২০ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:৩০

ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়ছে হু হু করে

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ বাড়ছে

ভোগ্যপণ্যের আমদানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, কিন্তু গ্রাহকপর্যায়ে পণ্যের মূল্যে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভোগ্যপণ্যের আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপনের (এলসি খোলার হার) হার বেড়েছে আড়াই শ’ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। আর ইতোমধ্যে আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ১৮৭ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ঋণাত্মক ৩৫ শতাংশ। ভোগ্যপণ্য আমদানিতে দায় বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। মাস তিনেক আগে যেখানে গ্রাহকপর্যায়ে প্রতি ডলার পেতে ৮০ টাকা ব্যয় করতে হতো, এখন তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৮৩ টাকা।

জানা গেছে, কয়েক দফা আগাম বন্যার কারণে এবার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ধান চালের উৎপাদন কম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগাম বন্যায় এবার ধান উৎপাদন কম হয়েছে। যদিও বেসরকারি পর্যায়ে তা ২০ লাখ টনের ওপরে বলা হচ্ছে। তবে চাল উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরকারিপর্যায়ে এবার ১৫ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চার লাখ টন দেশে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চাল ও গম আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি খোলা) হয়েছে ১৫৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে চাল ও গম আমদানির জন্য এলসি খোলার হার বেড়েছে প্রায় ২৫১ শতাংশ। এ হার আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩ শতাংশ। আবার তিন মাসে ইতোমধ্যে চাল ও গম আমদানির জন্য দায় পরিশোধ করা হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৯ কোটি ডলার। তিন মাসে দায় পরিশোধ বেড়েছে ১৮৭ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ঋণাত্মক ৩৩ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ধান উৎপাদন কম হওয়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক হারে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাবদ বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে গেছে। ফলে চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর।
মাস তিনেক আগেও ব্যাংকিং খাতে প্রতি ডলার পেতে গ্রাহকদের ব্যয় করতে হয়েছে ৮০ টাকা। গত ১৬ নভেম্বরে ব্যাংকভেদে তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৮৩ টাকা। এ দিকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহে রয়েছে ঘাটতি। যেমনÑ রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না, কিন্তু সামগ্রিক আমদানি দায় বেড়ে গেছে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে হাত পাতছে। ব্যাংকাররা জানান, সামনে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যকার ঘাটতি আরো বেড়ে যেতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে আমদানির জন্য এলসি খোলা বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্য এখনো পাইপলাইনে রয়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা কম। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘাটতি মেটানোর জন্য উদ্যোগ না নিলে বৈদিশক মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা বেড়ে যেতে পারে।

এ দিকে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যাপক হারে বাড়লেও গ্রাহকপর্যায়ে মূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়ছে না। এখনো গ্রাহকপর্যায়ে বিশেষ করে মোটা চালের ক্রেতাদের কাছে চালের মূল্য নাগালের বাইরে রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে সরকারিপর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।


 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269907