১৯ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১১:১৩

নদীপাড়ের মানুষ (৫)

প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে শিশুরা

চরের মানুষের কাছে শিক্ষা যেন এক অজানা-অচেনা কোনো বস্তু। কষ্ট, দুঃখ, দুর্ভোগের সঙ্গে বসবাস চরের মানুষের। জীবনযাত্রার মান নিম্ন পর্যায়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, শিক্ষকের অভাবের পাশাপাশি চরের মানুষের মধ্যে শিক্ষা সচেতনতা এখনো চাড়া দিয়ে ওঠেনি। শিক্ষার গুরুত্ব এখনো অনেক অভিভাবক বোঝে না। তাদের বোঝানোও হচ্ছে না।

কিছু এনজিও শিক্ষার নামে কিছু স্কুল চালু করলেও সেগুলো কেবল প্রকল্প দেখানোর জন্যই করা হয়েছে। বিশেষ কিছু দিনে চরের শিশুদের খাবারের লোভ দেখিয়ে হাজির করা হলেও ভিজিট শেষ হলে সেই শিশুদের তেমন কোনো খোঁজ রাখে না এনজিওগুলো। এদিকে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি এবং ধুনট উপজেলায় ছোট বড় পাঁচ শতাধিক চর আছে। এসব চরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৫০ এর নিচে। ৩-৪টি চরের জন্য গড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেগুলোতে বছরজুড়ে শিক্ষক স্বল্পতা লেগেই থাকে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এসব স্কুলে মাসে একবার গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে আসেন শিক্ষকরা এমন অভিযোগ অহরহ আছে চরের মানুষের কাছ থেকে। শিক্ষা উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় চরের শত শত শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাতে গোনা কিছু চরে প্রাথমিক শিক্ষার স্বল্প পরিসরে থাকলেও বেশির ভাগ চরেই নেই। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় চরের শিশু-কিশোররা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শ্রমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মেয়েদের কিশোরকালেই বিবাহ দিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের পক্ষ থেকে। যমুনার বুকে জেগে ওঠা কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের মানুষের বসবাস শুরু হয় অনেক আগে। পর্যায়ক্রমে গড়ে ওঠে আরো বেশ কিছু গ্রাম। মানুষও বাড়তে থাকে দিন দিন। এই ইউনিয়নে হাজারখানেক শিশুরবাস হলেও আজও সেখানে শিক্ষার আলো বিকশিত হয়নি। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক লোকজন খোঁজখবর না রাখায় শিক্ষাবঞ্চিত চরের বেশির ভাগ শিশু। জনসংখ্যার তুলনায় এখানে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। চরের সামান্য কিছু লোক লিখতে-পড়তে পারলেও বাকিরা সবাই অশিক্ষিত। সরজমিন দেখা গেছে, এসব চরের কয়েক হাজার শিশু বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্গম চরে যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক থাকার কারণে দূরের স্কুলে যেতে পারছে না শিশুরা। কিছু চরের মসজিদের ইমাম শিশুদের কায়দা, ছিপারা ও কোরআন শরিফ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন ব্যক্তি উদ্যোগে। স্থানীয় সাংবাদিক ইমরান হোসেন রুবেল জানান, দারিদ্র্যতা, অসচেতনতার এবং শিক্ষার ভালো পরিবেশ না থাকায় চরের শিশুরা বরাবরেই শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে। স্কুলে না গিয়ে এখানকার শিশুরা বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ, মাছ ধরার কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। চরের শিশুদের অবসার কাটে খেলাধুলা, নদীতে সাঁতার কেটে। কুতুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান জানান, যে বয়সে এসব শিশুর হাতে খাতা, কলম, বই শোভা পাওয়ার কথা ছিল চরের সেসব শিশুর সিংহভাগই এখনও স্কুলে যায় না। এসব বিষয় নিয়ে শিশুদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেলে তারা জানান, তাদের অনেকের ভিটেমাটি যমুনার গর্ভে চলে গেছে। তারা কোনোরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছে নদী তীরের বাঁধে। তাদের বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। জীবন-জীবিকা চলে কষ্টের ভিতর দিয়ে। প্রথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ করেছে সরকার সেই মেসেজটিও অনেকের কাছে অজানা। সব মিলে চরের এসব শিশুদের নিয়ে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন চরবাসী।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=92586