১৭ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:২৩

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তি

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই নয়

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই নয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারের ফলে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে আশ্রয় দেয়ার জন্য একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই চরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া আপাতত ঠিক হবে না। এ ধরনের কোনো প্রকল্প না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও। তিনি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগটি এখন বাদ দেয়া যথাযথ হবে। এ কাজটি এই মওসুমে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের বাসস্থান নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি সমন্বিত বৃহৎ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণ শুরুর জন্য চলতি বাজেট থেকে জরুরি বরাদ্দ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এই বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। এতে অর্থমন্ত্রী এ খাতে অর্থ বরাদ্দ না দেয়ার ব্যাপারে একটি নোট লিখেন। সারসংেেপ তিনি লিখেছেন, ‘এই উদ্যোগটি এখন বাদ দেয়া যথাযথ হবে। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপর এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেখানে ভাসানচরে তাদের জন্য চিরস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কোনো ইঙ্গিতই দেয়া উচিত নয়। এ কাজটি এই মওসুমে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। সুতরাং এ জন্য কোনো বরাদ্দ আপাতত দেয়া যাবে না।’ সারসংপেটি অর্থমন্ত্রীর কাছে ৬ নভেম্বর পাঠানো হয়।

সারসংেেপ বলা হয়, ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা ও সামরিক সচিব, নৌবাহিনী প্রধান এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ (বাজেট-১) উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল ভাসানচর পরিদর্শন করে। এতে দেখা যায়, দ্বীপটি সমুদ্র তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় ভরা মওসুমে জোয়ারের পানিতে এর বেশির ভাগ এলাকা নিমজ্জিত থাকে। ফলে বছরের চার-পাঁচ মাস (নভেম্বর থেকে মার্চ) ওই অঞ্চলে উন্নয়নকাজ করা সম্ভব হবে না। দ্বীপটি ঘিরে পরিপূর্ণ মাস্টার প্ল্যান তৈরির জন্য এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞ ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে দ্বীপটিতে ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাসস্থান সুবিধা, সুপেয় পানি, পয়ঃব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, পুকুর খনন, স্কুল, মসজিদ, অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন, সাইকোন শেল্টার স্টেশন ও দু’টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এরই মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সাময়িক বসবাসের জন্য ১৩ হাজার একর খাসজমি চিহ্নিত করে বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। এতে একটি হেলিপ্যাড, কিছু টয়লেট, ৪টি শেড ও সীমিত পরিসরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

সারসংেেপ আরো বলা হয়, মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন, কর্মসূচি ও আর্থিক প্ল্যান প্রাক্কলন প্রস্তুত করা সময়সাপে এবং এতে বেশ বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন। তাই প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কার্যক্রম দ্রুততার সাথে শুরু করার জন্য নভেম্বর মাসে শুষ্ক মওসুমে নৌবাহিনীর ফরওয়ার্ড বেজ বা নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করার কথা। এ জন্য নৌবাহিনীর বাজেট থেকে অথবা অন্য কোনো সুবিধাজনক খাত থেকে ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ নৌবাহিনীর নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাথমিক কাজ শুরুর জন্য অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করে। তবে অর্থমন্ত্রী আপাতত প্রকল্প বাস্তবায়নের পপাতী নন। তিনি পরবর্তী কোনো মওসুমে এ কাজ শুরু করার পক্ষে

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/269136