১২ নভেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৬:০৪

আবাসন খাত বিপর্যস্ত করের বোঝায়

রিহ্যাবের আট প্রস্তাব * ফি বেশি হওয়ায় নিবন্ধনে আগ্রহী নন ক্রেতারা

জমির আকাশচুম্বী মূল্য, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি ও নানামুখী করের বোঝায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আবাসন খাত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সব ধরনের কর হ্রাস, বাংলাদেশ ব্যাংকের রি-ফাইন্যান্সিং চালু ও আবাসন খাতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এনবিআর বলছে, আবাসন শিল্পকে ভবিষ্যতে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। শনিবার রাজধানীর পূর্বাণী হোটেলে আয়োজিত এনবিআর-রিহ্যাবের যৌথসভায় আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা এ আশঙ্কার কথা জানান। রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন আয়কর নীতির সদস্য পারভেজ ইকবাল ও ভ্যাটনীতির সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ।

রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আবাসন খাতের অবদান ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে ২৫০টিরও বেশি সংযোগ শিল্প ও ৩৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। ২০১০ সালের পর এ খাত নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে এ খাতে নানা কর আরোপ ও সরকারের সহায়তার অভাবে আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আর্থিক সরবরাহের অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, গৃহ ঋণ না থাকায় বিক্রীত ফ্ল্যাটের রি-পেমেন্ট হচ্ছে না। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের নিজস্ব বিনিয়োগ আটকে যাওয়ায় সময়মতো ফ্ল্যাট হস্তান্তরও করা যাচ্ছে না। এ কারণে মামলা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। এ অবস্থায় শিল্প রক্ষায় কর ছাড়সহ সরকারের নীতি-সহায়তা প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধে কর হ্রাস সংক্রান্ত ৮টি প্রস্তাব দিয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, প্রতিবছর ১৫-১৭ হাজার ফ্ল্যাট গ্রাহককে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু নিবন্ধন ফিসহ অন্য কর বেশি হওয়ায় ক্রেতারা নিবন্ধন করতে চান না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাট বিক্রির পর অনেক প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর করে না, এমন অভিযোগ আছে। প্রকৃতপক্ষে তারা রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়। এরপরও এ ধরনের অভিযোগ সুরাহার জন্য রিহ্যাবে মেডিয়েশন সেল করা হয়েছে। এখানে একজন সাবেক বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন। সেলে ৫৮০টি অভিযোগ পড়েছে। করসংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে সাড়ে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। এ উচ্চ রেজিস্ট্রেশন ফি’র কারণে ক্রেতারা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ ট্যাক্স সাড়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করলে রাজস্ব আয় বাড়বে। এ ছাড়া সেকেন্ডারি ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন ফি ৩ শতাংশ, আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের উৎসে কর ৫ শতাংশ ও ভ্যাট ১০ শতাংশ, কর্পোরেট কর ২০ শতাংশ, জমি মালিকদের সাইনিং মানির ওপর কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়। জমির মৌজামূল্য ও প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের মধ্যে পার্থক্যের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে- এক আবাসন ব্যবসায়ীদের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রেজিস্ট্রেশন খরচ কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, আবাসন শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা মনোযোগের দাবি রাখে। এনবিআর-রিহ্যাব একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। শিল্পে রাজস্ব সংক্রান্ত যে জটিলতা এতদিন ছিল তা আর থাকবে না। ভবিষ্যতে আবাসন শিল্পকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এ শিল্পের ৮টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সমস্যা সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা হবে। এ সময় আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট ভ্যাটের সব নির্দেশনা একীভূত করার নির্দেশ দেন তিনি।

 

https://www.jugantor.com/news/2017/11/12/170986