২০ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:৩০

৩০০ কোটি টাকার সিডর প্রকল্পের ব্যয় ১৩ শ’ কোটি

শেল্টার নির্মাণ ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ২.৮৮ কোটি টাকা

২০০৭ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ স্মরণকালের দুর্যোগ সিডর আক্রান্ত হলেও ৯ বছরেও ভৌত কাজ শুরু হয়নি। অথচ প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রায় ৩০০ কোটি টাকার এ প্রকল্পের ব্যয় এখন এক হাজার ৩২৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থব্যয় হয়েছে ৭৩ দশমিক ২১ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্পের বাস্তবায়নের এ চিত্র। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের এ স্থবিরতার কারণে দাতাসংস্থা বিশ^ব্যাংক অর্থায়ন কমিয়েছে। যার কারণে এখন ব্যয় কমিয়ে আনা বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন, বিধ্বস্ত এলাকার অধিবাসীদের জীবনমানের পুনরুদ্ধার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাস ও ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বয়ে একটি জরিপ চালানো হয়। তাতে সিডরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা ধরা হয়। বিশ্বব্যাংক ওই জরিপের ভিত্তিতে দুর্গত এলাকায় পুনর্বাসনে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার সহায়তা প্রদান করে। ৯টি জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই অর্থ দিয়ে ৬টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ৭টি সংস্থার ৮ উপপ্রকল্পের সমন্বয়ে জরুরি ২০০৭ সাইক্লোন রিকভারি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়, যা ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়নে তখন নেয়া প্রকল্প ব্যয় ২৮৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়, যা ২০১৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার করার কথা ছিল। পরে চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে দাতাসংস্থা বিশ^ব্যাংক অর্থ সহায়তা বাড়ায়। ফলে ব্যয় বাড়িয়ে ৮৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। প্রকল্প সহায়তা আরো বৃদ্ধির আশ^াস পাওয়ায় ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা করা হয়। বিশ^ব্যাংক দেয়ার কথা ২৫ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ফের বাস্তবায়ন মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে প্রকল্প একনেক থেকে অনুমোদন দেয়া হলেও বিশ্বব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী পরামর্শক নিয়োগ করে জরিপ শেষে ডিজাইন, ড্রইং, ব্যয় প্রাক্কলন, দরপত্র দলিল প্রণয়ন, বিশ্বব্যাংকের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র প্রদান, দরপত্র প্রক্রিয়াকরণে আড়াই বছর লেগেছে। ফলে ২০১০ সালের জুনের আগে ভৌত কাজ শুরু করা যায়নি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৪২৮ কোটি ৯০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এখন প্রকল্পের অনুকূলে সম্ভাব্য সাহায্য কমে গেছে। দাতাসংস্থা দিচ্ছে ২০ কোটি ৫৬ লাখ ৬৪ হাজার ডলার। ফলে ব্যয় কমিয়ে আনা হলো।
প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৬০টি নতুন সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ৪৫৭টি বিদ্যমান শেল্টার সংস্কার করার কথা। সাইক্লোন শেল্টার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে ৩৬০ কিলোমিটার। কিল্লা নির্মাণ ৩০টি। দাতাসংস্থা টাকা কমিয়ে দেয়ায় পরে সব কিছু কমিয়ে আনা হয়। বলা হয়েছে, ২৫ কোটি ডলার থেকে এ সহায়তা ২০ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারে নেমে আসে। এখানে বাস্তবায়নে ব্যয় দেখানো হয়েছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত পরামর্শক খাতে ৬৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর প্রতিটি শেল্টার তৈরির জন্য ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সংস্কারের জন্য প্রতিটির পেছনে ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৬ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিটি কিল্লা নির্মাণ ব্যয় ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটার সংযোগ রাস্তা নির্মাণ ৮৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

এ দিকে এলজিইডি অংশের প্রকল্প পরিচালক বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশ^ব্যাংকের সাথে করা এক জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য পাঁচ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন। বিভিন্ন সংস্থা দুই হাজার ১৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। ২০০৭ সালের সিডরের পর আবার জরিপে বলা হয়, আরো দুই হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। পিডি বলেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯ হাজার ১৯৭টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে তিন হাজার ৩১৮টি সম্পূর্ণ কার্যকর আছে।

পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসির কারণে দাতাদের সহায়তা পাওয়া যায় না। দাতারা প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা দেখতে চায়। কিন্তু আমাদের এখানে প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সঠিক সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয় না। ফলে ব্যয় বেড়ে যায়। দাতারাও অর্থ ছাড়ে অনীহা দেখান। সিডর ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পটি গত আড়াই বছরেও শুরু করা যায়নি। এটা প্রকল্পের কর্মরতদের গাফিলতি বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269908