২০ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:৩২

ভারতের সহায়তায় আলোর মুখ দেখছে আশুগঞ্জ কনটেইনার বন্দর

সরকারের গচ্চা ৫৮৫ কোটি টাকা

বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ভারতের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন সহজ হবে

অবশেষে ‘আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীবন্দর’ আলোর মুখ দেখছে। কিন্তু নানা অজুহাতে ৬ বছর বাস্তবায়ন ঝুলে থাকায় এক লাফে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে ৫৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এজন্য মাত্র ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটি এখন ৮৩১ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ ৪৩১ কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। মূলত ভারত সরকারের আগ্রহের কারণেই প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট ও ট্রেড প্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে ভারতের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে কনটেইনারে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান চুক্তির আওতায় আশুগঞ্জকে ‘পোর্ট অব কল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশের ট্রাক/ট্রেইলার ভেসেল (বড় জাহাজ) হতে ভারতীয় কার্গো ট্রান্সশিপগুলো আশুগঞ্জ থেকে সীমান্ত পর্যন্ত পরিবহন করবে। এক্ষেত্রে আশুগঞ্জ ও কলকাতা নৌরুটের মাধ্যমে কনটেইনারগুলো ভেসেলের মাধ্যমে পরিবাহিত হবে এবং আশুগঞ্জ থেকে এসব কেনটেইনার ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে আগরতলা পর্যন্ত পণ্য পরিবহন সুবিধা পাবে।
প্রকল্পটি অনুমোদনে এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিআইডব্লিউটিএ। সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, নতুন উদ্যোগে বন্দরটির অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। ফলে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে কনটেইনার পরিচালনা আগের চেয়ে সহজ ও স্বস্তা হবে। কার্গো ট্রাফিকের প্রয়োজনে বহুমুখী আরসিসি জেটি ও ট্রানজিট শেড নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা উইং) মো. এনায়েত হোসেন যুগান্তরকে জানান, এ প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাছাড়া খাদ্য এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সে জমি পাওয়া যায়নি। এখন প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলে এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর কোনো সমস্যা নেই।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা দাবি করেন, সময় মতো গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের কয়েকশ’ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কেননা যদি ওই সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে এখন এত টাকা বেশি লাগত না। এডিপিতে এরকম অনেক প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যদি একান্তই প্রয়োজনীয় হয়, তাহলে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই সময়মতো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আর যদি বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে ইআরডির কর্মকর্তাদের নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের বোঝানো উচিত।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অধীন আশুগঞ্জ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অভ্যন্তরীণ কনটেইনার নদীবন্দর। এ বন্দরে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক জাহাজ আসে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কার্গো ও প্যাসেঞ্জার লোড ও আনলোড হয়ে থাকে। ২০০৪ সালে আশুগঞ্জকে বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আশুগঞ্জে কনটেইনার হ্যান্ডলিং সুবিধা বাড়লে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ অঞ্চলসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এ সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ভারতীয় ১ বিলিয়ন ডলারের প্রথম ঋণ (২০ কোটি ডলার অনুদান) থেকে বাস্তবায়নের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত ভারত অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে যায়। একপর্যায়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়নও স্থগিত হয়। পরে ভারত সরকারের সহায়তায় নিয়োগ পাওয়া ওয়াপকস পরামর্শক প্রাতিষ্ঠান প্রকল্পটির ওপর পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা করে। এ সমীক্ষার আলোকে ভারতীয় দ্বিতীয় ঋণ চুক্তির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর সম্প্রতি প্রকল্পটির ওপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রকল্পটির ডিজাইন ও সুপারভিশন কাজের জন্য ১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব। এ ব্যয়ের ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

 

https://www.jugantor.com/last-page/2017/11/20/173176