১৯ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ১০:৫০

ভাড়াটে খুনিরা বেপরোয়া

রাজধানীতে আবারো বেপরোয়া ভাড়াটে খুনিরা। আন্ডারওয়ার্ল্ডে আবারো তাদের চাহিদা তুঙ্গে। কাউকে হত্যা করতে এখন এই ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিকল্পিত যে খুনগুলো তার প্রায় প্রতিটিই ঘটছে ভাড়াটে খুনিদের দ্বারা। একাধিক সূত্র বলেছে, আগে ভাড়াটে খুনি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে তথ্য থাকত। এখন আর ওই রকম কোনো তথ্য নেই। ফলে কোনো খুনের ঘটনা ঘটলে দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও ধরা পড়ে না খুনিরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটেছে যার সাথে ভাড়াটে খুনিরা জড়িত। বনানীতে গত ১৫ নভেম্বর খুন হয়েছেন সিদ্দিক মুন্সি নামে এক ব্যবসায়ী। ৪ নম্বর রোডের নিজ অফিসে রাত ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাকে হত্যা করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে এসে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের আরো তিন কর্মচারী। চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এই খুনের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তারা বলেছেন, যারা খুন করেছে তারা ভাড়াটে খুনি এবং প্রশিক্ষিত। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এরা ঘটনা ঘটিয়ে চলে যায়। এই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাতে দেখা গেছে খুনিরা মুখোশ পরা।

গত ১ নভেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে তমা সেন্টারের গলিতে খুন হন শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাওন। জনি নামে এক দুর্বৃত্ত মা ও ছেলেকে হত্যা করে নির্বিঘেœ চলে যায়। নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী মুক্তার ভাই হলো জনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, জনি একজন পেশাদার কিলার। মা ও ছেলেকেই নয়, এর আগে সে ভাড়ায় অনেক খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জনিকে গ্রেফতার করেছে।
গত ৬ নভেম্বর রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায় খুন হন নাসিম উদ্দিন নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়পড়–য়া ছাত্র। জুয়াখেলার প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যা করা হয়। নাসিমের হত্যাকারীও একজন পেশাদার কিলার এবং সে ভাড়ায় খুন করে থাকে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
এর আগে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় খুন হন আরেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। সকালে ছিনতাইকারীদের ধরতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ দিতে হয় ওই ছাত্রকে।

রাজধানীর আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভাড়াটে কিলারদের আগে বেশ কদর থাকলেও ভয়ানক এই সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে রাজধানীবাসী ভুলতে বসেছিলেন। এক সময় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভাড়াটে খুনিদের ব্যবহার করত। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হতো এই ভাড়াটে খুনিরা। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের কাছে খবর থাকত কোন এলাকায় কোন ভাড়াটে খুনি রয়েছে। তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও খবর থাকত ভাড়াটে খুনিদের ব্যাপারে। কিন্তু অতি সম্প্রতি ভাড়াটে খুনিদের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য মিলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে। থানার নোটিশ বোর্ডে ভাড়াটে খুনিদের ছবি থাকে। তাদের তথ্যও থাকে থানাগুলোতে। কিন্তু রাজধানীর থানাগুলোতে যেসব ভাড়াটে খুনির ছবি ঝুলছে তা অতি পুরনো বলে জানা যায়। রাজধানীর কয়েকটি থানায় যোগাযোগ করে যে তথ্য পাওয়া যায় তা অনেক আগের। ওই সব সন্ত্রাসীর অনেকেই ইতোমধ্যে মারা গেছে। আবার অনেকের অনেক বয়স হয়েছে; যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিয়েছে অনেক আগে। কিন্তু তাদের ছবিও রয়েছে নোটিশ বোর্ডে। তাদের তালিকা দিয়েই এখনো চলছে রাজধানীর থানাগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেছেন, সন্ত্রাসীদের তালিকা হালনাগাদ যখন হয় তখন আগের তালিকা ধরেই নতুন তালিকা করা হয়। অতটা যাচাই-বাছাই করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে অনেক ভাড়াটে খুনি সৃষ্টি হয়েছে যাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্যই নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269668