২১ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:২৯

'নিখোঁজে'র ১১ দিন পর ব্যবসায়ী করিম গ্রেফতার

৫ দিনের রিমান্ডে

গুলশান থেকে রহস্যজনক নিখোঁজের ১১ দিন পর ব্যবসায়ী তানভির ইয়াসিন করিমকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পুলিশ বলছে, তিনি নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা ও অর্থ সরবরাহে যুক্ত ছিলেন তিনি। গতকাল সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে চারজনের খোঁজ মিলেছে, যাদের তুলে নেওয়ার অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে একজন বাড়ি ফিরেছেন আর তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সিটিটিসির উপ-কমিশনার মুহিবুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, রোববার রাতে গুলশানের আজাদ মসজিদ এলাকা থেকে তানভির ইয়াসিন করিমকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখা, এসবি ও বগুড়া জেলা পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে এ অভিযান চালায় সিটিটিসি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অবস্থান করে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনায় জঙ্গি সাইফুল ইসলাম হোটেলের ভেতর আত্মঘাতী হয়। পরদিন এ বিষয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তে জানা যায়, গ্রেফতার তানভির ইয়াসিন করিম ও পলাতক আকরাম হোসেন খান নিলয় ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দু'জনই নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতা। করিম হিটম্যান ও জিন নামে দুটি ছদ্মনাম ব্যবহার করত।

তদন্তের বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানায়, তানভির ইয়াসিন করিম বিভিন্ন সময় জেএমবির কর্মকাণ্ডে অর্থ সরবরাহ করত। দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনাকারী আকরাম হোসেন খান নিলয়কে টাকা দেয় সে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি কার্যক্রমে অর্থায়নের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে করিম। পলাতক আকরাম হোসেন খান নিলয়ের বিষয়ে আরও তথ্য জানতে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর ভোরে গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৫১ নম্বর বাড়ি থেকে করিমকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই বাসার নিরাপত্তাকর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, একটি সাদা হাইএস মাইক্রোবাস ও পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে ৩০-৩৫ জন এসেছিলেন। তাদের মধ্যে ইউনিফর্ম পরা পুলিশ সদস্যও ছিলেন। তারা করিমকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। তবে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটকের কথা অস্বীকার করে।

করিম ইন্টারন্যাশনাল ও দারুস সালাম পাবলিকেশন্স নামের প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তানভির ইয়াসিন করিমের বইয়ের দোকান রয়েছে তেজগাঁওয়ের মণিপুরীপাড়ায়। বই প্রকাশের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন লেখকের বই আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

গত তিন মাসে শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ বেশ কয়েকজন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, নিখোঁজদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা চলছে। অচিরেই তাদের ফিরে পাওয়া যাবে। এরপর ১৬ নভেম্বর রাতে বাড়িতে ফেরেন ব্যবসায়ী ও বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কুমার রায়। গুলশান থেকে তুলে নেওয়ার পর ৮১ দিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তার দাবি, ১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি হস্তগত করতে ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষ তাকে অপহরণ করেছিল। এর আগে প্রায় তিন সপ্তাহ নিখোঁজ থাকা বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি মিঠুন চৌধুরী ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা আসিক ঘোষ অসিতকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি। এর মধ্যে মিঠুনের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

রহস্যজনক নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের এখনও সন্ধান মেলেনি। তারা হলেন- শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার, সাংবাদিক উৎপল দাস, ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত আহমেদ, শিক্ষার্থী ইশরাক আহমেদ ও কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান।

http://samakal.com/capital/article/17111331