১৭ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:৪৩

রয়টার্সের রিপোর্ট

মিয়ানমারে সামরিক অভিযান বন্ধের প্রস্তাব পাস জাতিসংঘে

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অপারেশনের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে। এতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরাঁর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে মিয়ানমার বিষয়ে একজন স্পেশাল দূত নিয়োগ দেয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোটাভুটি হয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি কমিটিতে। এ কমিটি থার্ড কমিটি নামে পরিচিত। এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১৩৫টি।
বিপক্ষে ১০ টি। ভোটদানে বিরত থাকে ২৬ জন সদস্য। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো অপারেশনসে রাখাইনে বসবাসকারী রোঙিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমিকভাবে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এই অভিযান বন্ধ করেতে হবে। এ প্রস্তাবটি গত বছর প্রত্যাহার করা হয়। কারণ, ওই সময়ে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছিল। এখানে উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই থার্ড কমিটি মানবাধিকার ইস্যুর ওপর গুরুত্বারোপ করে বা দৃষ্টি রাখে। গত বছর বাদে ১৫ বছর যাবত এই কমিটি বার্ষিক ভিত্তিতে মিয়ানমারের মানবাধিকার রেকর্ডের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করে আসছে। কিন্তু গত বছর সেখানে অং সান সুচির অধীনে মানবাধিকারের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এ বিষয়ের খসড়া প্রস্তাব আর সামনে তুলে ধরে নি। কিন্তু এবার পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত বছরের স্থগিত খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। রয়টার্স আরো লিখেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাসে কমপক্ষে ৬ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা গত ২৫ শে আগস্ট পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর হামলার পর প্রতিশোধমুলক অভিযান চালায় সেনারা। এত বিপুল পরিমাণ মানুষ দেশ ছেড়ে আসার ফলে জাতিসংঘে এ বিষয়ক একটি নতুন খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি। এ প্রস্তাবটি এখন আগামী মাসে ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হবে। এই প্রস্তাবের ফলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরো জোরালো হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো আইনগত পরিণতি ভোগ করতে হবে না। উল্লেখ্য, সোমবার ধর্ষণ, গণহত্যা সহ নিজেদের বিরুদ্ধে আনীত সব রকম অভিযোগ অস্বীকার করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রাখাইনে সামরিক অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেনারেলকে বদলি করার দু’একদিনের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। ওদিকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা জাতি নিধনের প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তবে জাতি নিধনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার। জাতিসংঘের একটি প্যানেলকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না মিয়ানমার। এই প্যানেলের কাজ হলো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে সেনাবাহিনীর একটি অভিযানের পরই এ প্যানেল তাদের কাজ শুরু করেছিল।
বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে থার্ড কমিটি তাতে মিয়ানমারে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পূর্ণমাত্রায় মানবিক সহায়তা শুরু করার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করে মিয়ানমার। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেরকে দেখে থাকে বাংলাদেশী হিসেবে। তারা মনে করে, রোহিঙ্গারা হলো অবৈধভাবে মিয়ানমারে বসবাসকারী বাঙালি। ওদিকে গত সপ্তাহে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার সরকারের কাছে আহ্বান জানায় রাখাইনে অতি মাত্রায় আর কোনো সামরিক শক্তির ব্যবহার না করতে। ওদিকে মিয়ানমারে ব্যাপক গণধর্ষণ হয়েছে বলে সেখানকার সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যৌন সহিংসতা বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত প্রামিলা প্যাটেনের অভিযোগ যেন তাতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। প্রামিলা প্যাটেন বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যৌন সহিংসতা ঘটিয়েছে। তারা এ ঘটনা ঘটতে সহায়তা করেছে এবং নিজেরা তা ঘটিয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=92362