২১ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৮:২৩

একের পর এক খুন

রাজধানীসহ সারা দেশে খুনের মচ্ছব চলছে। জোড়ায় জোড়ায় খুনের ঘটনা ঘটছে। ফ্ল্যাট বাড়ি, ঝোপজঙ্গল, খাল-বিল, খোলা মাঠ থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে লাশ। এর মধ্যে কিছু রয়েছে অজ্ঞাত। কারো কারো মাথা বা হাত-পা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন হচ্ছে এসব লাশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে এক ডজনের ওপরে খুন হয়েছে। এ দিকে একের পর এক খুনের ঘটনায় মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীতে এক মাদরাসাছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গুলিস্তানের আহাদ পুলিশ বক্স-সংলগ্ন মদিনাতুল মাদরাসা থেকে ভোরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ১২ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ জিদান। বাবার নাম হাফিজ উদ্দিন। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ঢালুরশেরি গ্রামে।
সাতক্ষীরার আশাশুনির কৈখালিতে সলেমান গাজী (৪০) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সকালে উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের কৈখালি গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বেড়িবাঁধের পাশ থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়।
নাটোর সদর উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামে রোববার রাতে নিজের মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আলম সর্দার নামে এক যুবক। এ সময় আলম নিজের বাবাকেও কুপিয়ে জখম করে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রাতে ফকিরপাড়া গ্রামের শাহাদৎ সর্দারের বাড়িতে হইচই শুনে গ্রামবাসী সেখানে যায়। এ সময় ওই বাড়িতে আলম সর্দারের ছেলে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষার্থী আলিফ সর্দার (১১) ও তার দাদী বিলকিস বেগমকে (৪৮) গলাকাটা অবস্থায় দেখতে পান। ঘটনার সময় আলমের বাবা সাহাদৎ সর্দার বাড়ির বাইরে ছিলেন। খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে ঢোকা মাত্র তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে নিজের ছেলে আলম সর্দার। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এ দিকে কুমিল্লা মহানগরীতে একটি ফ্লাট থেকে অজ্ঞাত (৩০) এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নগরীর নতুন চৌধুরী পাড়া এলাকার কবরস্থানসংলগ্ন সুমন ভিলা নামে একটি বাসার তৃতীয় তলার একটি ফ্লাট থেকে লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে।
এভাবেই একের পর এক ঘটছে খুনের ঘটনা। সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বনানীতে গত ১৫ নভেম্বর খুন হয়েছেন সিদ্দিক মুন্সি নামে এক ব্যবসায়ী। ৪ নম্বর রোডের নিজ অফিসে রাত ৮টায় দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে এসে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের আরো তিন কর্মচারী। চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।
গত ১ নভেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে তমা সেন্টারের গলিতে খুন হন শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওন। জনি নামে এক দুর্বৃত্ত মা-ছেলেকে হত্যা করে নির্বিঘেœ চলে যায়। গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকায় খুন হন নাসিম উদ্দিন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র। জুয়া খেলার প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়। রাজধানীর বাড্ডার ময়নারবাগের হোসেন মার্কেট এলাকার একটি বাসায় খুন হয়েছেন বাবা জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরত (৯)। পরকীয়ার টানে ঘর ছাড়তে জামিলের স্ত্রী এ খুনের ঘটনা ঘটায়।

গত ১২ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা মুন্সিপাড়া এলাকার লিচু বাগান থেকে অন্তর নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এভাবেই একের পর এক খুনের ঘটনায় অস্থির পুরো দেশ। সাধারণ মানুষের অনেকেই বলেছে, তারা এ খুনের ঘটনা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে গত ২৪ ঘণ্টায় লাশ উদ্ধার, জোড়া খুন, মাদরাসা থেকে ছাত্রের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের বিষয়টি চরম উদ্বিগ্নের বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন।
পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে দেশে খুনের ঘটনা ঘটে ২৬৩টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫০টি, মার্চে ২৯৭টি, এপ্রিলে ২৯৭টি, মে-তে ৩০৬টি, জুনে ৩৪৭টি, জুলাইয়ে ৩২৮টি, আগস্টে ৩২৪টি এবং সেপ্টেম্বরে খুনের ঘটনা ঘটে ২৯৭টি। সূত্র জানায়, বিগত মাসগুলোতে যে খুনের ঘটনা ঘটেছে তার চেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে চলতি মাসে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/270213