ত ৯২ জনের মধ্যে ৯০ জনই মাদারীপুরের। চট্টগ্রামের সরকারি দলের নেতারাও অভিযোগ করছেন, এ নিয়োগ নিয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়েছে। গত রোববার সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রী অবশ্য বলেন, এবার ৮৫ জন নিয়োগ পেয়েছে, এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৪৫ ও অন্যান্য জেলা থেকে ৪০ জন। এদিকে সংসদে দুই এমপি চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদলের বিরুদ্ধে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী। গতকাল সংসদের বৈঠকে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে একথা বলেন তিনি।

বিকেল ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। মাগরিবের বিরতির পরে লস্কর পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফল নিয়ে মন্ত্রী দুই এমপির রোববারের বক্তব্যের জবাব দেন। সংসদে সেদিন মইনউদ্দীন খান বাদল পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে লস্কর নিয়োগ পরীক্ষার ফল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, লস্কর পদে ৯২ জনের মধ্যে মাত্র দুইজন চট্টগ্রামের আর ৯০ জন অন্য একটি জেলার। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, বন্দরে নিয়োগ হয় কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষ চাকরি পান না। ৯২ জন লস্করের ২ জন মাত্র চট্টগ্রামের। চট্টগ্রামের মানুষের দাবি, মেধা অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার। সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

জবাব দিতে গিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, তাদের এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। ৯২ জন নয়, লস্করের চাকরি দেওয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। এ ৮৫ জন চাকরির বিধান অনুযায়ী চাকরি পেয়েছেন। চাকরির বিধান অনুযায়ী ৪র্থ শ্রেণি ছাড়া অন্যান্য শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর একটি মৌখিক পরীক্ষা হয়। আর দুই পরীক্ষায় যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়, সেই অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয় তাদের। ৪র্থ শ্রেণির বেলায় শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে যারা ভালো করে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে যোগ্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কারণ লস্করের কাজটি একটি কায়িক শ্রমের। সেই সঙ্গে সব ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ ভাগ, নারী কোটা ১০ ভাগ, উপজাতি ৫ ভাগ, আনসার-ভিডিপি ৫ ভাগ, প্রতিবন্ধী ৫ ভাগ এবং জেলা কোটা ৪৫ ভাগ। এখানে চাকরি দেওয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। এ ৮৫ জনকে যদি জেলা কোটায় চাকরি দেওয়া হতো, আর চট্টগ্রাম জেলা কোটার কথা যদি আসে, তবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যেও কিন্তু চট্টগ্রামের কোনো কোটায় চাকরি পাওয়ার কথা নয়। এরপরও চট্টগ্রাম বন্দর যেহেতু চট্টগ্রামে অবস্থিত, এখানকার লোকজনের জমির ওপর তৈরি হয়েছে এ বন্দর, স্বাভাবিকভাবে তাদেরও একটি দাবি থাকে বিধায় চট্টগ্রামের এ বিষয়টি আমরা কোনো জেলা কোটায় ফেলিনি। তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৩ জন, কক্সবাজারের ৪ জন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ২ জন। বাকি জেলারও নাম উল্লেখ করেন মন্ত্রী। সাংসদ বাবলু কোনো সুপারিশ করেননি, তবে তার দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সুপারিশেও চাকরি দেওয়া হয়েছে।
'আমরা চট্টগ্রামবাসী'র প্রতিবাদ সমাবেশ
কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুরের সভাপতিত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, ভুক্তভোগী মইনউদ্দীন, সায়েদুর রহমান বাবু, মোহাম্মদ সেলিম ও মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমাজকর্মী, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ এবং বন্দরের লস্কর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের অভিভাবকরা।

নুরুল আজিম রনি বলেন, মন্ত্রী হয়তো মাদারীপুর জেলাকে বিভাগ আর চট্টগ্রাম বিভাগকে জেলা মনে করেছিলেন। এ বৈষম্যের কারণেই চট্টগ্রামের ছেলেরা নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতির কাছে হেরে গেছে। যার দায়ভার নিতে হবে মন্ত্রীকে। চট্টগ্রামের ছেলেরা জেলা কোটা অনুযায়ী যতটা চাকরির প্রাপ্য, ততটা চাকরিই যেন তাদের দেওয়া হয়। কোনো জেলার প্রতি বৈষম্য হোক, তা চাই না। তিনি এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে লস্কর পদসহ সব পদে লোক নেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে গত রোববার গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে কথা বলেছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, সরকারি কোনো নিয়োগ মনগড়া নিয়মে হয় না। প্রথমে জেলা কোটায়, পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ করা হয়। এবার ৮৫ জন নিয়োগ পেয়েছে, এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৪৫ জন ও অন্যান্য জেলা থেকে ৪০ জন। তিনি সমালোচকদের যৌক্তিক সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমালোচনা যৌক্তিক করলে সংশোধনের সুযোগ পাব। বিরোধের কারণে বা অজ্ঞতার কারণে সমালোচনা করলে বিরোধ বাড়বে।

 

http://samakal.com/whole-country/article/17111330