১৭ নভেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১০:১৬

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে জোর তাগিদ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে মিয়ানমারকে জোর তাগিদ দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। আইসল্যান্ডের কূটনীতিক ইনার গুনারসনের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক ফোরাম থার্ড কমিটির ৪৭তম বৈঠকে আলোচনা শেষে সদস্য দেশগুলোর ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, নাগরিকত্ব প্রদান, অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করাসহ মিয়ানমারের প্রতি ১৬টি সুনির্দিষ্ট আহ্বান জানানো হয়েছে। ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে প্রস্তাবটি এনেছিল মিসর। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৩৫টি। চীন, রাশিয়াসহ মোট ১০টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। অন্যদিকে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ মোট ২৬টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত দুই মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব আনার চেষ্টা চালানো হলেও চীন ও রাশিয়ার মতো ‘ভেটো’ ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি। গতকাল ওই দুটি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলেও ব্যাপক সমর্থন নিয়ে তা গৃহীত হয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে প্রবল বৈশ্বিক চাপে পড়ল মিয়ানমার।
জাতিসংঘে সৌদি আরবের প্রতিনিধি গতকাল থার্ড কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে।
তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা হচ্ছে। তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। মিয়ানমারে বিশেষ করে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় ওআইসি গভীর উদ্বিগ্ন।
মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি ওই প্রস্তাবকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপূর্ণ এবং তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি প্রস্তাবটিকে মিয়ানমারের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানবাধিকারের নামে হস্তক্ষেপ তাঁরা মেনে নেবেন না। ওই প্রস্তাবের মাধ্যমে মিয়ানমারের জনগণকেও অপমান করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংকটের জন্য সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী আরসাকে দায়ী করে তিনি বলেন, আরসা নেতা আতাউল্লাহ মিয়ানমারের কেউ নন। তাঁর জন্ম পাকিস্তানে, বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে।
মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যের সংকট ধর্মীয় নয়। এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের সংকট। ব্রিটিশরাই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে এনেছিল বলে তিনি জানান। তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদস্যদের এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইরানের প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা, বিতাড়ন সারা বিশ্বেই ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ সংকটের সমাধান হবে না। বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গার নিজ ভূখণ্ডে সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ প্রস্তাবের সহপৃষ্ঠপোষক। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়ংকর নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্র নীরব থাকতে পারে না।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এই প্রস্তাব রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে। ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা গত ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এখনো প্রতি সপ্তাহে চার হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য আসছে। তিনি মিয়ানমারকে তাদের অঙ্গীকারগুলো কাজে রূপ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার আস্থা ফিরে পাবে না। গত দেড় মাসে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সেগুলো সীমান্ত নিরাপত্তাবিষয়ক, সুনির্দিষ্টভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে নয়।
সোমালিয়ার প্রতিনিধি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। মিয়ানমারের সামরিক অভিযান, নির্যাতন, যৌন সহিংসতায় সোমালিয়া অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের চোখের সামনেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গা হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। ’
মিসরের প্রতিনিধি বলেন, তাঁরা সাধারণত কোনো একক দেশের ব্যাপারে প্রস্তাবকে সমর্থন করেন না। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

চীনের প্রতিনিধি বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। মিয়ানমার সরকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত পরিস্থিতি আরো জটিল না করা। চীন এ প্রস্তাবের বিরোধী। বেলারুশের প্রতিনিধিও প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
রাশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিয়ে জটিলতা রাশিয়া অনুধাবন করে। তবে একই সঙ্গে রাশিয়া বিশ্বাস করে, মিয়ানমারের সমালোচনা না করে বরং সহযোগিতা করা উচিত। রাশিয়া এ প্রস্তাবের বিরোধী।
এদিকে ভারত রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চাইলেও মূলত তিনটি কারণে গতকাল ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে বলে জানা গেছে। এর প্রথমটি হলো প্রস্তাবটি এনেছে ওআইসি। ভারত সাধারণত ওআইসির কোনো প্রস্তাব সমর্থন করে না। কারণ ওআইসি অতীতে বিভিন্ন সময় কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব এনেছে। দ্বিতীয় কারণটি হলো, ভারত সুনির্দিষ্ট কোনো দেশকে লক্ষ্য করে আনা প্রস্তাব সমর্থন করে না। এর একটি ব্যতিক্রমী নজির আছে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আনা একটি প্রস্তাব ভারত অতীতে সমর্থন করেছে। তৃতীয় কারণটি হলো, এই প্রস্তাবে মিয়ানমারের ভেতর বিশেষ অঞ্চল গড়ার কথা বলা হয়েছে।
ভারতীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, বিপক্ষে ভোট দেওয়ার চেয়ে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা এক অর্থে পক্ষে ভোট দেওয়ারই সমতুল্য। ভারত আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি সমর্থন করেছে। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়েই যে এ সংকটের সমাধান এটি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গত মাসে ঢাকা সফরের সময় স্পষ্ট করেছেন।

জানা গেছে, মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোই মূলত ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে বা বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষে এস্তোনিয়ার প্রতিনিধি প্রস্তাব গ্রহণকে স্বাগত জানান। তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
জাপানের প্রতিনিধি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ওপর জোর দেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তে মিয়ানমারে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, মিয়ানমারের সম্মতি ছাড়া এ ধরনের মিশন হলে তা ইতিবাচক ফল আনবে না।
প্রস্তাবে যা আছে : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে গত রাতে গৃহীত প্রস্তাবে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা, তাদের প্রত্যাবাসন এবং নাগরিকত্বসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি কাচিন ও শান রাজ্যে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। এ ছাড়া রাখাইন রাজ্যে গত আগস্ট মাস থেকে সহিংসতায় ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় এবং রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর নির্বিচার বলপ্রয়োগের ঘটনায় সাধারণ পরিষদের চরম উৎকণ্ঠা স্থান পেয়েছে ওই প্রস্তাবে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে ১৬টি সুনির্দিষ্ট আহ্বানের শুরুতেই চলমান সামরিক অভিযান বন্ধ করে রোহিঙ্গাসহ অন্য নৃগোষ্ঠীগুলোর ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার প্রসঙ্গ রয়েছে। রাখাইন রাজ্যসহ মিয়ানমারের সংঘাতময় সব এলাকায় কোনো ধরনের বৈষম্য ছাড়া সবার জন্য মানবিক সহায়তা পাওয়া নিশ্চিত করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে পরিস্থিতির আরো অবনতি এবং আরো প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে সবার কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত এবং দেশের বাইরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায়সহ সবার স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে নিজ বাসভূমিতে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও নেপিদোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। মিয়ানমারকে নৃগোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাস্তুচ্যুতি ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা মোকাবেলায় এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বানও স্থান পেয়েছে প্রস্তাবে। রাখাইন রাজ্যে ভাষাগত, ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের নিয়ে সামাজিক পুনর্মিলনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সংঘাত, সহিংসতা, বৈষম্য ও বিদ্বেষমূলক উসকানি মোকাবেলায় সব ধরনের উদ্যোগ নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে মিয়ানমারকে তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী দল, মানবাধিকার পরিষদসহ সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ, অবাধ ও নজরদারিবিহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অভিযোগের পূর্ণ, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়ে মিয়ানমারকে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী মতবাদ ও বিভাজনের ভাবনা প্রচারকারীদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি সংযত আচরণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, উগ্রবাদ মোকাবেলায় যেকোনো উদ্যোগ অবশ্যই আনুপাতিক হারে এবং আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক বাধ্যবাধকতাগুলোর প্রতি সম্মান জানানো নিশ্চিত করার মাধ্যমে হতে হবে। সহিংসতা ও উগ্রবাদ বিস্তারের কারণগুলো মোকাবেলায়ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শরণার্থীবিষয়ক আইন অনুসরণ করতে হবে।

প্রস্তাবে মিয়ানমারকে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে ‘অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের শিবিরগুলো’ (আইডিপি) বন্ধ করার ক্ষেত্রে ‘অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের’ ফিরে যাওয়া ও স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মান ও সেবা চর্চার মাধ্যমে হতে হবে। জোর করে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি ও শরণার্থীদের পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমারকে।
প্রস্তাবে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের সদস্যদের চলাফেরা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে তাদের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান জানানো নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাখাইন রাজ্যবিষয়ক পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশনের) সুপারিশগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং সব সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে ওই রাজ্যের অর্থবহ উন্নয়ন করতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবে মিয়ানমারকে তার ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পর্যালোচনাসহ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সংকটের মূল কারণগুলো সমাধান করতেও মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান খসড়া প্রস্তাবে স্থান পেয়েছে।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দুর্দশায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি এ দেশের ভূমিকার প্রশংসা, সংকট সমাধান ও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, দ্রুত ও নিরাপদে ফিরে যেতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সহযোগিতায় উৎসাহিত করার কথা স্থান পেয়েছে খসড়া প্রস্তাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়ে মিয়ানমারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবে মিয়ানমারকে বিদ্যমান উদ্বেগগুলো দূর করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমারবিষয়ক আলোচনার উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন, মানবাধিকারবিষয়ক স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার ও মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতের প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে এই ইস্যুতে সক্রিয় থাকার সিদ্ধান্তের কথাও প্রস্তাবে স্থান পেয়েছে।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/11/17/566638