১৪ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:২০

যে কারণে ইরানে এত ভূমিকম্প

বিশ্বের যে সব অঞ্চল ভূমিকম্পের সাথে পরিচিত, সেগুলোর মধ্যে ইরান অন্যতম। অতীতে এই দেশটি বেশ কয়েকটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। সাধারণভাবে বলা যায়, এটির পেছনে প্রধান কারণ অ্যারাবিয়া ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ। প্রথমটি দ্বিতীয়টিকে প্রতি বছরে দুই সেন্টিমিটার করে উত্তর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রোববার রাতের আঘাত হানা সর্বশেষ ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ইরান ও ইরাকে তিন শতাধিক লোক নিহত ও চার হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। ফল্টলাইনের পাশে অবস্থানের কারণে ইরানে প্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানে। রোববারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আরব ও ইউরেশিয়ান টেক্টোনিক প্লেটের ওপর হাবিজার কাছে। ফল্টলাইনটি পশ্চিম ইরান ও ইরাকের উত্তরপূর্বাঞ্চলের মধ্যদিয়ে প্রসারিত।

ইরানের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় অ্যারাবিয়ান প্লেটটি প্রকৃতপক্ষে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচ থেকে ঠেলা দিচ্ছে। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম এলাকায় এই বিরাট খণ্ডগুলো পরস্পরকে সরাসরি ধাক্কা দেয়। জাগ্রোস পর্বতমালা এই চাপের ফল।
আগের খবরে ভূমিকম্পকে ভগ্নরেখায় চাপের ফল বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। এর মানেটা হচ্ছে ভগ্নরেখার এক দিকের পাথরগুলোর ওপর চাপ নিচের দিকে এবং অন্য দিকের ওপরের দিকে যায়। সাধারণ এই চিত্রের সাথে তা সঠিকভাবে খাপ খায়। ভূতাত্ত্বিক সংস্থাগুলো এখন তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের সম্ভাব্য সংখ্যা নিয়ে বুলেটিন তৈরি করছে। ভূমিকম্পের আকার, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং স্থানীয় নির্মাণপদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এই ধরনের রিপোর্ট তৈরি করা হয়। এটা নিখুঁত কোনো কাজ নয়, তবে এর মাধ্যমে হতাহতদের সংখ্যা নির্ণয়ের মাধ্যমে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া যায়।

একটি বড় ইস্যু হবে দুর্বল ভবনের সংখ্যা। অঞ্চলটিতে এখনো অনেক মাটির তৈরি স্থাপনা রয়েছে। তা ছাড়া যেহেতু এটি পাহাড়ি এলাকা, তাই ভূমিধস একটি সব সময়ের উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে এ জন্য যে এতে বিভিন্ন সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়ে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নেয়া বাধাগ্রস্ত হবে। ২০১২ সালে ইরানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে তাবরিজ ও আহারের কাছে দুই দফা ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং তাতে নিহত হয় ২০০ ও আহত হয় দুই হাজারেরও বেশি। এর আগে ২০০৫ সালে কিরমান প্রদেশে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় ছয় শতাধিক লোক। তার আগে ২০০৩ সালে দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ৬.৬ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় ২৬ হাজার মানুষ। সে সময় তেহরান থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাম শহরটি ভূমিকম্পে মাটির সাথে মিশে যায়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/268182