১৩ নভেম্বর ২০১৭, সোমবার, ১০:১২

এই সমঝোতা করবে কে?

দেখা অদেখা

সালাহউদ্দিন বাবর
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সংলাপের পর একটি বিষয় এখন সবার বিবেচনায় এসেছে, আগামী নির্বাচনের আগে যে ক’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে সে ব্যবধান ঘুচিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথকে মসৃণ করার জন্য যে সমঝোতার প্রয়োজন, এখন সে সমঝোতার দায়িত্ব পালন কে করবে। এদিকে ইসি এর মধ্যেই বলেছে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিরাজিত বিরোধপূর্ণ ইস্যুতে মীমাংসার কোনো উদ্যোগ তারা নেবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দুই পক্ষের বিরাজিত মতপার্থক্য দূর করার বিষয়টির সুরাহা হবে কিভাবে। স্মরণ করা যেতে পারে, এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাথে বিরোধের নিষ্পত্তি করতে কমনওয়েলথ উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ সফল হয়নি। এই অভিজ্ঞতা সামনে রাখলে বলা যায়, বিষয়টি খুব জটিল এবং কঠিন। কিন্তু সেই সাথে এটাও সত্য যে, এই প্রশ্নগুলোর নিষ্পত্তি না হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে। সংলাপ সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার পর এখন যে সমঝোতার প্রশ্নটি এসেছে, তা সমাধান কিভাবে হবে। সে সম্পর্কে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরাও চিন্তিত।
প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরের মধ্যে যে ক’টি ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে; তার মধ্যে সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা, নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে সেনা মোতায়েন করা এবং ইভিএম তথা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ করার বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন উল্লিখিত চারটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং ভালোমানের নির্বাচনের স্বার্থে এটা কোনো অযৌক্তিক দাবি নয়। দলীয় সরকারের অধীনে আমাদের দেশে যে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হয় না এবং সে ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনও হতে পারে না তা প্রমাণিত সত্য। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন। সে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক তো হয়ইনি, সেটা ছিল একদলীয় এবং প্রহসনমূলক নির্বাচন। সে সময় নির্বাচন ব্যতিরেকেই একটি ‘সিভিল গভর্নমেন্ট’ ক্ষমতায় বসে এবং তার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। অথচ এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, সেসব নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। নির্বাচন অশংগ্রহণমূলক ও ভোটারেরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন। এই পদ্ধতি সবাই মেনে নিয়েছিলেন। নির্বাচন নিয়ে অতীতের যে মন্দ অভিজ্ঞতা ছিল তার অবসান হয়। পরবর্তীকালে আদালত এই ব্যবস্থা রহিত করে দেন এবং তাতে হতাশার সৃষ্টি হয়। এখন আবার এই ইস্যুটি সামনে এসেছে। দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি এই বিষয় নির্বাচন কমিশনের কাছে তোলাসহ সাধারণভাবে তারা এ দাবিতে ময়দানে বক্তব্য রাখছে। অপর বড় দল আওয়ামী লীগ এই দাবির পক্ষে নেই।

এ নিয়ে দুই বড় দলের মতপার্থক্য থাকায় আগামী নির্বাচন সহায়ক সরকারের প্রশ্নটি এখন সুরাহা হওয়া অত্যন্ত কঠিন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, নির্বাচন তাদের অধীনেই হতে হবে, অন্য কোনো পদ্ধতিতে নয়। এ প্রশ্নে তারা সংবিধানের বাইরে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং প্রভাবমুক্ত কাজটি ইসির এখতিয়ারে। এ ক্ষেত্রে ইসিকেই একটি বিশ্বাসযোগ্য অবস্থানে থাকতে হবে। বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক একটি জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে যে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছে তার মধ্যে যৌক্তিক এবং বাস্তব দাবি দাওয়াগুলোই ইসিকে নির্দিষ্ট করতে হবে। পাশাপাশি এসব যৌক্তিক এবং বাস্তব দাবি-দাওয়া যাতে পূরণ করা হয় তার জন্য সরকারকে বলতে হবে। এসব উদ্যোগ নিলেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি আস্থার জায়গা সৃষ্টি হবে। তা না করে ইসি আগেই যদি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ক্ষীণ হয়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল চায় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এটি খুবই জরুরি। তা না হলে মানুষ মনে করবে সরকারি দল অযৌক্তিক সুবিধা নিতে সংসদ রেখেই নির্বাচন করছে।
বিরোধীদলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা। কিন্তু সংসদ বজায় থাকলে এটা হবে না। সংসদ সদস্যরা প্রশাসনকে প্রভাবিত করবেন ও বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন। বিভিন্ন সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন হয়ে থাকে। সেভাবে আমাদের এখানেও হতে পারে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সহায়ক সরকার এবং সংসদ ভেঙে দেয়ার বিষয়গুলোও খুব সহজভাবেই সমাধান পেতে পারেন। তারা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এসব প্রশ্নে সুরাহা চেয়ে পরামর্শ চাইতে পারে। আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসবে তার আলোকেই ইসি পদক্ষেপ নেবে।

সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নে কারো কোনো দ্বিমত নেই, অন্তত প্রকাশ্যে সবাই ভালো নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছে। আর দাবি পূরণ হলে বিরোধীদলসহ সবাই খুশি। আর ভালো নির্বাচনের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা। যার অভাব আমাদের এখানে রয়েছে। প্রভাবশালী মহল নির্বাচন তাদের মতো করে করার জন্য মাস্তান, অস্ত্র ও অর্থ ব্যয় করে নির্বাচনী পরিবেশকে ভন্ডুল করে দেয়। নির্বাচনকেন্দ্রে এমন বিরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় যে, সাধারণ ভোটারেরা ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং ভোট কেন্দ্রে যান না। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা জাল ভোট দিয়ে বাক্স ভর্তি করে দিয়ে থাকে। এমন ভোটে জনগণের সত্যিকার মত প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তাদের পছন্দের প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেন না। এসব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ দল নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে অতীতে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হতে পেরেছে। তাই ইসির উচিত সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নেয়া। এ জন্য ইসিকে কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না, সে নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সেনা মোতায়েন নিশ্চিত করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনীয় বিধান করার উদ্যোগ নিতে পারে।
আওয়ামী লীগ ইসির সাথে সংলাপে বলেছে ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করতে। বিএনপিসহ অন্যান্য দল অবশ্য এই মতকে গ্রাহ্য করে না। তাদের মত, আগে যে পদ্ধতিতে ভোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেভাবেই ভোট হতে হবে। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসক্ষমতাÑ এসব যৌক্তিক কারণেই এই পদ্ধতি চালু করা ঠিক হবে না বলে তারা মনে করেন।

যেসব উন্নত দেশের মানুষের প্রযুক্তিগত জ্ঞান উত্তম সেসব দেশের কোনো কোনোটিতে ইভিএম পদ্ধতি চালু করেও পরে তা নানা জটিলতার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক একটি স্থানে ইবিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তা পরিত্যক্ত হয়। এখন তাই একটি স্পর্শকাতর নির্বাচনের আগে নতুন কোনো পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো অর্থ হয় না। সেই সাথে বিষয়টি নির্বাচনের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণও নয় যে, এটা নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এসব বিবেচনায় ইসির উচিত এসব বিষয়ে অকারণে জটিলতা সৃষ্টি না করা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এখন নির্বাচনের আগে দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ মিটিয়ে খোলা মন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া দরকার। আর সেজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট দলগুলোর মধ্যে খোলামেলা একটি সংলাপ করা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কিছুকাল আগে বলেছিলেন, একটি ভালো নির্বাচন করার লক্ষ্যে তারা আলোচনা করবেন। এখন এটা খুবই জরুরি। দেশের মানুষ এখন একটি ত্রুটিহীন নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

সবাই সম্মত হলে এমন সংলাপের আয়োজন রাষ্ট্রপতি বা জাতীয় সংসদের স্পিকার করতে পারেন। সে সংলাপে দুই প্রধান জোটসহ আরো কিছু দলকে নিতে হতে পারে। স্মরণ করা যেতে পারে ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতন হলে, সব দল একমত হয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি অস্থায়ী সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের পর সবাই মিলে সংবিধানে দুটি সংশোধনীও সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছিল। এসব ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। এখন আবারো সব দল মিলে এমন একটা মাইলফলক তৈরি করতে পারে, যাতে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট কেটে যায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়। ভালোমানের নির্বাচনে যারা বিজয়ী হবে তারা স্বস্তি ও তৃপ্তি বোধ করবে। সরকার গঠন এবং পরিচালনার জন্য কোনো ধরনের বিরোধিতা বা সমালোচনা হবে না। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে সূক্ষ্ম বা ব্যাপক কারচুপির কথা আসবে না। এমন নির্বাচনে যারা পরাজিত হবে তারাও জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধাবনত হবে, কোনো অভিযোগ তুলবে না। তাতে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সব দলের লক্ষ্য যদি হয় জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া তবে যত সুষ্ঠুভাবে তা জনগণ দিতে পারে তার আয়োজন করাই সব পক্ষের কর্তব্য। এ কাজগুলো সম্পন্ন হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এগিয়ে যাবে। এই সুহূর্তে যা দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের উন্নয়ন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের প্রধান স্লোগান, কিন্তু গণতন্ত্র নয়। তারা শুধু বলছেন উন্নয়ন আর উন্নয়নের ধারাবাহিকতার জন্য চান পুনরায় বিজয়ী হতে। তারা এ স্লোগান দিতে পারেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে উন্নয়ন তখনই টেকসই হবে যখন এর পাশাপাশি থাকবে গণতন্ত্র। জনগণ কী উন্নয়ন চায়, কিভাবে চায় তা জানা প্রয়োজন। আর সে জন্যই দরকার গণতন্ত্রের। উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অস্বচ্ছতা। এসব অন্তরায় দূর করতে হলে প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা। গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকবে না। এখন এমনই পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। গণতন্ত্র নেই বলে জবাবদিহি করার প্রতিষ্ঠানটি অকার্যকর হয়ে আছে। এখন সেই আইনসভায় সবাই সরকারি দলের প্রতিনিধিত্ব করে। নির্বাহী বিভাগের অব্যবস্থা অনিয়ম ত্রুটিবিচ্যুতির সমালোচনা করা তাদের পক্ষে তো সম্ভবই নয়। সেই সাথে সরকারের অক্ষমতা নিয়ে কোনো কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না। এই জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র-সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। অপকর্ম দুরাচারে সমাজ কলুষিত হয়ে পড়ছে। অনিয়ম, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তরা দুরন্ত হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতি যদি বাধাহীনভাবে চলতে থাকে তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির মারাত্মক ক্রমাবনতি ঘটবে। সে ক্ষেত্রে প্রকৃত উন্নয়ন মরীচিকার মতো মিলিয়ে যাবে।

২০১৮ সমাগত প্রায়। এখন থেকে নির্বাচন কমিশনের ব্যস্ততার শেষ থাকবে না। অতি নিকটে কয়েকটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এসব নির্বাচন ইসির জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা। ভবিষ্যতে ইসি কত সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারবে তার একটি বাস্তব দৃশ্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের মাধ্যমে ফুটে উঠবে। একই সাথে ইসি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাকপ্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। বিশেষ করে ইসির যে ভাবমর্যাদার সমস্যা রয়েছে তা উদ্ধার করা জরুরি এবং ইসিকে একটি আস্থার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তারা করপোরেশন নির্বাচনের সময় পাবে। ইসিকে এ কথা ভালোভাবে মনে রাখতে হবে, তাদের পূর্বসূরিরা কোনো ভালো নজির তাদের জন্য রেখে যেতে পারেননি। বর্তমান ইসি সদস্যরাই এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে তার দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে সক্ষম করে তুলবেন। অতীতে গণতন্ত্রের যে প্রাণ নির্বাচন, তাকে বিগত ইসি সদস্যরা কলুষিত করে গেছে। এই হতাশা থেকে জনগণকে বের করে আনতে হবে। এই কর্ম সম্পাদনে তারা পাশে পাবেন দেশের গণতন্ত্রপ্রাণ জনগণকে।

শেষ কথা হচ্ছে ইসি নিবন্ধিত দলগুলো নিয়ে যে সংলাপ করেছে তা নিয়ে অনেক জল্পনাকল্পনা ছিল যে, সংলাপে সবাই আসবে কি না, তা সুষ্ঠুভাবে হতে পারবে কি না। এসব আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। এজন্য ইসি ধন্যবাদ পেতে পারে। এখন এক ধাপ এগিয়ে এসে ইসিকে আরো বড় এক পরীক্ষা দিতে হবে। সংলাপ শেষে এখন বেরিয়ে এসেছে সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মাঝে মৌলিক বিষয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া এবং সব দলকে সাথে নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছানো। ইসির বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ যদি বাড়ানো না হয় তবে একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই হবে তাদের প্রথম এবং শেষ। তাই বর্তমান কর্মকর্তাদের এই নির্বাচন একটা সুযোগ দিচ্ছে ইতিহাস রচনার, তাদের স্মরণীয় হয়ে থাকার। জনগণ কামনা করে তাদের সার্বিক সফলতা। সংলাপের সফলতার মধ্য দিয়ে তাদের এক ধাপ এগিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে, সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপ। তারপর চূড়ান্তপর্ব।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/267897