১৮ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১০:১৩

সীমানা পুনর্বিন্যাস জটিলতায় ইসি

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস আইনে পরিবর্তন আনতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান আইনে জনসংখ্যা ও প্রশাসনিক অখণ্ডতা বজায় রেখে আসনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংশোধিত আইনে উপজেলার অখণ্ডতা, ভোটার সংখ্যা এবং আয়তন যোগ করেও আসন ভাগাভাগিতে সমন্বয় আনতে পারছে না সীমানা সংক্রান্ত আইনের সাব-কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব (আইন) মো: শাহজাহান বলেন, সীমানা পুনর্বিন্যাস আইনটি যুগোপযোগী করতে হবে, এ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ নেই। তবে কাজটি করতে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ উপজেলার অখণ্ডতা, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা এবং আয়তন সব কিছু আমলে নেয়ার পরও ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম শহরের আসন বেড়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই মফস্বলের আসন কমে আসবে। তাই সীমানা বিন্যাস আইনের প্রথম সভাটি করার পর এ ধরনের জটিলতা সামনে চলে আসায় ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও উপজেলার ভোটার সংখ্যার তথ্য চেয়ে এনআইডিকে চিঠি দিয়েছি। তাদের পাঠানো তথ্য যাচাই-বাছাই করে নতুন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটা করা হচ্ছে না। পরবর্তী কমিশনারদের কাজের সুবিধার্থে এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তাই বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা বণ্টন হলেও তা হবে সীমিত আকারে বিদ্যমান আইনের আলোকে।
ইসি সূত্র জানায়, ১৯৭৬ সালে সামরিক ফরমান জারি করে সীমানা বিন্যাস আইন প্রবর্তন করা হয়। তৎকালীন সরকারের প্রণীত আইনের আলোকে ২৯৭টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনেছে আগের কমিশনগুলো। এর আগে ২০১১ সালে সাবেক শামসুল হুদা কমিশন এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া প্রস্তুত করেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদপূর্ণ করা কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন পুরনো আইনের আলোকে সীমিত কয়েকটি আসনে পরিবর্তন এনে তাদের দায়িত্ব শেষ করে।
খান মো: নুরুল হুদা কমিশন নির্বাচনী আইনের সংস্কার আনতে সংলাপের পাশাপাশি সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস আইনটি নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। প্রথমে কমিশন একটি খসড়া প্রস্তুত করে আইন বিশেষজ্ঞ দিয়ে তা সব যাচাইবাছাই করে গত ১৬ অক্টোবর ওই বিশেষজ্ঞ কমিশন প্রস্তাবনাটি কমিশনে হস্তান্তর করে। এর পর নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন আইন সংস্কার কমিটি আরেক দফা পর্যালোচনা করে ইসির যুগ্মসচিব আইনকে আহ্বায়ক করে আরেকটি সাব-কমিটি গঠন করে তাদের অধীনে এটি চূড়ান্ত বিশ্লেষণের জন্য দায়িত্ব অর্পণ করে। গঠিত কমিটি গত বুধবার তাদের প্রথম বৈঠকে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায়। পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং সর্বোপরি একটি আসনের মোট ভোটার কত তার সঠিক তথ্য যাচাই করা। এর জন্য এনআইডির কাছে ইউনিটভিত্তিক ভোটার তালিকার তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায়।
এনআইডির পাঠানো তথ্য নিয়ে আসনওয়ারি মোট ভোটার এবং আদমশুমারি অনুযায়ী জেলাওয়ারি জনসংখ্যা সমন্বয় করে নতুন সীমানা বিন্যাস আইনের খসড়া চূড়ান্ত করবে এই কমিটি। কারণ জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা ও আয়তন বিবেচনায় নেয়ার পরও বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের আসন অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
এর আগে ২০০৮ সালে শামসুল হুদা কমিশন ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩৩টিতে ব্যাপক ভাঙচুর করার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের জেলায় আটটি আসন কমার ফলে ঢাকায় আসন বেড়ে যায়। নতুন প্রণয়ন করতে যাওয়া আইনের ক্ষেত্রেও পুরনো চিত্রই বহাল থাকবে; এ কারণে আইনে কোনো পদ্ধতি সংযোজিত হলে শহর-গ্রামের আসনে অসমতা থাকবে না, এ নিয়েই মূলত সমস্যায় পড়েছে কমিশন। কমিটির লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে সংসদীয় আসনে একটি ভারসম্য বজায় রাখা।

ইসির একটি কমিটির সদস্যদের মতে, আইনের পরিবর্তন এনে সীমানা বিন্যাস করা হলেও অতীতের মতো গ্রামের আসন আরো কমবে। তাই আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করতে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা ও আসনওয়ারি ভোটার সংখ্যার তথ্য-উপাত্ত চেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগকে (এনআইডি) চিঠি দিয়েছে সাব-কমিটি। এই তথ্য পাওয়ার পর সব কিছুর বিচার-বিশ্লেষণ শেষে নতুন সীমানা আইনের খসড়া চূড়ান্তের পর তা আইনে পরিণত করতে সরকারের কাছে পাঠাবে কমিশন। ফলে পুরনো সীমানা আইনের আলোকে আসন বিন্যাস করা হলেও তা হবে সীমিত পরিসরে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269326