১৮ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১০:১৪

চাল-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি পেঁয়াজে সুসংবাদ নেই

উত্তরের জেলাগুলোয় ধান কাটা শুরু হয়েছে। বাজারে আসছে নতুন চাল। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। খুচরা বাজারে চালের দাম এক সপ্তাহে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। সবজির দামও কিছুটা কমেছে। কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে সবধরনের সবজির দাম। ফার্মের মুরগির দাম কমেছে আগেই। তবে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া পেঁয়াজের বাজারে তেমন কোনো সুসংবাদ নেই। দেশী পেঁয়াজ এখনো ৭০ থেকে ৮০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বেগুন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, গাজর ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, নতুন আলু ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে বেশির ভাগ সবজির দাম ছিল ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের দাবি, চাল-ডালের মতো সবজির বাজারেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। যার কারণে সরবরাহ বৃদ্ধির পরও সবজির দাম আশানুরূপ কমছে না। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার আগে পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান বিক্রিতারা। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় এবং সরু চাল ৬০ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশী রসুন ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে এখন মোটা চালের দর প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। আর সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে মোটা চালের দাম এখন ৪২ থেকে ৪৬ টাকা। গত পাঁচ মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত কমেছে। যদিও এই দর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১৭ লাখ টন হলেও বর্তমানে সেখানে চাল আছে মাত্র ৪ লাখ ১৩ হাজার টন ও গম ১ লাখ ৫৯ হাজার টন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চাল ও গম মিলিয়ে এই সময়ে মজুদ কমপক্ষে ৮ লাখ টন থাকা উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই গত এক মাসে চালের আমদানি বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলায় আমন ধান কাটা চলছে। পাইকারি মোকামগুলোয় নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে। এতে দেশে চালের দামও কিছুটা কমেছে। যদিও চালের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসেনি। আর এ কারণে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশকে এখনো ‘অ্যালার্ট’ বা সতর্কবার্তার তালিকায় রেখেছে। খাদ্যের দাম, সহজলভ্যতা এবং মানের দিক থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে এখনো খারাপ বলে মনে করছে এফএও। চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত মে মাসে প্রথম এই সতর্কবার্তা দিয়েছিল এফএও। চলতি মাসেও তা বহাল রাখা হয়েছে। ১০ নভেম্বর এফএও ফুড প্রাইস অ্যান্ড মনিটরিং (এফপিএমএ) শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়।

কাওরান বাজারে গতকাল প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ পাইকারি ৬৫ টাকা এবং খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। অন্য দিকে আমদানি নির্ভর পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে কারওয়ান বাজারের মতো রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে খুচরা দরের চিত্র এক নয়। রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৮০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, দেশী নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম নেমে আসবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়। তবে এজন্য ক্রেতাদের আরো এক মাসের মতো অপেক্ষা করতে হবে।
এ দিকে দেশে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ লাখ ২৮ হাজার টন চালের উৎপাদন কম হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ। চলতি বছরের বোরো, আউশ ও আমন ধানের উৎপাদন হিসাব করে তারা এ তথ্য চূড়ান্ত করে। গত ৩০ অক্টোবর সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। মূলত দুই দফা বন্যায় ফসলের ক্ষতির কারণেই এই দাম বেড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আগাম বন্যার কারণে গত অর্থবছর দেশে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৩ হাজার টন কমেছে। তবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত জুন মাসে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, বন্যার কারণে শুধু বোরো মওসুমে চালের উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হবে। আর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ১২ লাখ টন ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৯ লাখ টন উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানানো হয়। দেশের চালকল মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়, চালের উৎপাদন এবার ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন কম হয়েছে। এ কারণে বাজারে চালের সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269324