১৩ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১৬

পণ্য খালাসে সময় কমবে ॥ প্রতি বছর সাশ্রয় হবে আড়াই হাজার কোটি টাকা

পণ্য আমদানি রফতানিতে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচাতে আগামী বছর থেকে দেশের ছয়টি বন্দর ও ৩২ টি শুল্ক স্টেশনে টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস) পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। ইতোমধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক কাজটিও শেষ হয়েছে। আগামী বছরে আরো বৃহৎ পরিসরে এর সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। আর এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন। ব্যবসায়ী ও এনবিআর মনে করছে, পণ্য খালাস ও ছাড়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয় সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে অন্তত ২৩ শতাংশ সময় বাঁচানোর পাশাপাশি বছরে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার বা প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের।

এনবিআর সূত্র জানায়, দেশের শুল্কস্টেশনগুলোয় পণ্য আমদানি-রফতানিতে বাড়তি সময়ের কারণে ব্যয় বাড়ছে ব্যবসায়ীদের। দ্রুত চালান নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নিরূপণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সীমিত পরিসরে টাইম রিলিজ স্টাডি (টিআরএস) শীর্ষক একটি সমীক্ষা চালানো হয়। তিনটি শুল্কস্টেশনে পরিচালিত এ সমীক্ষা তখন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি আমদানি-রফতানিতে সময় ও ব্যয় কমিয়ে আনতে নতুন করে টিআরএস পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এ সমীক্ষা চালানো হবে আরো বড় পরিসরে। এ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দ্রুত চালান নিষ্পত্তিতে দেশের ছয়টি বন্দর ও ৩২টি শুল্কস্টেশনে একযোগে কাজ শুরু করবে এনবিআর। এতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন।

সূত্র আরো জানায়, আমদানিকৃত পণ্য ছাড়করণ ও রফতানি পণ্য জাহাজীকরণ প্রক্রিয়ার সময় কমিয়ে আনতে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। সে সময় চট্টগ্রাম কাস্টমস, কমলাপুর আইসিডি ও বেনাপোল কাস্টম হাউজে টিআরএস পরিচালনা করা হয়। এরপর সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উল্লেখিত তিনটি কাস্টম হাউজে প্রক্রিয়াগত সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর আর কোনো সমীক্ষা হয়নি। নতুন করে নেয়া উদ্যোগের আওতায় আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ তিন মাসের সমীক্ষা শেষে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবে ২৫ সদস্যের একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি। এনবিআরের সদস্য খোন্দকার আমিনুর রহমান এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে দেশের সব শুল্কস্টেশনের বাছাইকৃত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের প্রথম সচিব (আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) মোহাম্মদ এখতেশামুল হক বলেন, দেশের সব শুল্কস্টেশনে টিআরএসের আওতায় সমীক্ষা করে সার্বিক অবস্থা নিরূপণ করা হবে। সমীক্ষায় বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামার পর খালাসের ক্ষেত্রে কোথায় কী পরিমাণ সময় লাগছে, তা নির্ধারণ করা হবে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে রফতানি পণ্যের চালানের ক্ষেত্রেও। সময় ও ব্যয় কমিয়ে আনার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথায় কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে এবং তা কীভাবে সমাধান করা হবে, তাও সমীক্ষার প্রতিবেদনে উঠে আসবে। এ লক্ষ্যে শুল্ক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের টিআরএস প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দরে নামার পর তা ছাড়করণে সময় ব্যয় হতো গড়ে ১১ দিন ৯ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। অন্যদিকে রফতানি পণ্য বন্দরে প্রবেশের পর তা জাহাজীকরণে সময় ব্যয় হতো চারদিন ২২ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্য ছাড়করণে সময় লাগত গড়ে পাঁচদিন ১৮ ঘণ্টা ২৪ মিনিট। রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে সময় লাগত চারদিন ৫ ঘণ্টা ২৬ মিনিট। ওই সময় টিআরএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে অন্তত ২৩ শতাংশ সময় বাঁচানোর পাশাপাশি বছরে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার অর্থ সাশ্রয় হবে ব্যবসায়ীদের। প্রতিবেদনে দ্রুত পণ্য ছাড়করণ ও জাহাজীকরণের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কাজ করার তাগিদ দেয়া হয়। একই সঙ্গে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে চালান ছাড়করণে সংশ্লিষ্ট নথির জন্য বিএসটিআই, নৌবাহিনী, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, পরমাণু শক্তি কমিশনসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাদের একই জায়গায় পাওয়া গেলে আরো বেশি সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে বলে টিআরএস প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

 

http://www.dailysangram.com/post/307413