১৪ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:১৫

চারদিকে নিষ্ঠুর উল্লাস ধ্বনির মাঝে বসবাস

মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান : এক অস্থির ও অস্বস্তিকর সময়ের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে আমাদের দিনলিপি। মনুষ্য সমাজে মানুষ তার মানবীয় বৈশিষ্ট্য হাড়িয়ে অমানবিকতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। মানবীয় সত্তার বিকাশের পরিবর্তে পাশবিকতার দানবীয় উল্লাসে সমাজের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠছে। প্রতিটি দিন, ঘন্টা, মিনিট, সেকেন্ড পার করছি এক-একটি দুঃসহ সংবাদের মধ্যদিয়ে। অন্তর কাঁপিয়ে তোলা এক-একটি সংবাদ আমাদের চিন্তার দ্যোতনায় শুধু হতাশার আঁধার ছড়িয়ে দিচ্ছে। হৃদয়ের জানালায় কোনো আশার আলো ঝলকানি দেয় না, সুপ্ত অন্তরে কল্যাণের কোনো বাণী আশা জাগায় না, হৃদয় বীনার তারে কোনো সুখপাখির আশা জাগানিয়া গান সুর তোলে না। সর্বত্র হতাশা আর গভীর অমানিশার বেদনা ভরা গানের পংক্তি শুনতে পাই। মানবীয় সমাজে মানুষের যে চরিত্রের স্ফুরণ সৃষ্টি হবার কথা ছিলো তার পরিবর্তে পশুত্বের নারকীয় উল্লাস ধ্বনি শুনতে পাই সর্বত্র। আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় শুনতে পাই হায়েনার অট্টহাসি, যে অট্টহাসিতে লুকিয়ে আছে সব কিছু ধ্বংসের এক প্রলয় ধ্বনি। দড়জায় কড়া নাড়ছে পৈশাচিক দৈত্য; যে সব কিছু খুবলে খাবার জন্য ঔদ্ধত্ব প্রকাশ করছে। ধ্বংস আর প্রলয়ের মাঝে আমাদের দিন, মাস ও বছর পেড়িয়ে যাচ্ছে। হতাশার মাঝে কোনো আশার আলোক রেখা আমাদের পথনির্দেশ করছে না। সমাজ-সংসার যেন ধ্বংসের তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এ ধ্বংস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অথচ মানবীয় সমাজে এমন হতাশা আর ধ্বংসের প্রলয়ধ্বনী শোনার কথা ছিলো না। আজ মানুষ নামক কতিপয় জীবের কর্মকান্ড বনের পশুর পাশবিকতাকেও লজ্জা দিচ্ছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা হিংস্র এ কীটেরা গোটা সমাজ সংসারকে অশান্ত করে তুলছে। আমরা যদি শুধুমাত্র একদিনের পত্রিকার পাতা ওল্টাই কী দেখতে পাই? আজ যখন এ লেখা লিখছি সে দিনের কয়েকটি সংবাদ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরছি :
এক : বরগুনায় জেলার আমতলী থানায় ড্রামের ভেতর থেকে কলেজ ছাত্রীর সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায়, আলমগীর হোসেন পলাশ নামে এক কলেজ শিক্ষকসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমতলীর হাসপাতাল সড়ক এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আমরা সংবাদ মাধ্যমে যতোটুকু জানতে পেরেছি তা হচ্ছে : ঐ ছাত্রীর সাথে উক্ত শিক্ষকের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, যা পরবর্তীতে দৈহিক সম্পর্কে রূপ নেয় এবং এ লম্পট শিক্ষককে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে তাকে হত্যা করে লাশ ড্রামের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। সমাজ এবং সভ্যতা নোংরামীর কতো নিম্মস্তরে গেলে এ কাজ সম্ভব হতে পারে? শিক্ষকের মর্যাদার কথা না হয় বাদই দিলাম। শিক্ষক নৈতিক এবং আদর্শিক শিক্ষা দেয়ার পরিবর্তে নিজেই একটি বড়ো মাপের পশুতে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের শিক্ষকের কাছে জাতি কি আশা করতে পারে? কিছুদিন পূর্বে আলোচনায় এসেছিলো ভিকারুন নিসা স্কুলের পরিমল ধর। শুধু ভিকারুন নিসার পরিমল ধরই নয় আজ শত শত পরিমল তৈরী হচ্ছে নৈতিকহীন আদর্শহীন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। বাদশাহ আলমগীরের কথা আমরা সবাই জানি। শিক্ষকের মর্যাদা উঁচুতে তুলে ধরার জন্য তিনি শিক্ষককে ভর্ৎসনা করেছিলেন, কেন শাহজাদা ওজু করার সময় শিক্ষকের পা নিজ হাতে ধুয়ে দেয়নি। বাদশাহ আলমগীর শিক্ষকের মর্যাদা উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন। আজ শত বছর পরে ভিন্ন এক আলমগীর শিক্ষা এবং শিক্ষকের পরিচয়কে নর্দমার নিকৃষ্ট কীটের চেয়েও নীচে নামিয়ে এনেছে। এটা শুধু ব্যক্তি আলমগীরের একার দোষ নয়। মহান স্রস্টা মানুষকে দুটি শক্তি দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। একটি নৈতিক শক্তি অপরটি পাশবিক শক্তি। আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষায় যখন একজন মানুষ গড়ে উঠবে তখন সে পাশবিকতাকে পরাজিত করে নৈতিকতার উম্মেষ ঘটাবে। কিন্তু যে শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিকতার উম্মেষ ঘটবে, সে শিক্ষাকে অপাঙক্তেয় করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ভালো মানুষের আশা করা আর তেঁতুল গাছের কাছে আঙ্গুর ফল চাওয়া একই কথা।

দুই : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নিজ দলের স্কুল কমিটির এক নেত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ হোসেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদসহ তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, সহযোগিতা ও মারধরের অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নেত্রীর মামা। অভিযুক্তরা হলেন- বেলকুচির চরখাষিয়া গ্রামের জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন (২৫), একই উপজেলার চরচালা গ্রামের আরমান হোসেন (২৬), একই গ্রামের আল-আমিন হোসেন ও রুবেল শেখ, কলাগাছি গ্রামের রতন শেখ ওরফে পিচ্চি রতন (২৪) এবং গাড়ামাসি গ্রমের পাপ্পু। এ ঘটনায় স্থানীয় থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাত্বিতের অভিযোগ ওঠায় মঙ্গলবার বিচারক শহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এক সময় ছাত্র নেতারা ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করতেন। ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতেন। এখন বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতারা এক আতংকের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যে রাজনীতি ও আদর্শের কাছে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী এবং নিজ দলের কর্মীরা নিরাপদ নয়, তারা জাতিকে ধ্বংস ব্যতীত আর কিছুই উপহার দিতে পারবে না।

তিন : কক্সবাজারে এক কম্বল ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা আদায়ের অভিযোগে সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ ডিবি পুলিশ। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, এক কম্বল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পর তাকে গুম ও হত্যা করার ভয় দেখিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করলে অবশেষে ১৭ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ঐ ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়া হয়। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করলে সেনা সদস্যরা তাদেরকে টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। যে পুলিশের দায়িত্ব ছিলো মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া, তারাই এখন মানুষের কাছে এক আতংকের নাম। পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ নতুন নয়। প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যরা এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হয়। কিন্তু এরপর তাদের আর কোনো বিচার হয় কিনা, তা জানার আর কোনো সুযোগ হয় না।
চার : মৎস্য মন্ত্রণালয়ের স্টীকারযুক্ত গাড়িতে ১১ লক্ষ টাকার ইয়াবাসহ দামী প্রাডো গাড়ি আটক করেছে আইনশৃংখলা বাহিনী। সরকারি দামী গাড়ি যদি মাদক চালানের কাজে ব্যবহার হয়, তবে জনগণ আস্থা রাখবে কোথায়?

আমি শুধু একদিনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে চারটি ঘটনা উল্লেখ করলাম। একদিন পূর্বের আর একটি সংবাদ পাঠকরা হয়তো ভালোভাবেই জেনেছেন। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্রের তিন ব্যাংক একাউন্টে আট কোটি ৩৬ লাখ তের হাজার টাকা পাওয়ার ঘটনায় দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এ পুলিশ কর্মকর্তাকে কয়েক দিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ হতে পুলিশের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পি পি এম পদবী দিয়ে ব্যাজ পরিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এতো বড়ো একজন দুর্নীতিবাজ কিভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মান পায় তা বিবেকবান মানুষের প্রশ্ন।

এ ধরনের ঘটনা হঠাৎ একদিনে ঘটছে ব্যাপারটি এমন নয়, বরং একটি ঘটনা ঘটার পর সেই একই ঘটনা আরো বীভৎসরূপে বার বার সংঘটিত হচ্ছে। সংবাদপত্রের পাতায় সব সংবাদ হয়তো আসেও না, যা প্রকাশিত হয় তার ছিটেফোঁটা উল্লেখ করলাম। এ থেকেই আঁচ করা যায় আমাদের সমাজ দেহে যে পচন ধরেছে তা কত ভয়াবহ! এ পচন গ্যাংগ্রিণ এবং ক্যান্সারের মতো গোটা সমাজ দেহের সব কিছু ধ্বংসের চূড়ান্ত সীমায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ধ্বংস আর তান্ডবের মহাপ্রলয়ে গোটা জাতি আজ খাবি খাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটি হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে মানুষের মূল পরিচয় কী? কেন তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? কী তার দায়িত্ব? এ জীবনের শেষ পরিণতি কী? তার এ জীবনের পরে আর কোনো জীবন আছে কি না? তাকে তার জীবনের কর্মকান্ড সম্পর্কে কোনো জবাবদিহি করতে হবে কি না? এ সকল প্রশ্নের উত্তর ব্যতীত কোনো জীবন ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হলে কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নির্ধারিত হলে তা যে শতভাগ ভুল হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষ তার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সঠিক প্রশ্নের উত্তর ব্যতীত যখন কোনো জীবন ব্যবস্থা নির্ণয় করে সে জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবন ও সমাজকে দুর্বিষহ করে তুলবে এটাই স্বাভাবিক। ঐতিহাসিকভাবে আমরা এ জনপদের মানুষেরা একটি দুর্বল রাজনৈতিক ভিত্তি ধরে অগ্রসর হচ্ছি। গত এক শতাব্দীর রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ কথা দিবালোকের স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই মজবুত বুনিয়াদের ওপর পরিচালিত হয়নি। আদর্শ ও নৈতিকতার শ্লোগান যতো বেশী উচ্চারিত হয়েছে সে আলোকে আদর্শ ও নৈতিকতাকে ধারণ করা হয়নি। আবহমানকাল থেকে এ জনপদের মানুষেরা যে আদর্শ ও বিশ্বাস হৃদয় মাঝে লালন করে সে আদর্শ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও শিক্ষার বুনিয়াদ গড়ে ওঠেনি। ব্যক্তিগতভাবে এবং কোনো সময় সামাজিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষার একটি ধারা সব সময় চলমান থাকায় এবং ধর্মীয় রাজনীতির একটি ধারা সব সময় চালু থাকায় সমাজে সব সময় কিছু ভালো মানুষের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু ভালো চরিত্রের এ মানুষেরা সমাজ ও রাষ্ট্রের নার্ভ সেন্টারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে নি। বরং তাদেরকে সব সময় সমাজের স্নায়ু কেন্দ্র হতে দূরে রাখার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান সময়টি তো আরো করুণ। চরিত্রবাণ মানুষদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হত্যার চূড়ান্ত আয়োজন রাষ্ট্রীয়ভাবেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। কোনো সমাজের এটাই যখন বাস্তব চিত্র সেখানে খূন, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, হত্যার পর লাশ গুম করা, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা এমনকি পিতা কর্তৃক নিজ কন্যাকে ধর্ষণের ঘটনা যখন পত্রিকায় আসে তখন লজ্জায় মুখ লুকায় স্বয়ং ইবলিশ। কেনো এমন হচ্ছে? এর সহজ জবাব, এ বিশ্ব চরাচরের যিনি স্রস্টা তিনি জানেন কিসে মানুষের কল্যাণ আর কিসে অকল্যাণ। তার দেয়া জীবন বিধান বাদ দিয়ে যখন ভিন্ন কোনো মত, পথ ও পন্থা আবিস্কার করা হবে তখন শুধু ধ্বংস ও প্রলয় বাড়বে বৈ কমবে না। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে যে ধর্মহীন রাজনীতি আমাদের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা মানুষকে মানুষ করার পরিবর্তে পশুতে পরিণত করছে। ধর্মহীন শিক্ষানীতি গোটা জাতির নৈতিক মূল্যবোধকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। শিক্ষার সকল স্তর থেকে যখন ধর্মকে বিদায় দেয়া হয় তখন সেখানে একদল ধর্মহীন অমানুষ ব্যতীত কোনো ভালো মানুষের কল্পনা করা অসম্ভব ব্যাপার। বহু ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একজন শিক্ষবিদের উক্তি এভাবে উচ্চারণ করেছিলেন- If you give them three ‘R’ reading, writing and arithmetic but you give not them fourth ‘R’ religion, must he will get fifth ‘R’ rascality’’ -ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের সমাজ এখন মানুষের পরিবর্তে একদল রাস্কেলই পাচ্ছে।
রাজনীতিতে ধর্মহীনতা মানে জবাবদিহীতাহীন এক অমানবিক ব্যবস্থার উম্মেষ; যার এ জীবনের কর্মকান্ডের জন্য কারো জবাবদিহীর কোনো প্রয়োজন নেই, যার কারণে সর্বত্র নীতিহীনতার সয়লাব। যারা মনে করে দুনিয়ার জীবনে যদি ফাকিবাজী করে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, ধোকাবাজীর মাধ্যমে জীবন পাড় করে দেয়া যায় তবে জীবন সফল। কারণ তার মনে অন্য কোনো জীবনে অন্য কারো কাছে জবাবদিহীর কোনো অনুভূতি যখন না থাকে তখন সে সকল কাজই বিনা দ্বিধায় করতে পারে। আর তাই আমরা সর্বত্র অনৈতিকতা অমানবিকতার উল্লাস প্রত্যক্ষ করছি।
অর্থনীতিতে কেউ যদি চিন্তা করে মানুষ এবং আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে যে কোনো পন্থায় সম্পদের মালিক বনে যেতে পারলে জীবন সফল তবে তার দ্বারা যে কোনো আর্থিক দুনীতি করা অসম্ভব ব্যাপার নয়। বর্তমান সময়ে এটিই ঘটছে। বৈধ-অবৈধ যে কোনো উপায়ে অগাধ সম্পদের মালিক হওয়ার লাগাম টেনে ধরার একমাত্র পথ হচ্ছে ¯্রস্টার কাছে জবাবদিহীর অনুভুতি। এ অনুভুতি সৃষ্টির জন্যই আল্লাহ এবং পরকালের বিশ^াস মানব মনে দৃঢ় করতে হবে।

নশ্বর এ পৃথিবীর শ্রেষ্ট সৃষ্টি মানুষ। মানবীয় গুণ বৈশিষ্টের আলোকে মানুষ তার জীবন ও সমাজ পরিচালনা করবে এমন একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নীতিমালা দিয়েই বিশ্ব চরাচরের যিনি মালিক তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মহা বিশ্বের লক্ষ কোটি গ্রহের মধ্যে সূর্য একটি নক্ষত্র। এ নক্ষত্রের একটি গ্রহ পৃথিবী। পৃথিবীতে মানুষকে পাঠানো হয়েছে নির্দিষ্ট কতগুলো দায়িত্ব এবং কাজ দিয়ে। এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা ধরে রাখবে। মানুষের যিনি স্রষ্টা, এ বিশ্ব চরাচরের যিনি স্রষ্টা তিনি এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। কিন্তু যুগে যুগে মানুষ বার বার তার নির্দেশনা ভুলে অন্য পথে নিজেদের পরিচালনা করেছে। পথহারা মানুষকে সুপথে আনার জন্য তাই তিনি সময়ে-সময়ে, যুগে -যুগে, কালের আবর্তনে দিক নির্দেষক পাঠিয়েছেন। যারা মানুষদেরকে সঠিক পথে জীবন পরিচালনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, সে আহ্বানের ভিত্তিতে নিজেরা নিজেদের জীবন পরিচালনা করে সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছেন। এ মহানমানবদের কুরআনের ভাষায় বলা হয় নবী ও রাসূল। নবী রাসূলগণ মানুষদেরকে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার অধীনে নিজেদের গঠন করে সে আলোকে নিজেদের সমাজ ও রাস্ট্রকে পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন। মানুষ যখন নবীদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে তখন দুনিয়াতে শান্তি, স্বস্তি ও স্থিতি বিরাজ করেছে। আবার যখনই মানুষেরা এ পথ থেকে দূরে সরে গিয়েছে তখনই মানুষ তার মানবীয় বৈশিষ্ট্য হারিয়ে অমানুষে পরিণত হয়েছে। মানুষ নামক আল্লাহর এ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি যখনই আল্লাহর বিধানের ব্যতিক্রম কোনো জীবন ব্যবস্থা বেছে নিয়েছে তখনই সমাজে অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি, দুরাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়ে সে সমাজ ধ্বংস ও বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। পতনোম্মূখ আমাদের এ সমাজ ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাবার পূর্বে একে রক্ষার একটিই পথ তা হচ্ছে স্রষ্টাতে আত্মসমর্পণ।
hafizurrahmanbd1978@gmail.com

 

 

http://www.dailysangram.com/post/307476