১৬ নভেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৫

এবার ব্যাংকিং খাতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নৌমন্ত্রীর

বাংলাদেশ ব্যাংকে শোডাউন * স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত * ক্ষোভ ঝাড়লেন ইব্রাহিম খালেদের ওপর

পরিবহন ও পোশাক খাতের পর এখন ব্যাংকিং খাতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এর অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে সভা-সমাবেশ করছেন। বুধবার তিনি বড় ধরনের শোডাউন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকে। সিবিএর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়া উপলক্ষে তার এ শোডাউন। যদিও এ সময় ব্যাংকিং খাত নিয়ে কোনো কথা বলেননি তিনি।
এর আগে ১৫ অক্টোবর রূপালী ব্যাংকে মতবিনিময় সভা করেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। সেখানে তিনি চাকরিচ্যুত ৮ জন সিবিএ নেতাকে পুনর্বহালের দাবি জানান। চাকরি ফেরত না দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপন তথ্য ফাঁসের হুমকি দেন তিনি।
সূত্র জানায়, বুধবার বেলা দেড়টার দিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি যান গভর্নর ভবনে। গভর্নর ফজলে কবির সিঙ্গাপুর সফরে থাকায় তাকে রিসিভ করেন ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান, এস কে সুর চৌধুরী ও এসএম মনিরুজ্জামান। সেখান থেকে চলে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত সিবিএর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। প্রায় ১ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বিকাল ৩টার দিকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় শুধু ভাত খাওয়ার দাওয়াতে এসেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকে আমি নতুন নয়, মন্ত্রী হওয়ার পর তিনবার এলাম। মন্ত্রী হওয়ার আগে এসেছিলাম চারবার।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে নিয়ে গণমাধ্যম অনেক খবর ছেপেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যা বলেছেন, তা সঠিক নয়। তার আমলেও সিবিএ নেতাকর্মীদের বৈঠক ভাতা দেয়া হতো। তখন এটা বৈধ ছিল। কিন্তু এখন অবৈধ হল কী করে?’ মন্ত্রী বলেন, ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা করতে দেয়া হবে না।’
তিনি জানান, সারা দেশে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করছি। তারই অংশ হিসেবে আজকের মতবিনিময় সভা। ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শতাধিক সিবিএ নেতা।

সূত্র জানায়, গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি অভ্যন্তরীণ আদেশ জারি করে। এতে বলা হয়, ‘১৫ ও ১৬ নভেম্বর ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিবিএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশগ্রহণের জন্য সিবিএ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাদের আসা-যাওয়াসহ ১৪-১৭ নভেম্বর অফিসের কাজ থেকে অব্যাহতি দেয়া হল। এ সময় তাদের কর্তব্যকাল হিসেবে গণ্য হবে এবং বিধি মোতাবেক তারা যাতায়াত ও দৈনিক ভাতা পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত সিবিএর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তফাসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর অফিসের কর্মচারী নেতাদের এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিবিএ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি-সম্পাদক। এসব ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে।’
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর হৈচৈ পড়ে যায়। এর তীব্র সমালোচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/11/16/172027