১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ১১:৪৬

ফের গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব যাচ্ছে বিইআরসিতে

আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এর সঙ্গে গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশে গত এপ্রিলে সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির
গণশুনানি শেষ হয়েছে সেপ্টেম্বরে। এরই মধ্যে আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার গ্রাহকভেদে গড়ে ৭৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করতে যাচ্ছে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো।

সূত্র মতে, গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির মূল্য অনেক বেশি। এতে দেশের বাজারের গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। গ্যাসের দামের সমন্বয় করতে হবে। আগামী এপ্রিলে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যুক্ত হওয়ার কথা জাতীয় গ্রিডে। আর আগে দাম বৃদ্ধির জন্য গণ-শুনানিসহ কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে। এজন্য দ্রুতই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হবে বিইআরসিতে, যাতে মার্চের মধ্যে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) মো. তৌহিদ হাসনাত খান মানবজমিনকে বলেন, আগামী বছর এপ্রিলে এলএনজি যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। যদিও এলএনজির আমদানি মূল্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেশি। এটির মূল্য নিজস্ব গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি হবে। তাই দুই ধরনের গ্যাসের মূল্য সংমিশ্রণ করে গ্রাহক পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হবে। যদি ভর্তুকি পাওয়া যায় তাহলে এক কথা, না পেলে অন্য কথা। এজন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসির কাছে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো পাঠাবে। সেক্ষেত্রে বিইআরসি যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই চূড়ান্ত হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দৈনিক সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এতে ঘনমিটারপ্রতি গ্যাসের গড় বিক্রি মূল্য পড়ছে ৬ টাকা ৬৪ পয়সা। আর আমদানিকৃত এলএনজি থেকে প্রাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ মূল্য পড়বে ঘনমিটারপ্রতি ২৫ টাকা ৪৬ পয়সা। সম্প্রতি রাজধানীর পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এক সভায় এলএনজির দাম নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতা ও খাত সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়। এতে এলএনজি ও গ্যাসের সম্ভাব্য দাম তুলে ধরা হয়। বৈঠকে বলা হয়, প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ধরা হয়েছে ৭ ডলার। এতে প্রতি ঘনমিটার এলএনজির দাম পড়বে ১৯ টাকা ৭৮ পয়সা। এর সঙ্গে ব্যাংক চার্জ ২৫ পয়সা, রিগ্যাসিফিকেশন ব্যয় পড়বে ১ টাকা ৩৮ পয়সা এবং বন্দরের চার্জ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় ৭৩ পয়সা। এতে ঘনমিটারপ্রতি গ্যাসের বিক্রয়পূর্ব মূল্য পড়বে ২২ টাকা ১৪ পয়সা। আর ভ্যাট দিতে হবে ১৫ শতাংশ বা ৩ টাকা ৩২ পয়সা। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম পড়বে ২৫ টাকা ৪৬ পয়সা। এর সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের দামের মিশ্রণ হবে, যার ভিত্তিতে গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এলএনজি আমদানির পর সম্ভাব্য গ্যাসের দাম প্রতিঘনমিটার দাঁড়াবে বিদ্যুৎ সরবরাহকৃত ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম পড়বে ৪ টাকা ৯৯ পয়সা, বর্তমানে যা ৩ টাকা ১৬ পয়সা। অর্থাৎ দাম বাড়বে প্রায় ৫৮ শতাংশ। সার উৎপাদনে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের সম্ভাব্য দাম হবে ৪ টাকা ৭৫ পয়সা, বর্তমানে যা ২ টাকা ৭১ পয়সা। এ খাতে বাড়বে ৭৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ক্যাপটিভে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ১৪ টাকা ৯৮ পয়সা, বর্তমানে যা ৯ টাকা ৬২ পয়সা। এ খাতে দাম বাড়বে ৫৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর শিল্পে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা, বর্তমানে যা ৭ টাকা ৭৬ পয়সা। অর্থাৎ শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়বে ৯২ শতাংশ। এদিকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সরবরাহকৃত দাম বাড়বে ১০৫ শতাংশের বেশি। নতুন হিসাবে এ খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ৩৫ টাকা, বর্তমানে যা ১৭ টাকা চার পয়সা। সিএনজি ফিড গ্যাসের ক্ষেত্রে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ৫১ টাকা ৭০ পয়সা, বর্তমানে যা ৩২ টাকা। এতে দাম বাড়বে ৬১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চা বাগানে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সা, বর্তমানে যা ৭ টাকা ৪২ পয়সা। এ খাতে দাম বাড়বে ৬৩ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম প্রস্তাব করা হয়েছে আবাসিকে। খাতটিতে (মিটারযুক্ত) গ্রাহকদের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ টাকা ২০ পয়সা, বর্তমানে যা ৯ টাকা ১০ পয়সা। এ হিসেবে খাতটিতে ২৩ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, গ্যাসের দাম নিয়ে নানা কথা উঠছে। ২০১৮ সালে গ্যাস আমদানি শুরু হলে গ্যাসের আন্তর্জাতিক দামে আমাদের তা কিনতে হবে। এজন্য গ্যাসের উপর ধার্য বর্তমান করাদি যৌক্তিকীকরণ করা হবে। এর ফলে, ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম যে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভর্তুকি প্রদানের অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে গ্যাসের দামও সমন্বয় করা হবে।

 

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=91413