১১ নভেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:১৩

মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার লোভে দাম লাগামহীন

রাজধানীর কাওরান বাজারে ৫ কেজি বেগুনের পাইকারী দাম ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, যা কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দাম পড়ে। কিন্তু এই বেগুনই রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। শুধু বেগুন নয় প্রায় সব ধরনের সবজিই পাইকারী দামের চেয়ে খুচরা বাজারে ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ বেশী দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে উৎপাদনকারী কৃষকরাও বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্যমূল্য থেকে। মধ্যস্বত্বভোগী অতি মুনাফাকারী ব্যবসায়ীদের কারণে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। অসহায় সাধারণ মানুষ।

ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকদের কাছ থেকে যে দামে সবজি ক্রয় করা হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করা হয় খুচরা ক্রেতাদের কাছে। কৃষক ও ভোক্তার মাঝখানে মধ্যস¦ত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণে নিত্যপণ্যের দাম কমছেই না। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের অভিযোগ তাদের যাতায়াতসহ আনুসাঙ্গিক খরচের কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। যাত্রাপথে বিভিন্ন স্থানে চাঁদা এবং বাজারগুলোতে নানা খরচ বেড়ে যাওয়ায় জিনিসপত্রের দাম কমছে না।
ভুক্তভোগীদের দাবি, অবিলম্বে সরকার বাজার মনিটরিং এবং বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার মানসিকতা দূর করতে হবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে এ মনমানসিকতা দূর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সকলের মধ্যে নাগরিক ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে টিসিবিকে আরো শক্তিশালী করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করারও দাবি ভুক্তভোগীদের।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার ও মগবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি রয়েছে। সবজি বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি প্রচুর সরবরাহ থাকার পরও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। শীত মৌসুম শুরু বলেই দাম বাড়তি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর ভোক্তাদের দাবি, সিন্ডিকেটের কারণেই কমছে না সবজির দাম। তবে মুরগির দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগীর দাম কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা কমে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ , লেয়ার মুরগি ১৭০-১৭৫, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট দেশি মুরগির দাম আগের বাড়তি দামে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা দরে।
এদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ ও খাসির গোশত ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে পেঁয়াজের দাম বাড়তি হলে কাঁচা মরিচে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৪০ টাকা কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে।
বাজারে এই দামের সঙ্গে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে। টিসিবির মূল্য তালিকায় দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৭০-৮০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগী ১২০-১৩০ টাকা এবং দেশি মুরগী ৩৫০-৩৮০ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ী রতন বলেন, নতুন মৌসুমের অল্পস্বল্প সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে এখন একটু দাম বেশি; তবে আমদানি বেড়ে গেলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন কেজি প্রতি ৮০-১০০, শিম ১২০, হাইব্রিড টমেটো ১৬০, দেশি টমেটো ১০০, শশা ৬০, চাল কুমড়া ৫০-৫৫, কচুর লতি ৬০-৬৫, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৭০, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৭০, করলা ৭০, কাকরোল ৬০, পেঁপে ৪০-৫০, কচুরমুখী ৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
প্রতিটি ফুলকপি ৪০, বাঁধাকপি ৩৫ এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০, পালং শাক আঁটি প্রতি ২০, লালশাক ২০, পুঁইশাক ৩০ এবং লাউশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কিছুটা বাড়লেও আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে অধিকাংশ মুদি পণ্যের দাম। কেজি প্রতি চীনা আদা ১৪০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১৫০, ছোলা ৯০, দেশি মুগ ডাল ১৩০, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০, মাষকলাই ১৩৫, দেশি মসুর ডাল ১২৫, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মসলার মধ্যে কেজি প্রতি দারুচিনি ৩৬০, জিরা ৪৫০, শুকনা মরিচ ২০০, লবঙ্গ ১৫০০, এলাচ ১৬০০ এবং হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কেজি প্রতি দেশি রসুন ১১০, ভারতীয় রসুন ৯০, আলু কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকা দরে।
ভোজ্য তেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্র্যান্ড ভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০, প্রতি লিটার বোতল ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কমেনি চালের দামও। মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৪ টাকা, পারিজা চাল ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৫৮-৬০ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৬-৫৮ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, দেশি বিআর-২৮ ৫২ টাকা, নাজিরশাইল (কাটারি) ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬৫ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০, কাতলা ৩৫০-৪০০, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০, সিলভার কার্প ২০০-২৫০, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০, পাঙ্গাস ১৫০-২৫০, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০-৮০০, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ মাঝারি আকারের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা দরে।

http://www.dailysangram.com/post/307176