১৫ নভেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৬

শীর্ষ আইনবিদরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ চান

বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধান অনুযায়ী এখন প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য। তবে প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আইনবিদদের মতে, প্রধান বিচারপতি পদের শূন্যতা বেশি দিন থাকা উচিত নয়। যত দ্রুত সম্ভব প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেয়া উচিত। তাদের মতে, স্বাভাবিকভাবে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এটাই প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ট্রাডিশন। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া এ ট্রাডিশন ভঙ্গ করা ঠিক হবে না। সংবিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করার ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রপতির। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে কী হবে তা সংবিধানে বলা আছে।

বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘(১) প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন।’
সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন।’
এ ছাড়া সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।’
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হওয়ার পর আমরা আশা করব জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। অবশ্য আপিল বিভাগে যেসব বিচারপতি আছেন তারা সবাই যোগ্য। রাষ্ট্রপতি যাকে নিয়োগ দেবেন আমরা তার সাথে কাজ করব। তবে আশা করব তিনি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। তা না হলে প্রধান বিচারপতি নিয়োগে ট্রাডিশন ভঙ্গ হবে। আর বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া ট্রাডিশন ভঙ্গ করা ঠিক হবে না।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করছে। আমি বলব, বিচার বিভাগে এখন নাজুক অবস্থা। এ পদ শূন্য থাকা উচিত নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শূন্য পদ পূরণ হওয়া উচিত। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তারই এই পদে নিয়োগ পাওয়া উচিত। তবে অনেক সময় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়। জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নিয়োগের ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পর নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, নরমালি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। এ নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। তিনি আরো বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি তালিকা দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর মতামতের পর রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। তবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রপতির। সংবিধানে তাই বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্টার ইকতেদার আহমেদ বলেন, আজ মঙ্গলবার থেকে প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য। এতদিন প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান বিচারপতির বিদেশ যাওয়ার কারণে বা অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করায় এ পদ শূন্য হয়েছে এবং প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে সংবিধানে কোনো নির্দেশনা নেই।

৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হলে বিচারকেরা অবসরে যাবেন। রেওয়াজ অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতিরাই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। সাধারণত জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিই প্রধান বিচারপতি হন। তবে বিভিন্ন সময়ে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ারও ঘটনা রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন ৯ জন। এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকি আটজনের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ৭ জুলাই এবং বিচারপতি মো: নিজামুল হক ১৪ মার্চ অবসরে যান।
গত ১১ নভেম্বর পদত্যাগ করেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আর এ পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন বলে গতকাল রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জানিয়েছেন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার মেয়াদ ছিল।
এখন আপিল বিভাগে রয়েছেন পাঁচজন বিচারপতি। এদের মধ্যে বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার রয়েছেন।
এদের মধ্যে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ২০২২ সাল, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালে এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/268520