১৭ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৭

দুই কোটি টাকা চেয়েছিলেন পুলিশের এক কর্মকর্তা!

মানিকগঞ্জে জুয়েলার্সে ডাকাতি

জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা কিছুদিন আগে মানিকগঞ্জের সোনা ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলেন, অবৈধ সোনার ব্যবসাসহ নানা কারণে তাঁদের সামনে বিপদ।
আর সেই বিপদ কাটাতে গেলে ওই পরিমাণ টাকা দিতে হবে। এ ঘটনার কয়েক দিনের ব্যবধানে বুধবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ শহরের স্বর্ণকারপট্টিতে নাগ জুয়েলার্সে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।
মানিকগঞ্জ স্বর্ণশিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়, পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদা দাবির পর থেকেই ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন স্বর্ণকারপট্টির ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে এই ডাকাতির ঘটনা তাঁদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তাঁরা বলেছেন, খোদ পুলিশের পক্ষ থেকে এমন চাঁদা দাবির বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছিলেন না। এবার ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নাগ জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ ডাকাতির পর অস্তিত্ব রক্ষার্থে তাঁরা সরব হয়েছেন। ভয় কাটিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে পুরো বিষয়টি মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
মানিকগঞ্জ স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ কর্মকার গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানিকগঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা কিছুদিন আগে মোবাইল ফোনে তাঁদের ডেকে নিয়ে যান।
নিজের অফিসে বসেই তিনি কথা বলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে।

ওই সময় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা ব্যবসায়ী নেতাদের বলেন, ‘আপনারা অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা করছেন। ডাকাতি ও চুরির স্বর্ণ কিনছেন। স্বর্ণালঙ্কার তৈরিতে অবৈধভাবে এসিড ব্যবহার করছেন। আবার ভারতীয় কারিগর এনে অলংকার বানাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে। আপনাদের সামনে বিপদ। বিপদ কাটাতে হলে দুই কোটি টাকা লাগবে। ’
স্বর্ণশিল্পী সমিতির ওই দুই নেতা বলেন, ‘অর্থ দেওয়া সম্ভব নয় জানিয়ে আমরা ফিরে আসি। পরদিন আবারও ডেকে পাঠানো হয় আমাদের দুজনকে। এবার হুমকি দিয়ে আমাদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। ’ সভাপতি আতাউর রহমানকে উদ্দেশ করে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি সাততলা বিল্ডিং করলেন কিভাবে?’
এ দফায় অবশ্য এক কোটি থেকে ৭০ লাখ টাকায় নেমে আসেন ওই দুই কর্মকর্তা। সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানানো হবে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী নেতারা ফিরে আসেন। পরে মিটিং ডেকে তাঁরা অন্য সদস্যদের বিষয়টি জানান। কিন্তু বেশির ভাগ সদস্যই এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন।

গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদা দাবিসংক্রান্ত খবরটি আমার কানেও এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। দায়ী সে যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
ডাকাতদের শনাক্ত করার দাবি : মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেছেন, নাগ জুয়েলার্সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে একজন ধরা পড়েছে। আর পরিত্যক্ত অবস্থায় এক ভরির মতো স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘নাগ জুয়েলার্সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্য। এদের একজন নেতা আছে। এই নেতাই বিভিন্ন জেলা থেকে সদস্য সংগ্রহ করে। এই দলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। এই দলের কয়েকজন এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারাও গেছে। ’
মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা ডাকাতির আগে রেকি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগের দিন সন্দেহভাজন একজন মহিলা ও দুজন পুরুষকে নাগ জুয়েলার্সসহ স্বর্ণকারপট্টির ছবি তুলতে দেখা গেছে। পুলিশ পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তারা কার্ড দেখিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়। ’ তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্বর্ণকারপট্টি এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তা থেকে আরো তথ্য মিলবে বলে আশা করছি। ’
এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, ‘কী পরিমাণ স্বর্ণ ডাকাতি হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নাগ জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ ৬০০-৭০০ ভরির কথা উল্লেখ করে মামলা করেছে। ’ আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আটক মাইক্রোবাসটির মালিক একজন নারী। তার বিষয়েও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

দোকান বন্ধ করে ডাকাতির প্রতিবাদ : এদিকে ডাকাতির প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে স্বর্ণকারপট্টির সব দোকান বন্ধ রাখা হয়। সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা দল বেঁধে রাস্তায় অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছি। ’ কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন পুলিশ টহল থাকলেও ডাকাতির সময় রাস্তায় পুলিশ ছিল না। আবার ওই সময়টাতেই বিদ্যুৎও চলে যায়। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখার দাবি জানাচ্ছি। ’

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/11/17/566601