ইরানের কেরমানশাহ প্রদেশে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এক উদ্ধারকর্মী
১৪ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২১

ইরান-ইরাক সীমান্তে ভূমিকম্প নিহত চার শতাধিক

ইরাক-ইরানের পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ভূমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে প্রায় ৪০৭ জনের মৃত্যু ও কমপক্ষে সাত হাজার লোক আহত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। সোমবার দেশটির কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। এএফপি, বিবিসি ও পার্স টুডে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ইরাকের কুর্দিস্তানের হালাবজার ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ সময় অনেক মানুষের বাড়িতে থাকার সম্ভাবনা থাকে। ইরানের জরুরি সার্ভিসের প্রধান পির হোসাইন কলিভান্ড জানান, ভূমিধসের কারণে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে উদ্ধার দল পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
সোমবার সকালে ইরান জানায়, প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে প্রাথমিকভাবে দুই শতাধিক লোকের প্রাণহানি হয়েছে। তবে যতই সময় গড়াতে থাকে, ততই মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪০৭ বলে জানানো হয়।
ভূমিকম্পের মূলকেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৩.৯ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পটি মূল আঘাত হেনেছে ইরাকের আধা স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলে। ওই অঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত ইরানের কুর্দিস্তান ও কেরমানশাহ প্রদেশও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, এ ভূমিকম্পে কেরমানশাহ প্রদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ওই প্রদেশে ১২৯ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে সারপোলে জাহহাব শহরে ৬৮ জন, কাসরে শিরিন শহরে ৩৮ জন ও কেরমানশাহ শহরে ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে।

এ দিকে ইরাকি কর্মকর্তারা জানান, দেশটির সুলাইমানিয়া প্রদেশে অন্তত ৩০ জন নিহত ও কয়েক শ’ মানুষ আহত হয়েছে। এ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ইরানেই আহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ভূমিকম্পকবলিত এলাকাগুলোয় জোরেশোরে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুর রেজা রাহমানি ফাজলিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তা তুরস্ক, আর্মেনিয়া, কুয়েত, জর্দান, লেবানন, সৌদি আরব, বাহরাইন ও কাতার থেকেও অনুভূত হয়।
সীমান্তের ওপারে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে তাবরেজসহ বেশ কয়েকটি নগরী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মালাতিয়া থেকে ভান পর্যন্ত ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের সময় তুরস্কের দিয়ারবাকিরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ জানিয়েছে, কুর্দি সরকারশাসিত সুলাইমানিয়া শহর থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে হালাবজার কাছে ভূমিকম্প প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে। ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের দূরত্ব অনেক হলেও সেখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাগদাদের ভবনগুলো প্রচণ্ডভাবে কেঁপে ওঠে। অনেকে একে প্রথমে বিস্ফোরণ বলে মনে করলেও কম্পন এক মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হওয়ায় পর একে ভূমিকম্প বলে বুঝতে পারে।
ভূমিকম্পের পর কয়েক দফা আফটার শক হয়েছে এবং ইরানের কুর্দিস্তান, কেরমানশাহ, ইলাম, খুজিস্তান, হামাদান, পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, লোরেস্তান, তেহরান, কাজভিন, জানজান ও কোম প্রদেশ থেকে তা অনুভূত হয়।
ইরানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে কেরমানশাহ প্রদেশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং ইন্টারনেট সেবায় বিঘœ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম এলাকার কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে।
২০০৩ সালে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে ২৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। সেই হিসেবে এবারের ভূমিকম্প আরো বেশি শক্তিশালী।
এ দিকে ইরানের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি, ইরানে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত মাইকেল ক্লর-বার্চটোল্ড, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ সমবেদনা জানিয়েছেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/268219