২০ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:২৬

সব যেন অরণ্যে রোদন

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর

নাগরিকদের স্বচ্ছন্দ বিধান করার লক্ষ্যে সমস্যামুক্ত করা যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব হয়ে থাকে, তবে আমাদের প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সফলতা দাবি করতে পারে না। প্রশাসন পরিচালিত হয়ে থাকে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নীতি অনুসরণ করেই। রাজনীতিকেরা প্রশাসনের শীর্ষে বসে নীতিনির্ধারণ করেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সে নীতির আলোকে কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে সাফল্য-ব্যর্থতার দায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। একে সামনে রেখে যদি হিসাব কষা হয়, তবে দেখা যাবে প্রশাসনের অসামর্থ্যতার পাল্লাই ভারী। অভিযোগ রয়েছে, এখন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের কাছে দক্ষ যোগ্য আমলাদের চেয়ে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্যের বিচারে উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র চলছে। অদক্ষ অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা ও রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের ভুলনীতির কারণেই সমস্যার পাল্লা দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে। এতে দেশের নাগরিকেরা নানা ভোগান্তিতে রয়েছে। আর এসব কিছুর গোড়ায় রয়েছে অদক্ষতা। দেশে এখনো এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যার লক্ষ্য হবে সব ছাপিয়ে মানুষের কল্যাণ। রাজনীতিকদের একটা অংশের লক্ষ্য কেবলই ক্ষমতা ও অর্থবিত্ত। সে দিকেই তাদের সর্বক্ষণের ধ্যান-জ্ঞান। অতীতে যারা রাজনীতি করেছেন শুধু জনগণকে নিয়েই, আজ তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে দেখা যায় না। এক শ্রেণীর রাজনীতিকদের উদাসীনতা এবং তাদের অদক্ষতার কারণে দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখানে গড়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে নির্বাহী বিভাগের প্রশাসন পরিচালনায় তাদের কর্তব্য কাজের এখন তদারকি নেই। যে বিভাগ তা করবে তথা আইন বিভাগ করবে, এটাই সংসদীয় ব্যবস্থার রেওয়াজ। কিন্তু সেই সংসদ এখন এককভাবে সরকারি দলের হয়ে আছে বলে, সরকারকে কারো কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। এটাই রাষ্ট্রযন্ত্রের এখনকার বড় একটি ত্রুটি। বর্তমানে বাংলাদেশে আরো সমস্যা হচ্ছে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা রয়েছে, অনেকে কারান্তরালে রয়েছেন। সরকার হয়তো মনে করছে, তাদের দমিয়ে রেখে নিজেদের বিপদমুক্ত করেছে; কিন্তু শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা প্রশাসনের একটি অন্যতম লক্ষ্য হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিপক্ষকে স্তব্ধ করে রাখলে শুদ্ধাচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ভুলত্রুটি, অন্যায়-অনিয়মের কারণে ভরে উঠবে সমাজ জীবন। আর এ অবস্থায় যারা ক্ষমতায় আসীন থাকে, তাদের প্রতি জনগণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে স্বাভাবিকভাবেই। প্রতিপক্ষ না থাকলে রাষ্ট্রে ভারসাম্যেরও ঘাটতি দেখা দেয়। আরশি ছাড়া যেমন চেহারা দেখার উপায় থাকে না, তেমনি প্রতিপক্ষ হচ্ছে সরকারের আরশি। সরকার দেখতে পাচ্ছে নাÑ তারা কেমন হয়ে উঠছে, কী তাদের অবয়ব। নিজেদের অবয়ব দেখতে পারছে না বিধায় ক্রমাগত ভুলের জালে জড়িয়ে পড়ছে ক্ষমতাসীনেরা।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের ওপর যে নজরদারির প্রয়োজন তাতে প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। এই অভিযোগ শুধু কথার নয়, তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। প্রশাসনের এই স্থবিরতার কারণেই জনদুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাবে এখন নানা সমস্যার জট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বিচার বিভাগকে বাধ্য হয়ে উদ্যোগী হতে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য প্রশাসনকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রশাসনের এই স্থবিরতা কোনো একটি বিষয়ে নয়, বহু বিষয়কে চিহ্নিত করে বিচার বিভাগ এই নির্দেশনা জারি করেছেন। অথচ এসব বিচার বিভাগের মুখ্য কাজ নয়। নির্বাহী বিভাগে উদাসীন ও অমনোযোগিতার জন্যই বিচার বিভাগকে এই পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে কতগুলো আদালত স্বতঃপ্রণোদিতভাবে, কতক বিজ্ঞ আইনজীবী আদালতের দৃষ্টিতে নিয়ে এসেছেন।

এসব সমস্যা জাতীয় সংবাদপত্রও বহুবার প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। সচিত্র প্রতিবেদন রচনা করে প্রকাশ করেছে, কিন্তু কিছুই হয়নি। অথচ এগুলো কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়। প্রায় সবগুলো জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়। জনবান্ধব কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষে এমন দৃষ্টি বুজে থাকা সম্ভব নয়। এখন সে বিষয়গুলোর কয়েকটি মাত্র নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
বিভিন্ন নদীর তীর দখলদারেরা দখল ও ভরাট করে। সেখানে স্থাপনা তৈরি করছে, বেআইনিভাবে নদী থেকে বালু তুলে নিয়ে বিক্রি করছে। এসব অপকর্মের ফলে দিন দিন নদী শীর্ণ হয়ে পড়ছে, নদীপ্রবাহের গতিপথ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নদীগুলোর অপমৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। দেশের এক স্থানে নয়, বিভিন্ন জায়গায় এমন নদী দখল, ভরাট ও বালু উত্তোলনের ঘটনা চলছে। আর এসব আপকর্মে জড়িত রয়েছে ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের চোখের সামনেই সব ঘটছে, কিন্তু কারো এ দিকে নজর নেই। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদী এর প্রাণ। কিন্তু এই দুর্বৃত্তদের কর্মকাণ্ডে যদি নদীগুলোর ক্ষতি হয়ে যায়, তবে দেশের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য ও প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে দেশের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। এই অবস্থায় যদি নদীগুলোকে গলাটিপে মেরে ফেলা হয়, তবে পরিবেশের কী ভয়াবহ বিপর্য ঘটবে তা বলে শেষ করা যাবে না। এক দিকে নদী দখল, নদীর পানি দূষণ অপর দিকে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। এসব অনিয়ম বেআইনি কাজ চলছে হরদম এবং প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে। ঢাকায় বসে রয়েছেন মন্ত্রী, আমলা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা। তাদের সামনেই রাজধানীকে ঘিরে থাকা নদীগুলোর তীর বেদখল হচ্ছে, দূষণের মাত্রা ভয়াবহ হচ্ছে। কিন্তু সবাই চোখ বুজে নীরবে বসে আছেন। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যাজুড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আদালত আদেশ দিয়েছেন। সেও অনেক আগের কথা, কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হতে দেখা যায়নি। আদালত তুরাগ নদীর তীর থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ, গাজীপুরের ৩৪০ পুকুর-জলাশয় পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই।
গত বর্ষায় কিছু বৃষ্টিতেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিলে সড়কের পাশের বেশ কিছু ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। যানবাহন এবং পথচারীদের চলাচলে দারুণ সমস্যা হয়েছে। যে ভবনে পানি প্রবেশ করেছে, সেখানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে যে বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে সেটাই বারবার প্রমাণ হচ্ছে। আগে ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে বহু খাল প্রবাহিত ছিল। এখন দখল হয়ে গেছে। সেখানে বিভিন্ন স্থাপনাসহ রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। আর তাতে নগরীতে পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়ে আছে। এসব খাল ভরাটের কাজ অতীতেও হয়েছে, এখনো এই দখলদারি চলছে। নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা এসব দখলদারির প্রতিবাদ করে আন্দোলন করছে। কিন্তু কারো চোখ খোলেনি। অথচ ২০-২৫ বছর আগে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে বৃষ্টিপাত কম হতো না। সে সময় কিন্তু এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না। নগরীর ভেতর খালগুলো বর্তমান থাকার কারণে দ্রুত পানি সরে যেত। এখন আর তা হয় না। এই সমস্যা উচ্চ আদালতের গোচরে আসে। রাজধানীর চারপাশে দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার এবং রক্ষায় আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন এসব নির্দেশনা আমলে নিয়ে সেভাবে কাজ করছে না। সব যেন অরণ্যে রোদন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও ফুটপাথ দখল করা হচ্ছে। সড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে বাজার বসানো হয়েছে। হকাররা তো বড় শহরগুলোর রাস্তার অর্ধেকজুড়েই দোকান বসিয়েছে। এভাবে রাস্তাগুলোয় দোকান বসানোর ফলে তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে, সাথে সাথে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে এবং তা ক্রমাগত বাড়বেই। কিন্তু রাস্তা তো চওড়া হচ্ছে না। এতে যানজটের যাতনা দুর্বিষহ হয়েছে। এমন যানজটের কারণে এর আরোহীদের অসংখ্য কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানবাহনগুলো অধিক সময় একই স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে বিপুল জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট এবং জ্বালানির অপচয় হলে তা কেবল ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতি নয়, জাতির বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিবিধান করার দায়িত্ব যাদের তারা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন কি না তা বোঝার উপায় নেই। সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এত বেড়েছে যে তা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হতে হয়। অথচ সড়কে নিরাপদে চলার জন্য রয়েছে ফুটপাথ। এখন এই ফুটপাথ শুধু হকারই দখল করেনি মোটরসাইকেল চলাচলের পথ হয়েছে। এর আরোহীরা যানজাট এড়ানোর জন্য ফুটপাথ দিয়ে চলাফেরা করে থাকে। এতে পথচারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখ পড়েছে। ফুটপাথ থেকে হকার সরানো ও পুনর্বাসন করাসহ ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এই আদেশ সাম্প্রতিক নয়, বহু আগেই তা দেয়া হয়েছে; কিন্তু কার্যকর হচ্ছে না।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি নগরীর সৌন্দর্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা নোংরা আবর্জনায় ভরা, যা মহানগরীর সৌন্দর্যের অন্তরায়। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন স্থানে রাস্তার ধারের দেয়ালে লিখন এবং পোস্টার সেঁটে এসব দেয়ালের সৌন্দর্য বিনষ্ট করা হচ্ছে। তা ছাড়া রাজপথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যানার টানিয়ে সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ ছাড়া ঢাকার বিভিন্ন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সচিত্র বিলবোর্ড স্থাপন করে নিজেদের প্রচার চালায়। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও এসব স্থাপনা তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছে; কিন্তু কে কার কথা শোনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব দেখেও কিছু বলে না ভয়ে। শহরের সৌন্দর্যের জন্য এসব হানিকর। এই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এসব কিছু সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ নিয়েছেন। কিন্তু এই নির্দেশ জারির আগে অবস্থা যেমন ছিল এখন তাই বহাল রয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য নিয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। রুচি ও সৌন্দর্যের প্রতি এমন অনীহা আসলে সবাইকে অবাক করে। ঢাকা মহানগরীর মানুষ অসুখী, হতাশ বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে। এখন হয়তো নগর কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করছেন এই শহর কবে নাগাদ নোংরা ও অসুন্দর বলে তকমা পাবে।

ফলমূলে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ, সব ধরনের বন্দরে পরীক্ষাগার স্থাপন করা, খাদ্যে ভেজাল রোধ, জীবন রক্ষায় মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের নির্দেশসহ আরো বহু বিষয়ে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এসব বিষয়ের তদারকি করা প্রশাসনের নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজ। তা ছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই বিষয়গুলোর দেখভালে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় আদালতকে এসংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করতে হয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ফলমূল কিনে খাওয়া কল্পনার ব্যাপার। সাধারণত অসুস্থদের জন্য মানুষ পথ্য হিসেবে তা কিনে নেয়। অসুস্থ প্রিয়জনদের জন্য কষ্ট করে কেনা এসব পথ্য উপকার হওয়ার চেয়ে ক্ষতির কারণই হয় বেশি। বিভিন্ন মহানগরী শহর বন্দরে লাখ লাখ মানুষ হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেয়ে থাকে। কিন্তু এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় যে খাবার পাওয়া যায় তার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ভেজাল ও নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে এসব খাদ্য তৈরি করা হয়, যা বিধিবিধানের বরখেলাপ। কিন্তু এসব খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে গাফিলতি হওয়ায় আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। অসুস্থ মানুষ রোগমুক্ত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ কিনে খেয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বহু ক্ষেত্রে বাজার থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ায় রোগ তো সারেই না, বরং বেড়ে যায় এবং জটিল হয়ে পড়ে। কেননা বাজারে এমন কিছু ওষুধ রয়েছে, যা ভেজাল ও নি¤œমানের। প্রশাসনের সম্মুখে এসব অন্যায় অনিয়ম চলার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত এমন আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই।
আদালতের স্বাভাবিক দায়িত্ব হচ্ছে বিচারকাজ পরিচালনা। কিন্তু উচ্চ আদালতে বিচারকের স্বল্পতার কারণে সেখানে মামলাজট সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত কাজ করার পরও যখন তাদের কাছে অনিয়ম তুলে ধরা হয়, তখন তার প্রতিবিধানের জন্য তারা নির্দেশ জারি করে থাকেন। আদালত যাতে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে তথা ত্বরিত ও সুষ্ঠুভাবে বিচারকার্য সমাধা করতে পারে। সেজন্য বিচারক স্বল্পতাজনিত সমস্যা সমাধানে নতুন বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে একাধিকবার বিষয়টি নির্বাহী বিভাগের দৃষ্টিতে নিয়ে এলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। উচ্চ আদালতের আরেক সমস্যার কথা শোনা গেছে। সেটা হচ্ছে বিচারকক্ষ বা এজলাসের স্বল্পতা। এজলাসেরই যদি কমতি থাকে তবে বিচারকেরা কোথায় বসে বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।

সমাজের যে অনিয়মের প্রতি আদালতের দৃষ্টি পড়েছে, এগুলোই সব নয়। আরো বহু অনিয়ম সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়গুলো নির্বাহী বিভাগের নজরে নিয়ে আসার কথা আইন বিভাগের সদস্য এমপিদের। কার্যপ্রণালী বিধিতে সংসদে এসব বিষয় তুলে ধরার বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এমপিরা সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বসহ নানা প্রস্তাব আকারে সংসদে আলোচনার জন্য উত্থাপন করতে পারেন। তা নিয়ে আলোচনা এবং মন্ত্রীদের কাছ থেকে জবাব পেতে পারেন। বস্তুত এভাবেই আইন বিভাগের সদস্য তথা জনপ্রতিনিধিদের কাছে নির্বাহী বিভাগ জবাবদিহি করে। সংসদের এসংক্রান্ত আলোচ্য বিষয়গুলো পত্রপত্রিকার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের গোচরে আসে, কিন্তু এখন সংসদ এই অবস্থায় নেই। যেহেতু এই সংসদের সদস্যরা সক্রিয় নন এবং সত্যিকার জনপ্রতিনিধি নন। তাই তারা এসব নিয়ে তেমন মাথাও ঘামান না। ফলে দেশ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269845