১৮ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১০:১৩

ধরপাকড় চলছে

দেশজুড়ে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে জোর অভিযান চলছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও থেকে গ্রেফতার হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নেতাকর্মীরা। তল্লাশি চালানো হচ্ছে বাড়ি বাড়ি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই অভিযানে নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন বাসাবাড়িতে থাকতে পারছেন না। এক মাস ধরেই চলছে গ্রেফতার অভিযান। এ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা এবং আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

গতকাল দুপুরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পল্টন থানার ওসি মো: মাহমুদুল হক বলেছেন, পল্টন থানার দুই মামলায় গ্রেফতারের পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছাত্রদল নেতা আকরাম। অন্যান্য থানায়ও তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আকরামের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চলমান ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী তরুণ নেতৃত্বকে ধ্বংস করতেই সরকার ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করছে, আর তারই শিকার আকরাম। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রদলের এ শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিলেটের জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দীনকে আগের রাতে পল্টন থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনের ভিআইপি টাওয়ারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাবেক শিবির নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দীন সিলেট মহানগরী জামায়াতের আইনবিষয়ক সম্পাদক। তবে পল্টন থানা পুলিশ বলেছে, সিলেটের শাহপরান থানার তথ্যের ভিত্তিতে জিয়াউদ্দীনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে দু’টিতে তার সাজা হয়েছে বলে পল্টন থানা পুলিশ জানায়।

এর আগে ঢাকায় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে অনেককে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া নতুন করে মামলা হয়েছে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদল সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা জামাল রিয়াদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম রাহিমী, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ভিপি হানিফ, সাবেক কমিশনার আব্দুল মজিদ, রমনা থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হক মাসুম, যুবদল নেতা শাহীন, টুটুল ও কাকনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। ওই সময় শ্রমিক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজাকে গ্রেফতার করে কদমতলী থানা পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহসভাপতি আতিক উল্লাহ আতিক, ছাত্রদলের সহসভাপতি জাকির হোসেন মিন্টু, আশরাফুর রহমান বাবু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির সহসভাপতি মো: শুক্কুর আলী, দক্ষিণখান থানা বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক এস এম ইমরান হোসেন, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন, দক্ষিণ খান থানা বিএনপি নেতা হাজী আশরাফ উদ্দিন, যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের, শাহবাগ থানা বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন ভূঁইয়া, শ্যামপুর থানা বিএনপি সহসভাপতি মাইনুল ইসলাম মুক্তার, আদাবর থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান দীপ্তি, ছাত্রদল নেতা রবিউল ইসলাম রবি, ইয়াসির আরাফাত লিয়ন, চকবাজার থানা ছাত্রদল নেতা ইমরান খান, ঢাকা কলেজ ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, কামরুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদল নেতা রুবেল, আল আমিন, ইব্রাহিম, ওয়ারী থানা ছাত্রদল নেতা মো: রাব্বী, মো: রাসেল, নোয়াখালী জেলা ছাত্রদল নেতা মো: আবুল হাসান, রমনা থানা শ্রমিক দল নেতা মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দল নেতা হাবিব উল্লাহ মাহবুব, নিজাম উদ্দিন এবং ক্রীড়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হোসেন, গেণ্ডারিয়া থানা বিএনপি নেতা বাবলু, বাসেদ, পল্টন থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি নাছির, শাজাহানপুর থানা যুবদল নেতা নাছিম, মো: সেলিম, পল্টন থানা যুবদল নেতা মাসুদ হোসেন, খিলগাঁও ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা বেলায়েত হোসেন, সবুজবাগ থানা বিএনপি নেতা লিটন খান, কামরুজ্জামান উৎপল, কলাবাগান বিএনপি নেতা নিজাম, মিজু, বিমানবন্দর থানা যুবদল নেতা বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া, মান্ডা ইউনিয়ন যুবদল নেতা নবী হোসেন, সূত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা কাজী সালেহ উদ্দিন, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদল নেতা আমির হোসেন, শ্যামপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা রহমত উল্লাহ ও তার ভাতিজা ফয়সাল, যুবদল নেতা মানিক দত্ত, মজিবুর রহমান আনুর ছোট ভাই মুনির ও যুবদল নেতা ভিপি হানিফের ছোট ভাইকে।

নেতাকর্মীরা বলেছেন, প্রতি রাতে পুলিশ পালা করে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে। নেতাকর্মীদের কাউকে পেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, গ্রেফতার হলে সমস্যা নেই। কিন্তু গ্রেফতারের পর পুলিশ অহেতুক একের পর এক মামলা দেয়। অসংখ্য নেতাকর্মী এভাবে অকারণে ডজনে ডজন মামলার আসামি হয়েছেন।
এ দিকে মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নজির নেই।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269325