১৮ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১০:৩০

ছোট হয়ে আসছে কাপ্তাই হ্রদ

দিন দিন ছোট হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। অবৈধভাবে পাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ এবং তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ ও রাজস্ব আয়ের জোগানদাতা এবং পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র এই জলাধারের আয়তন কমছে। পাশাপাশি দূষণের কবলে পড়েও কয়েক বছর ধরে হ্রদটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবিদরা। প্রশাসন অবশ্য বলছে, হ্রদ বাঁচাতে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল জলাধার বা হ্রদের সৃষ্টি হয়। এ হ্রদের পানি ব্যবহার করেই কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এখানে মাছ চাষ করেও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়। 'হাওয়া বদলের' জন্যও অনেকে বেছে নেন এই স্থানটিকে।

পানি কমে যাওয়ায় হ্রদের পাড় দখল করে বহুতল ভবনসহ ঘরবাড়ি, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা। ফলে একদিকে হ্রদের আকার ছোট হয়ে আসছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে আর সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন শহর। জেলা ও উপজেলায় হ্রদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা অসংখ্য স মিল, জেটিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল এবং হোটেল, রেস্তোরাঁসহ আবাসিক এলাকার নানা বর্জ্য গিয়ে পড়ছে হ্রদে। ফলে দূষিত হচ্ছে হ্রদের পানি।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙামাটি শহরের আসামবস্তির নারিকেল বাগান এলাকার রাস্তার পাশে হ্রদের পাড় দখলের পর মাটি ভরাট করে ঘর বানানো হচ্ছে। রাঙামাটি পৌরসভা এলাকায় আবাসিক হোটেলের জন্য হ্রদ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার, বনরূপা, কাঁঠালতলী, তবলছড়ি, পাবলিক হেলথ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে হ্রদের পাড় দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে একটি চক্র প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। এদিকে সৃষ্টির পর থেকে এ পর্যন্ত এই হ্রদে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পাহাড়ধস ও বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে বৃষ্টির সঙ্গে পলিমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। গত ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনায়ও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাপ্তাই হ্রদ।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের সাধারণ সম্পাদক হেফাজত বারী সবুজ বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে এ হ্রদকে রক্ষা করতেই হবে। এ জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এ হ্রদ ঘিরে অবৈধ কাজ হচ্ছে দাবি করে স্থানীয় সংগঠন হিমাওয়ান্টির নির্বাহী পরিচালক টুকু তালুকদার বলেন, সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে দখলদার উচ্ছেদ, অবৈধ মাটি কাটা রোধ এবং সেগুনবাগান তৈরি বন্ধ করে প্রাকৃতিক বন উন্নয়ন করা দরকার।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মাটি ভরাট করে উঁচু ঘর নির্মাণ, হ্রদের আশপাশে বাঁধ তৈরি করা, হ্রদের প্রতিটি পাহাড়ের খাদে বাঁধ দেওয়ার কারণে ছোট হয়ে আসছে কাপ্তাই হ্রদ। তিনি আরও বলেন, হ্রদের গভীরতা মাপতে ১০৯ মেইন সি লেভেল ধরে কাপ্তাই হ্রদ সার্ভে এবং হ্রদ ড্রেজিং করা প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, কাপ্তাই হ্রদ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। হ্রদটি বাঁচাতে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 

 

http://samakal.com/whole-country/article/17111134